>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩

পবিত্র হারামাইন শরীফে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী তথা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস।

 পবিত্র হারামাইন শরীফে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী তথা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস।

বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ নাকি এই সেদিন থেকে প্রচলিত হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! হারামাইন শরীফে এ দিবস পালন হতো না! নাউযুবিল্লাহ! অথচ ইতিহাস সাক্ষী- সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শুরু থেকেই হারামাইন শরীফে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন হতো। নিম্নে কয়েকজন প্রখ্যাত ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের লিখনীতে যার প্রমাণ দেয়া হলো।
(১) হযরত আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন- “মদীনাবাসী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ খুবই আগ্রহ, উৎসাহ ও আনন্দের সহিত উদযাপন করতেন।” (মাওরিদ আর রাওয়ী ফি মাওলিদ আন নাবী, পৃ-২৯)
(২) হযরত ইবনে যাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “হারামাইন শরীফাইন (মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ), মিসর, ইয়েমেন ও সিরিয়ার এবং জাজিরাতুল আরব এর পূর্ব ও পশ্চিম জনপদের অধিবাসীরা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উদযাপন করতেন। উনারা পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার চাঁদ দেখে আনন্দিত হতেন, গোসল করতেন এবং উনারা সুন্দর পোশাক পরিধান করতেন, সুগন্ধী মাখতেন, দান করতেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতেন। পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে করে যে নিরাপত্তা ও স্বস্তি, জীবিকার মানোন্নয়ন, শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও উনাদের সাফল্য লাভ হয়েছে তা প্রকাশ করতেন।” (তাফসীরে রুহুল বয়ান, ভলিউম ৯, পৃষ্ঠা ৫৬, আদ দুররুল মুনাজ্জাম পৃ. ১০০/১০১, আল মিলাদুন্নবি, পৃ ৫৮ )
(৩) “ফয়ূযুল হারামাইন” কিতাবে হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, “আমি এর পূর্বে মক্কা মুআযযামায় পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার বরকতময় ঘরে উপস্থিত ছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর একত্রে পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমনের সময় সংঘটিত অলৌকিক (কুদরতী) ঘটনাবলী ও উনার নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম এবং এটাও বলতে পারি না যে, এগুলো কেবলমাত্র অন্তর চক্ষুতে দেখেছিলাম। এ দুটোর মধ্যে প্রকৃত ব্যাপার কি ছিল, তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভালো জানেন। অতঃপর আমি গভীরভাবে চিন্তা করলাম এবং উপলব্ধি করতে পারলাম যে, এই নূর বা জ্যোতি ঐ সব ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, যারা এ ধরনের মজলিস ও উল্লেখযোগ্য স্থানসমূহে (জ্যোতি বিকিরণের জন্য) নিয়োজিত থাকেন। আমার অভিমত হলো সেখানে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নূর ও রহমতের নূরের সংমিশ্রণ ঘটেছে”। (ফয়ূযুল হারামাইন: আরবী-উর্দু, পৃষ্ঠা নং- ৮০-৮১)
(৪) পবিত্র মক্কা শরীফ হতে প্রকাশিত ‘আল ক্বিবলা’ পত্রিকা মতে, “সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পবিত্র মক্কা শরীফ এবং এর অধিবাসীরা পালন করতেন; যার নাম ছিল “ইয়াওম আল ঈদ মাওলিদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” মুসলমান উনারা উত্তম খাবার রান্না করতেন। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আমীর এবং হিজাজের কমান্ডার উনার সেনাদের সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করতেন এবং পবিত্র ক্বাছীদা শরীফসমূহ পাঠ করতেন। পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার স্থান পর্যন্ত আলোকসজ্জা করা হতো এবং দোকান-পাট সুসজ্জিত করা হতো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শান মুবারক প্রকাশ স্থানে সকলে মিলে পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। ১১ রবীউল আউওয়াল শরীফ দিবাগত রাতে বাদ-ইশা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের লক্ষ্যে একত্র হতেন। ১১ রবীউল আউওয়াল শরীফ দিবাগত বাদ-মাগরীব থেকে ১২ রবীউল আউওয়াল উনার আছর নামায পর্যন্ত প্রতি নামাযের পরে ২১বার তোপধ্বনি দেয়া হতো।” (রেফারেন্স- মাসিক তরিকত, লাহোর- জানুয়ারী ১৯১৭, পৃ ২/৩)

(৫) শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজর আল হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন- “আমাদের সময়ে যখন সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের জন্য জড়ো হতেন, উনারা ভালো নেক কাজের মধ্যে মশগুল থাকতেন। যেমন- দান, ছদকা করা হতো, যিকির হতো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করা হতো”। (ফতওয়ায়ে আল হাদিছিয়াহ পৃ ২০২) সুবহানাল্লাহ