>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩

এক নাস্তিককে যেভাবে শায়েস্তা করেছিলেন ইমামে আ'যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি

 এক নাস্তিককে যেভাবে শায়েস্তা করেছিলেন ইমামে আ'যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি

ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি দূত মারাফত খবর পাঠালেন যে তিনি আগামীকাল যোহরের সময় আসবেন। পরদিন যোহরের নামাযের সময় হারুনুর রশীদ, তার সভাসদ ও সেই নাস্তিক অপেক্ষা করতে লাগলো।
কিন্তু যোহরের সময় তো দুরের কথা আছর শেষ হয়ে গেল তিনি মাগরীবের নামাযের সময় আসলেন। নাস্তিকটা উনার কাছে এত দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি দজলা নদীর ওপারে বাস করি। আমি শাসকের অনুরোধ পেয়ে নদীতে এসে দেখি কোন নৌকা নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোন নৌকা পেলাম না। সহসা আমি দেখলাম একটি গাছ আপনা-আপনি উপড়ে পড়লো এবং সেটি চেরাই হয়ে নিজ থেকেই তক্তায় পরিনণ হল। তারপর এটি নিজে নিজে একটি নৌকায় পরিনণ হল। অত:পর আমি এটায় চড়ে বসলাম। নৌকাটি নিজে নিজে চলতে চলতে আমাকে এপারে পৌছিয়ে দিল।
নাস্তিকটি একথা শুনে হেসে ফেলল। তারপর বলল, হে হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি! এমন ঘটনা আমি কখনোই বিশ্বাস করবো না। একটা গাছ আপনা থেকে নৌকায় পরিণত হবে, এটা কি করে সম্ভব?
তখন ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ওহে নাস্তিক! একটা গাছ যদি আপনা থেকে নৌকায় পরিণত না হতে পারে এবং নদী পরাপার না হতে পারে, তাহলে কিভাবে এই বিশাল নভোমন্ডল-ভূমন্ডল আকাশ চন্দ্র আপনা আপনি তৈরী হতে এবং চালু থাকতে পারে?
নাস্তিকটা উনার কথা শুনে লা-জওয়াব হয়ে কাচুমাচু করে সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে গেলো। হারুনুর রশীদ ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ জবাব শুনে উনার শুকরিয়া আদায় করলো এবং উনাকে সসম্মানে উনার বাড়িতে পৌছিয়ে দিলো।
মূলত নাস্তিকদের কোন যুক্তি থাকে না। অবমাননা এবং কটুকথাই এদের নাস্তিক্যবাদ টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার। যা ইমামে আযম আবু হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রমাণ করে দিলেন।


মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩

ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করলে দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি ও বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

 আল্লামা সাইয়্যিদ আবু বকর মক্কী আদ দিমইয়াতী আশ শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত “ইয়ানাতুত ত্বলেবীন” কিতাবে বর্ণনা করেন, শাসক আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে শামদেশের এক সুদর্শন যুবক সে ঘোড়ায় চড়ে খেলতেছিল। একদিন হঠাৎ সে তার ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যায়। অতঃপর ঘোড়ার পিঠে উঠলে ঘোড়াটি তাকে নিয়ে শাম দেশের পথে চলতে শুরু করে। ঘোড়াটিকে সে থামাতে সক্ষম হচ্ছিল না। অতঃপর ঘোড়াটি শাসকের দরজায় গিয়ে উপনীত হলো। তখন শাসকের এক ছেলে ঘোড়ার সামনে চলে আসলো এবং শাসকের ছেলেটিও ঘোড়াটিকে ফিরিয়ে রাখতে সক্ষম হলো না বরং সে ঘোড়ার দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং নিহত হয়।

এই সংবাদ শাসকের নিকট পৌঁছলে শাসক উক্ত যুবককে তার দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদেশ করলো। শাসকের আদেশ যখন তার প্রতি ঘোষণা করা হলো, সেটা কঠিন বিপদ মনে করে সেই যুবক বললো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে এই কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করেন তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে আমি বড় করে ওলীমা বা খাবারের মজলিসের ব্যবস্থা করবো এবং তা (প্রতিবছর) জারী রাখবো।
অতঃপর সেই যুবক শাসকের সমীপে উপস্থিত হলো এবং তার দিকে দৃষ্টি দিল। তখন হত্যা করার গোস্বা সত্ত্বেও শাসক হেসে দিল। অতঃপর বললো, হে ব্যক্তি! তুমি কি জাদু করো? সে বললো, হে আমীরুল মু’মিনীন! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি জাদু করি না। অতঃপর শাসক বললো, আমি তোমার অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম। অতএব, তুমি যা বলার তা আমাকে বলতে পারো।
তখন সেই যুবক বললো, আমি নিয়ত করেছিলাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে এই কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করেন তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে ওলীমা মাহফিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং প্রতিবছর তা জারী রাখবো।
অতঃপর শাসক পুনরায় বললো, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাকে সুমহান নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা হাদিয়া করলাম এবং আমার ছেলের হত্যার অপরাধ থেকেও মুক্তি দান করলাম।
যুবক শাসকের দরবার থেকে মৃত্যুদ-ের শাস্তি থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বের হলো এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বরকতে এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা গ্রহণ করলো। এ বিষয়টি যখন প্রকাশিত হলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের জন্য সেই যুবকের ভাইরা মনযোগী ও আগ্রহী হলো।” (ইয়ানাতুত ত্বালিবীন: ৩য় খন্ড পৃষ্ঠা নং ৬১৩)
অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার নিয়ত করার কারণে মৃত্যুদ- হতে মুক্তি লাভ হয়। সুবহানাল্লাহ! দেখা যাচ্ছে, পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনকারীরা দুনিয়াতেই সুসংবাদ লাভ করছেন, অপরিসীম ফায়দা লাভ করছেন। সুবহানাল্লাহ!


সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩

সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে আদব শিক্ষা দেওয়া ফরয

 সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে  আদব শিক্ষা দেওয়া ফরয

  • নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক ।
  • মহাসম্মানিত হযরত  আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক ।
  • পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ তিলাওয়াত ।

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যারা অনুসরণ করবেন উনারাও হাছিল করবেন সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি মুবারক

 

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যারা অনুসরণ করবেন উনারাও হাছিল করবেন সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি মুবারক

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالسَّابِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَ الْأنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِإحْسَانٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَ اَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِىْ تَحْتَهَا الْأنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا اَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ .

অর্থ : হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, যাঁরা পূর্ববর্তীদের মধ্যে অগ্রগণ্য, উনারা এবং উনাদেরকে যাঁরা (ক্বিয়ামত পর্যন্ত) উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, উনাদের উপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার উপর সন্তুষ্ট। উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ বেহেশত নির্ধারিত রেখেছেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে, উনারা সর্বদা সে বেহেশতে অবস্থান করবেন। এটা উনাদের বিরাট সফলতা। (সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)

শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩

পাকিস্তানের লাহোরে ঐতিহাসিক বাদশাহী মসজিদ

 

পাকিস্তানের লাহোরে ঐতিহাসিক বাদশাহী মসজিদ


১৯৪৭ খৃ: এর ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৬০ খৃ: পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার বাদশাহী মসজিদের সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনে পাঁচ মিলিয়ন রূপী ব্যয় করে।

মসজিদের মূল আকর্ষন:

পাকিস্তান স্বাধীনতা পাওয়ার সময় মসজিদ সংলগ্ন মূল প্রবেশ দ্বারের বাইরে একটি ছোট মিউজিয়াম তৈরী করা হয়, যাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুল ফাতাহ বা পবিত্র চুল মুবারক, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজাহু আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র নূরুল ফাতাহ বা পবিত্র চুল মুবারক ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুর রবি’য়াহ যাহারা আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত দুর্লভ কিছু মহামূল্যবান বস্তু সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসলমান এই মহামূল্যবান স্মৃতিচিহ্ন দেখতে আসেন। ২০০৮ খৃ: ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুরের কাছে মূল মুঘল উৎস থেকে আমদানি করা লাল বালিপাথর ব্যবহার করে মসজিদের বড় উঠোনে লাল বালিপাথরের টাইলসের প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়।

মসজিদে ৩০ রাষ্ট্রপ্রধানদের নামাজ আদায়:

১৯৭৪ খৃ ২২ ফেব্রুয়ারী লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার ২য় সামিটে অংশগ্রহণকারী ত্রিশ জন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান একত্রে এই মসজিদে পবিত্র জুমুয়াহ্র নামাজ আদায় করেন।

তৎকালীন খতীব আব্দুল কাদীর আহমদ এর ইমামতিতে যে সকল রাষ্ট্রপ্রধান সেদিন নামায আদায় করেন তাঁদের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো, সৌদির শাসক ফায়সাল বিন আব্দুল আজিজ। লিবিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান মুয়াম্মার আল গাদ্দাফী, ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত, মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান, ইয়েমেনের রাষ্ট্রপ্রধান আলী আব্দুল্লাহ, কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল সালিম আল সাবাহ সহ প্রায় সকল মুসলিম দেশপ্রধান। বাদশাহী মসজিদের অপরূপ নির্মাণশৈলী দেখে তাঁরা সকলেই মুগ্ধ হন। পরিদর্শন বইতে তাঁরা যে মন্তব্য লেখেন, তাতে প্রত্যেকেই এর অভিনব স্থাপত্যশৈলীর ভূয়শী প্রশংসা করেন।


সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে, উনারই সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন

 সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে, উনারই সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন

এ প্রসঙ্গে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
يَا مُـحَمَّدُ صَـلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَا وَاَنْتَ وَمَا سِوَاكَ خَلَقْتُ لِاَجْلِكَ
অর্থ: “আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি এবং আপনি। আর আপনি ছাড়া যা কিছু রয়েছে, সমস্ত কিছু আমি আপনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্যই সৃষ্টি করেছি।” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْـجَنَّةَ.
অর্থ: “আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সৃষ্টি মুবারক না করলে, সম্মানিত জান্নাত মুবারক সৃষ্টি করতাম না।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী, কানযুল উম্মাল)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْـنَّارَ.
অর্থ: “আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সৃষ্টি মুবারক না করলে, জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী, কানযুল উম্মাল)।
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَيَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَعِزَّتِـىْ وَجَلَالِـىْ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْـجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الدُّنْيَا.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমার সম্মানিত ইজ্জত মুবারক এবং সম্মানিত জালালিয়াত মুবারক উনাদের কসম! আমি আপনাকে সৃষ্টি মুবারক না করলে, সম্মানিত জান্নাত মুবারক সৃষ্টি করতাম না এবং আমি আপনাকে সৃষ্টি মুবারক না করলে, কায়িনাত কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৫/২২৭)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
لَوْلَاكَ مَا اَظْهَرْتُ الرُّبُوْبِيَّةَ.
অর্থ: “আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সৃষ্টি মুবারক না করলে, আমার সম্মানিত রুবূবিয়াত মুবারকও প্রকাশ করতাম না।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن سيدنا حضرت على كرم الله وجهه عليه السلامان الله تعالى قال لنبيه صلى الله عليه وسلم من اجلك ابطح البطحاء واموج الماء وارفع السماء واجعل الثواب والعقاب والجنة والنار.
অর্থ: “ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত নবী-রসূল, উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার মুবারক সম্মানার্থেই সমভূমি, নি¤œভূমি, উপত্যকা, নদীর তলদেশকে বিস্তৃত করেছি অর্থাৎ যমীন সৃষ্টি করেছি, (সমুদ্রের) পানিকে তরঙ্গায়িত করেছি, ঊর্মিমুখর করেছি এবং আসমানকে করেছি সুউচ্চ। অর্থাৎ সারা কায়িনাত সৃষ্টি করেছি। সুবহানাল্লাহ! আর আপনার মুবারক সম্মানার্থেই আমি পুরস্কার-শাস্তি এবং জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ আপনাকে যাঁরা সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করবেন, সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করবেন, উনারা পুরস্কার লাভ করবেন, সম্মানিত জান্নাত মুবারক লাভ করবেন তথা হাক্বীক্বী মুহব্বত-মা‘রিফত, নিসবত-কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! আর আপনাকে যারা সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করবে না, সম্মান তা‘যীম-তাকরীম মুবারক করবে না, আপনার নাফরমানী করবে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন লাঞ্ছনাদায়ক ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং চিরজাহান্নাম।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/৭৫)

ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং ইহুদীদের চারটি প্রশ্ন

 আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কালে তৎকালীন কথিত পরাশক্তি নামধারী পারস্য, রোমসহ পুরো পৃথিবীই মুসলমানদের পদানত হয়েছে। সম্মানিত ইসলামী বিজয় নিশান তখন পৃথিবীর কোনায় কোনায় পৌছে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় মুসলমানদের এই বিজয়ের গতি রুখতে একের পর এক কূটকৌশল সাজাতে ব্যস্ত কুখ্যাত ইহুদীরা।

তেমনি এক অপকৌশলের অংশ হিসেবে কয়েকজন ইহুদী সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফে এলো। তারা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানালো যে তারা চারটি প্রশ্ন করতে চায়। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর সম্মানিত আসমানী কিতাব থেকে দিতে হবে। যদি সঠিক উত্তর পায় তাহলে তারা সবাই দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করবে। না হয় মুসলমানদের পরাজয়ের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিবে। নাউযুবিল্লাহ! সম্মানিত ইসলামী খিলাফত উনার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াবে। নাউযুবিল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি ইহুদীদের এই কুটকৌশল ধরতে পারলেন। তিনি রাজী হলেন তাদের এই চারটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য।
প্রথম প্রশ্ন: দুইজন জমজ ভাই। উনারা এক সঙ্গে দুনিয়াতে আগমন করেন এবং একইসাথে বিদায় নেন। কিন্তু উনাদের উভয়ের বয়সের মধ্যে ১০০ বছরের পার্থক্য। উনারা কোন দুই ভাই? উনাদের মাঝে বয়সের এই পার্থক্য কেনো?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: পৃথিবীর এমন একটি স্থান যেখানে সূর্যের কিরণ মাত্র একবারই পড়েছিলো। এর আগে কখনো সেখানে সূর্যের আলো পড়েনি, ভবিষ্যতে পড়বেও না। কোন জায়গা এটি?
তৃতীয় প্রশ্ন: একটি কবর, তার ভেতরে একটি মুর্দা। কিন্তু কথা হলো, এই কবরেরও প্রাণ আছে, তার ভেতরকার মুর্দা উনারও প্রাণ আছে। ওই কবরটি মুর্দা উনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এক সময় মুর্দা ব্যক্তি তিনি কবর থেকে বের হয়ে আসেন। এটি কোন কবর ও কোন মুর্দা?
চতুর্থ প্রশ্ন: একটি কারাগারের ভেতর একজন বন্দী। বন্দীটি সেখানে কোনো প্রকার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারলেও বেঁচে থাকে। এটি কোন কারাগার? বন্দির পরিচয় কি?
মূলত এ সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার পরিচালনার তরতীব অনুযায়ী ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ডাকলেন এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে বললেন।
প্রশ্নগুলো শুনে ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! এই প্রশ্নগুলোর উত্তর একেবারেই সোজা।
প্রথম প্রশ্নের উত্তর: এই সম্মানিত দুই ভাই হলেন আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী হযরত উযাইর আলাইহিস সালাম এবং উনার ভাই। উনারা দুইজনই একইসাথে দুনিয়ায় আগমন মুবারক করেন। একদিন হযরত উযাইর আলাইহিস সালাম তিনি এক জনমানবহীন শুষ্ক প্রান্তর দিয়ে গমন করছিলেন এবং বলছিলেন, আয় আল্লাহ পাক! এমন শুল্ক প্রান্তরেও কি আবাদ হওয়া সম্ভব? একথা বলার কিছুক্ষণ পর সেই প্রান্তরে বিশ্রাম নেয়ার জন্য যখন তিনি থামলেন তখন তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন এবং এক ঘুমেই ১০০ বছর কাটিয়ে দিলেন। তারপর যখন ঘুম থেকে উঠলেন তখন তিনি বুঝতে পারলেন ১০০ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে এবং উনার বয়স মুবারকও বৃদ্ধি পায়নি। পরবর্তীতে উনি এবং উনার ভাই একইসাথে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর: সেই স্থানটি হলো নীলনদের ওপর ভেসে ওঠা রাস্তা। নীলনদ পার হবার সময় যখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পানিতে উনার মহাসম্মানিত লাঠি মুবারক দ্বারা আঘাত করেছিলেন তখন মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারকে পানি সরে গিয়ে রাস্তা তৈরী হয়েছিলো। এই রাস্তাটিতেই মাত্র একবার সূর্যের কিরণ পৌছেছিলো। ওই রাস্তাটি আর কখনো ভাসবেও না, আলোও কখনো পড়বে না। সুবহানাল্লাহ!
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর: সেই কবর হলো সাইয়্যিদুনা হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে পেটে ধারণ করা মাছটি। আর মাইয়্যিত বলতে হযরত ইউনুছ আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। মাছটিও জীবিত ছিলো এবং হযরত ইউনুছ আলাইহিস সালাম তিনিও বহাল তবিয়তেই অবস্থান মুবারক করছিলেন মাছের পেটের ভেতর। সুবহানাল্লাহ!
চতুর্থ প্রশ্নের উত্তর: সেই বন্দীটি হচ্ছে মায়ের গর্ভে থাকা বাচ্চা। মায়ের গর্ভে থাকা শিশুটি কোনো প্রকার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারলেও আল্লাহ পাক উনার দয়া-ইহসান মুবারকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
এই মহাসম্মানিত চারটি প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত নিখুতভাবে পেয়ে সেখানে উপস্থিত সকল ইহুদীরা চমকে গেলো। তৎক্ষনাৎ তারা আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন। পাশাপাশি হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনিও ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শুকরিয়া জানালেন এবং উনার সম্মানিত প্রশংসা মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ!