>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১

সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা

  মুজাদ্দিদগণের এ দুনিয়াতে আগমনের কারণ বা উদ্দেশ্য হল- সমাজে প্রচলিত যাবতীয় বদ ও কুফরী আক্বীদা, বিদয়াত-বেশরা ও শরীয়ত বিরোধী কুসংস্কারমুলক আমল সমুহের মুলউৎপাটন করা ও ছহীহ্ আক্বীদা ও সুন্নতের আমল সমুহে সকলকে অভ্যস্ত করে তোলা। একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, প্রথম হিজরী শতক হচ্ছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণের যামানা। অতএব মুজাদ্দিদ্গণের আগমন শুরু হয়েছে দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকে। মুজাদ্দিদগণের এ দুনিয়াতে আগমনের ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত ১৩ জন মুজাদ্দিদ গত হয়েছেন। তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলোঃ

১) হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি দ্বিতীয় হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মাযহাব হানাফী মাযহাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একজন তাবেই। তাঁর প্রকৃত নাম নু’মান বিন সাবিত। তিনি প্রথমে হযরত ইমাম সাইয়্যিদ বাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং উনার বিছাল শরীফের পর তাঁর পুত্র হযরত ইমাম সাইয়্যিদ জাফর সাদিক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি-র কাছে বাইয়াত হন। তিনি শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা হাতে বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে বলেনঃ “(আমার জীবনে) যদি দু’টি বছর না আসতো, তবে নু’মান ধ্বংস হয়ে যেত।“(সাইফুল মুক্বাল্লিদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া) অর্থাৎ তিনি যদি তাঁর শায়খদ্বয় (রহমতুল্লাহি আলাইহিম)-এর নিকট বাইয়াত না হতেন, তবে তিনি ধ্বংস বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতেন। তিনি ৮০ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং বিছাল শরীফ লাভ করেন ১৫০ হিজরীতে। হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ৪৮টিরও বেশী লক্বব মুবারক (উপাধী) ছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য লক্বব হচ্ছে ইমামে আ’যম, ইমামুল মুকাস্‌সিরীন ফিল হাদীস, ইমামুল কবীর ফিল ফিক্বাহ, ইমামুল হুমাম, ইমামুল আইম্মা, ইত্যাদি।

২) হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি তৃতীয় হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ এবং হাম্বলী মাযহাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-র কাছে বাইয়াত হয়ে তাঁর কাছ থেকে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করেন। এছাড়া হযরত আবূ হামযাহ্‌ রহমতুল্লাহি আলাইহি-র কাছ থেকেও তিনি ইলমে তাছাউফের নিসবত হাছিল করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য তাজদীদসমূহের দু’টি নিম্নরূপ- ১) “লাইলাতুল রগাইব” অর্থাৎ রজব মাসের পহেলা জুমুয়ার রাত্র, যে রাত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর আব্বার পিঠ মুবারক থেকে আম্মার রেহেম শরীফে তাশরীফ এনেছেন, সে রাত্রের মর্যাদা ও ফযীলত শবে বরাত ও শবে ক্বদর থেকেও বেশী। ২) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের উপর আমল করা ফরজ। তাঁর পবিত্র জীবন মুবারকের ব্যাপ্তীকাল ১৬৪ হিজরী থেকে ২৪১ হিজরী।

৩) হযরত ইমাম আবুল মানসুর মাতুরিদী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি চতুর্থ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ এবং তিনি হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ ও মুজতাহিদ ছিলেন। তিনি আহ্‌লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের প্রতিটি বিষয়ের শুদ্ধ আক্বীদা নিরুপণ করেন তাই তাঁকে আক্বাঈদ শাস্ত্রের ইমাম বলা হয়। তাঁর পবিত্র জীবন মুবারকের ব্যাপ্তীকাল ২৭০ (মতান্তরে ২৭১) হিজরী থেকে ৩৩৩ হিজরী।

৪) হযরত ইমাম মুহম্মদ আবূ হামিদ গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি পঞ্চম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তিনি হযরত আবূ আলী ফারমুদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাতে বাইয়াত হন। তিনি তাঁর যামানার সকল মুসলমানকে গ্রীক দর্শন হতে ফিরিয়ে ইসলামের দিকে নিয়ে আসেন, তাই তিনি “হুজ্জাতুল ইসলাম”(অর্থাৎ ইসলামের দলীল ) লক্বব মুবারকে ভুষিত হন। তাঁর আর একটি উল্লেখযোগ্য তাজদীদ হচ্ছে- চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাব অনুসরণ করা ফরজ। তিনি ইলমে তাছাউফের উপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেন তার মধ্যে দু’টি কিতাব হলো- ইহ্‌ইয়াউ উলূমিদ্দীন ও ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাত। তিনি ৪৫০ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ৫০৫ হিজরীতে বিছাল শরীফ লাভ করেন।

৫) হযরত ইমাম সাইয়্যিদ আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি ষষ্ঠ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী এবং ক্বাদরিয়া ত্বরীকার ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধর। তিনি ইলমে ফিক্বাহ্‌ হাছিলের পর ইলমে তাছাউফ হাছিল করার জন্য হযরত আবূ সাঈদ মুবারক মখদূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ হন এবং ইরাকের জঙ্গলে ২৫ বছর যাবত সাধনা করে পূর্ণতায় পৌছেন। তিনি তাঁর যামানার সকল মুসলমানকে যাবতীয় বদ ও কুফরী আক্বীদা, বিদয়াত-বেশরা ও শরীয়ত বিরোধী কুসংস্কারমুলক আমল হতে ফিরিয়ে ইসলামের দিকে অর্থাৎ আল্লাহ পাকের মারিফাত-মুহব্বতের দিকে আনার জন্য একটি ত্বরীকা বা পথ দেখান যা ক্বাদরিয়া ত্বরীকা নামে সুপরিচিত, আর তাই তিনি আল্লাহ্‌ পাকের তরফ হতে “মুহিউদ্দীন”(ইসলাম জিন্দাকারী) লক্বব মুবারক প্রাপ্ত হন। তাঁর ৫১টিরও বেশী লক্বব মুবারকের মধ্যে মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, পীরানে পীর, দস্তগীর ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি তাঁর রচিত গুনিয়াত্ত্বলিবিন কিতাবে ৭২টি বাতিল ফিরক্বার আক্বীদা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন, যা তাঁর একটি অনবদ্য তাজদীদ। তিনি ৪৭১ হিজরীতে ইরানের জিলানে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ৫৫৯ হিজরীতে ইরাকের বাগদাদে বিছাল শরীফ লাভ করেন। বাগদাদ শরীফেই তাঁর মাযার শরীফ অবস্থিত।

৬) হযরত ইমাম সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি সপ্তম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী এবং চিশতীয়া ত্বরীকার ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনিও সাইয়্যিদ ছিলেন। তাঁর পীর সাহেব ক্বিবলার নাম হচ্ছে হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি তাঁর শায়খের ২০ বছর যাবত খেদমতের আঞ্জাম দেন এবং তাঁর কাছ থেকে কামালত হাছিল করেন। তাঁর উসীলায় পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রায় ১ কোটিরও বেশী লোক তাঁর হাতে বাইয়াত হয়ে ইসলাম গ্রহন করেন, তাই সত্যই তিনি “মুঈনুদ্দীন” অর্থাৎ ইসলামের সাহায্যকারী। তিনি আল্লাহ পাকের বান্দদেরকে ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতদেরকে উনাদের মারিফাত-মুহব্বত হাছিলের জন্য যে ত্বরীকা দিয়ে যান তা চিশতীয়া ত্বরীকা নামে সুপ্রসিদ্ধ। তিনি সুন্নতের এত বেশী অনুসরণ-অনুকরন করতেন, যার ফলশ্রুতিতে বিছাল শরীফের সময় তাঁর কপাল মুবারকে সোনালী অক্ষরে লিখিত হয় “হা-যা হাবীবুল্লাহ মা-তা ফী হুব্বিল্লাহ” অর্থাৎ ইনি আল্লাহ পাকের হাবীব (বন্ধু), আল্লাহ পাকের মুহব্বতে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। তিনি ৫৩৬ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ৬৩৩ হিজরীতে ভারতের আজমীর শরীফে বিছাল শরীফ লাভ করেন, সেখানেই তাঁর মাযার শরীফ রয়েছে। তাঁর ৮২টিরও বেশী লক্বব মুবারক রয়েছে, তারমধ্যে হাবীবুল্লাহ, সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়েখুল বাররে ওয়াল বাহ্‌র, গরীবে নেওয়াজ, খাজায়ে খাজেগাঁ ইত্যাদি বিশেষভাবে প্রণিধাণযোগ্য।

৭) হযরত ইমাম নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি অষ্টম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম মুহম্মদ বিন আহমদ বিন আলী বুখারী। তিনি হযরত খাজা বাবা ফরীদুদ্দীন মাসুদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাতে বাইয়াত হন এবং তাঁর কাছে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাব এবং চিশতীয়া ত্বরীকার অনুসারী। তিনি সামার মাহ্‌ফিল (বাদ্যযন্ত্র, মহিলা, রাগ-রাগিনী তথা অনৈসলামী সূর ব্যতীত ও আরো শর্ত সাপেক্ষে আল্লাহ পাকের দিকে আহ্বান সম্বলিত শব্দ দ্বারা রচিত এবং আল্লাহ্‌ওয়ালা ব্যক্তি দ্বারা ক্বাসিদা পাঠকে সামা বলে) খুব পছন্দ করতেন। তাঁর লক্বব মুবারকের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে- মাহবুবে ইলাহী, সুলতানুল মাশায়িখ, নিযামুদ্দীন আউলিয়া ইত্যাদি। তিনি ৬৬০ হিজরীতে বাদায়্যূনে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ৭৪৫ হিজরীতে দিল্লীতে বিছাল শরীফ লাভ করেন, সেখানেই তাঁর মাযার শরীফ রয়েছে।

৮) হযরত ইমাম খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি নবম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী এবং নকশবন্দীয়া ত্বরীকার ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হযরত সাইয়্যিদ আমীর কূলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ ছিলেন। তিনি মুসলমানদেরকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মারিফাত-মুহব্বত হাছিলের জন্য যে ত্বরীকা দিয়ে যান তা নকশবন্দীয়া ত্বরীকা নামে সুপরিচিত। তিনি ৭২৮ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং তাঁর বিছাল শরীফ হয় ৮০৮ হিজরীতে (মতান্তরে ৭৯১ হিজরীতে)।

৯) হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। আফ্রীকার সুয়ূত অঞ্চলে তিনি তাঁর তাজদীদের কাজ করেন। তিনি ছিলেন শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী। মুজাদ্দিদগণের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশী কিতাব রচনা করেন, “তাফসীরে জালালাইন” তাঁর রচিত কিতাবগুলোর মধ্যে একটি। তাঁর পবিত্র জীবন মুবারকের ব্যাপ্তীকাল ৮৪৯ হিজরী থেকে ৯১১ হিজরী পর্যন্ত।

১০) হযরত ইমাম শায়খ আহমদ ফারুক্বী সিরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি একাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। যেহেতু তিনি দ্বিতীয় হিজরী সহস্রাব্দে আভির্ভূত হন, তাই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে “মুজাদ্দিদে আলফে ছানী” (দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদ) লক্বব প্রদান করেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী এবং নকশবন্দীয়া-ই-মুজাদ্দিদীয়া ত্বরীকার ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হযরত খাজা বাক্বীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফের তাক্বমিলে পৌছে খিলাফত প্রাপ্ত হন। তাঁর সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছেঃ “হিজরী একাদশ শতকের প্রারম্ভে আল্লাহ পাক এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যিনি একটি বৃহৎ নূর, তাঁর নাম হবে আমার নামের অনুরূপ, দুই অত্যাচারী বাদশাহ্‌র মধ্যবর্তী সময়ে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং তাঁর শাফায়াতে অসংখ্য লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে।“ (জামউল জাওয়াম) সত্যিই তিনি ৯৭১ হিজরীতে ভারতের সিরহিন্দে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং বাদশাহ আকবর কতৃক উদ্ভাবিত “দ্বীন-ই-ইলাহী” নামক কুফুরী মতবাদের মুলউৎপাটন করে ছহীহ্‌ দ্বীন তথা “দ্বীন ইসলাম”কে জিন্দা করেন। তিনিও পূর্ববর্তী সকল আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতো সুন্নতের সূক্ষাতিসূক্ষ অনুসরণ-অনুকরণ করতেন, যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ পাক তাঁকে গায়ের এখতিয়ার সুন্নতও (স্বীয় ইচ্ছা-ক্ষমতার বাইরে যে সুন্নত) পালন করিয়েছেন। যেমন তিনি ৬৩ বছর (যা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুনিয়াবী হায়াত মুবারক) বয়স মুবারকে ১০৩৪ হিজরীতে সিরহিন্দে বিছাল শরীফ লাভ করেন। তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বংশধর ছিলেন এবং তরীক্বার নিসবতের দিক দিয়ে আফদ্বালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাঁর ২৪টিরও বেশী লক্বব মুবারকের মধ্যে প্রণিধাণযোগ্য লক্বব মুবারক হচ্ছে- ইমামে রব্বানী, আফদ্বালুল আউলিয়া, ক্বাইয়্যুমে আউয়াল, নূরূন আযীম, সিরাজুল উম্মত, মুসলিহাম বাইনাল ফিআতাইন ইত্যাদি।

১১) হযরত ইমাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি দ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং চার ত্বরীকায় বাইয়াত করাতেন। তিনি হযরত আব্দুর রহীম মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাতে বাইয়াত হন। তিনি ১১১৪ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ১১৭৬ হিজরীতে আল্লাহ্‌ পাকের সান্নিধ্যে চলে যান। তাঁর উল্লেখযোগ্য লক্বব মুবারকের মধ্যে কয়েকটি লক্বব হলো ইমামুল হিন্দ, আরিফুর রব্বানী, হুজ্জাতুল ইসলাম ইত্যাদি।

১২) হযরত ইমাম সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি: তিনি ত্রয়োদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী এবং চার ত্বরীকার নিসবত প্রাপ্ত ও মুহম্মদীয়া ত্বরীকার ইমাম। তিনিই এখন পর্যন্ত একমাত্র মুজাদ্দিদ যিনি “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ”-এর জন্য বালাকোটে শহীদ হন এবং যাঁর স্বহস্তে লিখিত কোন কিতাব নেই। বালাকোটে শহীদ হওয়ার পূর্বে তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিভিন্ন সুন্নত জিন্দা করেন। তিনি ১২০১ হিজরীতে ভারতের উত্তর প্রদেশের রায় বেরেলী শহরের বিখ্যাত সম্ভ্রান্ত সাইয়্যিদ পরিবারে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ১২৪৬ হিজরীতে বালাকোট প্রান্তরে শহীদ হন। তাঁর পীর সাহেব ক্বিবলা ছিলেন হযরত আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁর উল্লেখযোগ্য লক্বব মুবারক হচ্ছে ছাহিবু ইলমে লাদুন্নী, মুজাহিদে আ’যম, আমিরুল মু’মিনীন, শহীদে বালাকোট ইত্যাদি।

১৩) হযরত ইমাম আবূ বকর ছিদ্দিক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি গত শতাব্দীর অর্থাৎ চতুর্দশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী এবং চার ত্বরীকার নিসবত প্রাপ্ত। তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বহু সুন্নতকে মুসলমানের মাঝে জিন্দা করে গেছেন। তিনি ১২৩৬ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ১৩৫৮ হিজরীতে বিছাল শরীফ লাভ করেন। তিনি হযরত শাহ ফতেহ আলী বর্ধমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে খিলাফত প্রাপ্ত ছিলেন। তাঁর ৪১টির বেশী লক্বব মুবারকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্বব মুবারকগুলো হলো রঈসূল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্‌সিরীন, ইমামুল মুসলিমীন, ক্বাইয়্যুমুয্‌ যামান, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ইত্যাদি।

যিনি বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ তিনি হচ্ছেন খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্‌ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, আওলাদে রসূল, মাওলানা হযরত ইমাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমান  আলাইহিস সালাম আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী ।রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা। তিনি তাঁর সম্মানিত মাতা-পিতা উভয় দিক হতে সাইয়্যিদ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতমুন্‌ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধর। তিনি সারাবিশ্বে সমাদৃত, প্রশংসিত, গ্রহণযোগ্য ও হক্ব সিলসিলা ফুরফুরা সিলসিলার পীর সাহেব ক্বিবলা হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপূরী (যাত্রাবাড়ির হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা) রহমতুল্লাহি আলাইহি হাতে বাইয়াত হয়ে মাত্র দেড় বছরে চার তরীক্বায় পূর্ণতাপ্রাপ্ত হন এবং স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলার চূড়ান্ত সন্তুষ্টি হাছিল করে খিলাফত প্রাপ্ত হন।

দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক


ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ৪০ মাইল দূরে সালমান পার্ক একটি প্রাচীন জনপদ। সেই ঐতিহ্যবাহী নগরী সালমান পার্কে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে ৮৯ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৩২ সালে।
সালমান পার্কে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম কবরস্থ হন বিখ্যাত ছাহাবী হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু । এরপর প্রায় তেরশত বছর পর সেখানে সমাহিত করা হয় আরো দু’জন ছাহাবীকে। তার মধ্যে একজন হলেন- হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং
হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ।
শেষাক্তো দু’জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের কবর প্রথমে সালমান পার্কে ছিল না। তাঁদের কবর ছিল সালমান পার্ক থেকে দু’ ফালং দুরে একটা অনাবাদী জায়গায়। যার অতি নিকট দিয়ে কলকল রবে বয়ে চলেছে ঐতিহাসিক দজলা নদী। দীর্ঘদিন পর একটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উনাদের কে সেখান থেকে সরিয়ে এনে সালমান পার্কে দাফন মুবারক করা হয়।
যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে উনাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, সেটি ছিল বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম বিস্ময়কর ঘটনা। সেই সময় ইরাকের বাদশাহ ছিলেন বাদশাহ ফয়সাল।
একদিন বাদশাহ ফয়সাল ঘুমিয়ে আছেন। হঠাৎ স্বপ্নে দেখেন- হযরত হুযায়ইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁকে বলছেন- “আমাদের বর্তমান অবস্থান থেকে সরিয়ে অন্যত্র দাফন করা হোক। কেননা, আমার কবরে পানি জমতে শুরু করেছে, আর হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার কবরে পানি প্রবেশ করার উপক্রম হয়েছে।”
কিন্তু বাদশাহ ফয়সাল ব্যস্ততার কারণে পরদিন স্বপ্নের কথা ভুলে যান। এরপর দ্বিতীয় রাতেও তিনি একই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু নানাবিধ ঝামেলার কারণে সেদিনও স্বপ্নের নির্দেশ পালন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
তখন হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তৃতীয় রাত্রে একইভাবে স্বপ্নযোগে ইরাকের মুফতীয়ে আ'যমকে একাজ সমাধা করার দায়িত্ব দেন। সেই সঙ্গে এও বলেন যে, ‘আমি পর পর দু’রাত ধরে বাদশাহকে এ ব্যাপারটি অবহিত করে আসছি। কিন্তু তিনি দিনের বেলায় ভুলে যাওয়ার কারণে এ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হননি। এখন আপনার দায়িত্ব হচ্ছে – আমার নির্দেশটি তাঁকে স্বরণ করিয়ে দেয়া এবং যথাশীঘ্রই আমাদেরকে স্তানান্তর করার ব্যবস্থা করা।’
স্বপ্নযোগে এ দৃশ্য দেখে মুফতীয়ে আ'যম কালবিলম্ব না করে পরদিন সকালেই ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরী আল সাঈদকে সংগে নিয়ে বাদশাহর দরবারে হাজির হন এবং তাঁকে স্বীয় স্বপ্নের কথা বিস্তারিরত ভাবে খূলে বলেন।বাদশাহ ব্যাপারটা বিশদভাবে আলোচনা করার পর এরূপ একটি স্পর্শকাতর পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে মুফতীয়ে আ'যম-এর নিকট ফতওয়া তলব করেন। মূফতীয়ে আজম লাশ মুবারক স্থানান্তরের অনুকূলে ফতুওয়া প্রদান করেন।
অতঃপর সিন্ধান্ত হয় যে, কুরবানীর ঈদের দিন বাদ যোহর ছাহাবীদ্বয়ের ( রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম )কবর খুঁড়ে উনাদের লাশ মুবারক অন্য কোন নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত হবে। ইরাক সহ দেশ বিদেশের সংবাদ মাধ্যম গুলো তে খবরটি প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে সর্বত্র আলোচনার সৃষ্টি হয়। জনগন ছাহাবীদ্বয়ের ( রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ) দেখতে পাবার আনন্দে বিভোর হয়ে যায়। তখন বিশ্বে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন মক্কা নগরীতে সমবেত। কারণ, সেসময় ছিল হজ্জের মৌসুম। এ সংবাদ শ্রবণে হাজীগণ বাদশাহ ফয়সালের কাছে আবেদন করলেন -আমরাও মহান ছাহাবীদ্বয়ের ( রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম )চেহারা মুবারক দর্শনে আগ্রহী। অনুগ্রহ পূর্বক তারিখটা আরো ক’দিন পিছিয়ে দেয়া হোক। এদিকে ইরান, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিস্তিনি, হেজায, বুলগেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা , রাশিয়া, ভারত বাংলাদেশ সহ প্রভূতি রাষ্ট্র থেকে বাদশাহ ফয়সালের নিকট একই আবেদন সম্বলিত অসংখ্য বার্তা আসতে লাগল।
বাদশাহ্ ফয়সাল মহাবিপদে পড়লেন। একদিকে গোটা মুসলিম বিশ্বের তারিখ পেছানোর জোড়ালো অনুরোধ, অন্যদিকে দ্রুত স্থানান্তরের স্বাপ্নিক নির্দেশ মুবারক। উভয় সংকটে পড়লেন। অবশেষে এ ব্যাপারে সিন্ধান্ত হলো , কিছুদিন যাতে কবরের ভিতর পানি প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য নদীর দিক থেকে দশ ফুট দুরে একটি গভীর গর্ত খনন করে সেখানে কাঁকর ফেলা হবে। আর সারাবিশ্বের মুসলমানদের আগ্রহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তারিখটি আরো দশ দিন পিছিয়ে দেয়া হল।এ ঘোষনার পর ক’দিনের মধ্যেই সালমান পার্কের ছোট বসতিটি লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, রাষ্ট্রদূত, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঢল নামল এ পার্কে। তাঁবুতে তাঁবুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল মাদায়েনের ঐতিহাসিক মাঠটি। একটি গ্রহণযোগ্য হিসাব অনুযায়ী আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল পাঁচ লক্ষ।
শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিক্ষিত দিনটি এসে গেল। লক্ষ লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে কবর খোঁড়া হলো। দেখা গেল -সত্যিই হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবরে কিছু পানি জমে গেছে এবং হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবরে কিছুটা আদ্রতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে সমবেত জনতা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন। তাঁদের কণ্ঠে বার বার উচ্চারিত হতে লাগল -”আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।” চোখে নেমে আসে অশ্রুর বন্যা।
বাদশাহ ফয়সালের নেতৃত্বে তাঁর মন্ত্রী ও কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত রাষ্ট্রদুতগণের সহযোগীতায় প্রথমে হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু -উনার লাশ মুবারক কবর থেকে ক্রেনের দ্বারা তোলা হল। ক্রেনের সাহায্যে তাঁর পবিত্র লাশ মুবারকটি এমন ভাবে উঠানো হয় যে, মুবারক লাশটি আপনাতেই ক্রেনের মাথায় ফিট করে রাখা ট্রেচারে এসে পৌঁছায়। অতঃপর ট্রেচারটি ক্রেন থেকে পৃথক করে নেয়া হল। বাদশাহ ফয়সাল, মুফতী সাহেব, সিরিয়া এবংতুরস্কের নির্বাচিত মন্ত্রীবর্গ এবংমিশরের যুবরাজ শাহ ফারুক অত্যন্ত যত্ন ও তা’জীম সহকারে লাশ মুবারককে তুলে এনে একটি কফিনের ভিতর রাখেন। অতঃপর একই ভাবে হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু -উনার পবিত্র লাশ মুবারকও তুলে আনা হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো- শত শথ বছর কেটে গেলেও শুধু উনাদের লাশ মুবারকই নয়, কাফন বাঁধার ফিতা গুলোর মধ্যেও কোন পরিবর্তন আসেনি। সুবাহানাল্লাহ্‌! মুবারক লাশ দুটি দেখে কেউ কেউ কল্পনাও করতে করতে পারছিল না যে, এগুলো দীর্ঘ তেরশত বছরের প্রাচীণ লাশ।
আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- তাঁদের চোখগুলো ছিল খোলা, সেই খোলা চোখ থেকে রহস্যময় অপার্থিব জ্যোতি এমনভাবে ঠিকরে পড়ছিল, যে, অনেকেই তাঁদের চোখ ভাল ভাবে দেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখ থেকে বেরিয়ে আসা অতি উজ্জ্বল আলোর কারণে কেউই দৃষ্টি ঠিক রাখতে পারছিলেন না।
এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে বড় বড় ডাক্তার গণ হতবাক হয়ে যান। এ সময় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জৈনিক জার্মান চক্ষু বিশেষজ্ঞ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে সবকিছু খুঁটে খুঁটে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করে মূফতি সাহেবের হাত ধরে বললেন- “ইসলামের সত্যতা এবং সাহাবীগণের উচ্চ মর্যাদার সপক্ষে এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে?” এ বলে তিনি কালিমা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান হয়ে যান।
অতঃপর পবিত্র মুবারক লাশ দু’টিকে কফিনে রাখার পর উপস্থিত জনতা তাঁদের জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করেন। এরপর আলেমগণ ও মন্ত্রীবর্গ কফিন দু’টো কাঁধে উঠিয়ে নেন। কিছুদুর যাওয়ার পর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবর্গ এবং সবশেষে বাদশাহ ফয়সাল কাঁধ পেতে নেন।
দীর্ঘ চার ঘন্টা পর চরম ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে পবিত্র লাশ দুটি সালমান পার্কে এসে পৌঁছে। যে সৌভাগ্যবান লাশ দু’টিকে প্রথমে কফিনে রেখেছিলেন, তারাই কফিন দু’টি নবনির্মিত কবরে নামিয়ে রাখেন। আর এভাবেই জনতার আল্লাহু আকবার ধ্বনির মধ্যে ইসলামের এই মহান ছাহাবীদ্বয়কে( রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম )মাটির কোলো শুয়ে দেওয়া হয়।

প্রতি ‌সোমবার শরীফে আবূ লাহাবের শাস্তি হ্রাস করার কারণ

 হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেছেনঃ আবূ লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি যেখানে সে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে দেখতে পাই। আর তখন সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো, তোমাদের নিকট থেকে আসার পর থেকে আমি আজ পর্যন্ত কোনো শান্তি পাইনি তবে প্রতি ‌সোমবার শরীফ আমার শাস্তি হ্রাস করা হয়।হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, প্রতি সোমবার শরীফ তার শাস্তি হ্রাস করা হয় এ জন্যেই যে আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সোমবার শরীফ পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। আর সেই সময় হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফের সুসংবাদ দিলে আবু লাহাব খুশি হয়ে উনাকে আযাদ করে দিয়েছিলো।

দলিলসমূহ: বুখারী শরীফ, 

ফতহুল বারী, ৯ম খ-, ১১৮ পৃঃ 

ওমদাতুল ক্বারী, শরহে বুখারী ২য় খণ্ডের ৯৫ পৃষ্ঠা

একজন গ্রাম্য লোকের শিক্ষনীয় ঘটনা




মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি একটি ঘটনা লেখেন, বাগদাদের সন্নিকটে এক গ্রামে এক ব্যক্তি বাস করত। লোকটির একদিন সাদ জাগলো বাদশার দরবারে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করবে। বাদশাও তো আর এ যুগের বাদশাদের মত নয়, অর্ধ দুনিয়ার শাষক। তখনকার মানুষ বাদশার কাছে গেলে কিছু হাদিয়া নিয়ে যেত। উদ্দেশ্য বাদশার একটু সুদৃষ্টি তার উপর পড়ে।

লোকটি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করল যে, আমি তো বাদশার দরবারে যাচ্ছি। তার জন্য কোন হাদিয়া তোহফা নেওয়া উচিত। এখন কি নিতে পারি? লোকটির বসবাস ছিল ছোট্ট একটা গ্রামে। দুনিয়ার কোন খবর তার ছিলো না। তার স্ত্রী তাকে পরামর্শ দিল, আমাদের ঘরে কলসে যে পানি আছে সেটা নিয়ে যাও। রাজ দরবারের লোক জন এমন স্বচ্ছ শীতল ও বিশুদ্ধ পানি পাবে কোথায়?লোকটিও তার স্ত্রীর কথা যৌক্তিক মনে করল।

পানি নিয়ে রাজ দরবারে রওয়ানা দিল। তখন তো আর উড়ো জাহাজের যুগ ছিলোনা।লোকটি পায়ে হেঁটেই কলসি মাথায় নিয়ে রওয়ানা হল। দির্ঘ্য পথ পাড়ি দিতে কলসের উপর ধুলাবালি ভিতরেও পানি ময়লা আর গন্ধ হয়ে গেল।

বেচারা গ্রাম্য লোক এসব খেয়াল না করেই রাজ দরবারে উপস্থিত হয়ে খলিফার সামনে কলসি পেশ করলো।খলিফা জানতে চাইলেন এতে কি?লোকটি বলল, হুজুরের জন্য আমার পুকুরের বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানো এনেছি। ভাবলাম আপনার দরবারে এমন পানি কোথায় পাবেন! দয়া করে এটা কবুল করুন।

খলিফা বললেন, আচ্ছ! ঢাকনা সরাও তো দেখি! ঢাকনা সরানো হল, পানি গন্ধ হয়ে গেছে।খলিফা ভাবলেন! বেচারা নিখাদ ভালবাসা নিয়ে এমন করেছে। তার মন ভাঙা ঠিক হবে না। তাই খলিফা লোকটির কলস ভরে আশরাফি দিতে নির্দেশ দিলেন। লোকটিও খুব খুশি!

লোকটি যখন রাজ দরবার থেকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি চাইলো তখন খলিফা এক নউকর কে বললেন তাকে কিছু দুর আগায়ে দিয়ে এসো আর দজলা নদীর তীর দিয়ে নিয়ে যাবে।

কিছু দুর আসার পর দজলার অথৈয় পানি দেখে গ্রাম্য লোকটি বলল ওখানে কি? নউকর বলল, ওটা নদী। চলো নদীর পানি কত সুন্দর দেখবে চলো।নদীর কাছে গিয়ে গ্রাম্য লোকটি নদীর সুন্দর স্বচ্ছ পানী দেখলো এবং কিছুটা পান করল।আর ভাবতে লাগলো,হায়! খলিফার দরবারে কাছে এত সুন্দর পানি আর আমি তার জন্য ময়লা পানি এনেছিলাম। তাহলে খলিফা আমার পানি গ্রহণ করেছে শুধু তার দয়া আর উদারতার ক্ষাতিরে!আমার পানির তো তার কোন প্রয়োজোনই ছিলোনা। উপরন্তু আমার কলস ভরে আশরাফি দিয়ে দিল!

আল্লাহ পাক উনার বুযুর্গ ওলী মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই ঘটনা শুনিয়ে বলতেন, আমাদের ইবাদতগুলোও তেমনি, যা আল্লাহ পাক উনার কোন কাজে আসেনা। তিনি আমাদের ইবাদতের মুখাপেক্ষীও নন। আর আমাদের ইবাদতও স্বচ্ছ বা নির্ভেজাল নয়। বরং তা দুর্গন্ধযুক্তই।

সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কারামত মুবারক



০১. ইয়া সারিয়া! আল-জাবাল। ইয়া সারিয়া! আল জাবাল। পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার জুমুয়ার খুতবা মুবারক পাঠ করা অবস্থায় আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হঠাৎ করে এরূপ অপ্রাসঙ্গিক বাক্য মুবারক উচ্চারণ করায় উপস্থিত সবাই অবাক বিস্মিত। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যথারীতি উনার পবিত্র খুতবা মুবারক পাঠ করতে থাকেন।

পবিত্র খুতবা উনার মাঝে হঠাৎ আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার অপ্রাসঙ্গিক বাক্য উচ্চারণ কেন, কারো সাহস হচ্ছে না উনাকে জিজ্ঞাসা করতে। পবিত্র খুতবা ও নামায শেষে মসজিদে উপস্থিত অনেকের মধ্যে বিষয়টি গুঞ্জন করতে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার। তিনি অসংকোচে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আজ আপনি পবিত্র খুতবা উনার মধ্যে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ইয়া সারিয়া! আল জাবাল (দুই কিংবা তিনবার) উচ্চারণ করলেন- কেন? জবাবে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একটি সৈন্য বাহিনীর কথা উল্লেখ করলেন। যারা নাহাওয়ান্দে পবিত্র জিহাদে লিপ্ত, এ বাহিনীর সেনাপতি হযরত সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বলেন, আমি দেখেছি সারিয়া একটি পর্বতের পাশে লড়ছেন। অথচ তিনি জানেন না যে, সম্মুখ এবং পেছন থেকে অগ্রসর হয়ে শত্রু বাহিনী তাকে ঘিরে ফেলার উপক্রম করেছে। এ শোচনীয় অবস্থা দেখে আমি বিচলিত হয়ে পড়ি, আমি স্থির থাকতে না পেরে আওয়াজ দিতে থাকি হে সারিয়া পর্বতের সাথে মিলে যাও। হে সারিয়া পর্বতের সাথে মিলে যাও।

নাহাওয়ান্দের রণক্ষেত্র থেকে বেশ কিছুদিন পর হযরত কাসেদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে আগমন করেন এবং পবিত্র জিহাদ উনার বিবরণ দিতে থাকেন এবং পূর্ণ ঘটনা ব্যক্ত করেন। হযরত কাসেদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জানান, আমরা যখন পবিত্র জিহাদে লিপ্ত তখন হঠাৎ একটি অদৃশ্য কণ্ঠ শোনা গেল, ইয়া সারিয়া! আল জাবাল। আওয়াজটি শ্রবণ করা মাত্র আমরা পর্বতের সাথে মিলে যাই এবং আমাদের বিজয় সূচিত হয়। সুবহানাল্লাহ! (তারিখুল খোলাফা- ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ)

(২) একদা দুর্ভিক্ষের সময় সর্বত্র খরা কবলিত মানুষের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। কোথাও বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র খিলাফতকাল। তিনি দুর্ভিক্ষ ও খরা কবলিত দেশের এ চরম সঙ্কট অবস্থা দেখে পানির জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে দোয়া করলেন এবং বৃষ্টি হলো, মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হতে লাগলো।

কিছুদিন পর কতিপয় আরব বেদুইন লোক বাহির থেকে আসে এবং তারা আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানায় যে, তারা অমুক দিন অমুক জঙ্গলে ছিলো। হঠাৎ আকাশে মেঘ দেখতে পায় এবং মেঘ হতে একটি আওয়াজ ভেসে আসে এবং আমরা শুনতে পাই ‘ইন্নাকাল গাওসু আবা হাফছিন’ অর্থাৎ হে আবু হাফছ! (সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কুনিয়াত ডাকনাম মুবারক) আপনার জন্য বৃষ্টি নামছে। সুবহানাল্লাহ!

(৩) একদা একটি পর্বতের গর্ত হতে অগ্নি নির্গত হতো এবং এ আগুন যতটুকু বিস্তার লাভ করতো সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিতো। বহুকাল এ আগুনের ধ্বংসলীলা চলে আসছিলো এবং আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আমলেও তা অব্যাহত ছিলো। তিনি খবর পেয়ে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অথবা হযরত তামীম দারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিলেন সেখানে গিয়ে আগুনকে তার গর্তের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে আসতে। নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী উনারা সেখানে গমন করেন এবং আগুনকে উনাদের চাদর দ্বারা হাকাতে শুরু করেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন গর্তের অভ্যন্তরে চলে যায় এবং আর কখনো প্রকাশ পায়নি। এটি ছিল আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশ মুবারক উনার প্রভাব।

(৪) একদা এক আজমী অনারব ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ আসে এবং আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খোঁজ-খবর নিতে থাকে। কেউ বলে দেয় যে, তিনি হয়তো কোথাও শুয়ে আছেন। আগত লোকটি কিছুদূর গিয়ে দেখতে পায় আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এক গাছের ছায়ায় তলোয়ারটি মস্তকের নিচে দিয়ে মাটিতে শুয়ে আছেন। সে মনে মনে ভাবতে থাকে, এই লোকটির জন্য সারা দুনিয়ায় ফিতনা হচ্ছে- উনাকে শহীদ করাটা সহজ একথা ভেবে সে তরবারী বের করে। হঠাৎ দেখতে পায় দুটি সিংহ তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজমী চিৎকার করতে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জাগ্রত হয়ে যান এবং আজমী পুরো ঘটনা বর্ণনা করে এবং সে সেখানেই মুসলমান হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

(৫) আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র খিলাফত আমলে একবার ভূমিকম্প হয় এবং পুনঃ পুনঃ প্রকম্পিত হতে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হামদ শরীফ ও পবিত্র ছানা শরীফ পাঠ করার পর যমীনে দোররা মারেন এবং বলেন স্থিত হয়ে যাও। আমি কি তোমার প্রতি ইনসাফ করিনি? একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্প বন্ধ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

(৬) আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন, সেদিন গায়েবী থেকে দুটি কবিতা শরীফ শ্রুত হয়। কিন্তু কবিতা শরীফ আবৃত্তিকারীকে দেখা যায়নি। কবিতা শরীফ দুটির মর্ম হচ্ছে এই, “পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার উপর কেউ ক্রন্দন করতে চাইলে সে ক্রন্দন করুক, বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি লোকেরা ধ্বংসের পানে উপনীত হয়েছে। দুনিয়া হতে কল্যাণ দূরে সরে গিয়েছে এবং ভালো লোকেরা দুনিয়ায় দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে কাছীর, আল-বিদায়া

আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস উনাদের মুহব্বতে ইমামে আ'যম রহমতুল্লাহি আলাইহি

 


ইমামুল আ’যম, হাকিমুল হাদীছ হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারক-এর একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
একবার তিনি একস্থানে বসে স্বীয় ছাত্রদেরকে দর্স( তালিম) দিচ্ছিলেন। দর্স ( তালিম) প্রদানরত অবস্থায় তিনি কিছুক্ষণ পর পরই দর্স ( তালিম)বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন। যখন দর্স ( তালিম) শেষ হলো, তখন ছাত্ররা প্রশ্ন করলো, “হে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি! বেয়াদবী ক্ষমা করবেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আপনি বারবার দর্স ( তালিম) বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন, এর পিছনে কি কারণ রয়েছে?
উত্তরে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন যে
, “তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে, আমাদের দরসগাহের পাশেই কিছু ছোট ছেলেরা দৌড়াদৌড়ি করছিলো। তন্মধ্যে অমুক ছেলেটি বার বার আমার নিকটবর্তী হলেই আমি দাঁড়িয়ে যেতাম।”
ছাত্ররা জানতে চাইলো, সেই ছোট ছেলেটি আপনার নিকটবর্তী হলে কেনো দাঁড়িয়ে যেতেন?
 তখন ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন যে, “দেখ, সেই ছেলেটি আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর। উনার সাথে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক-উনার সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য যখনই তিনি আমাদের দর্সগাহের নিকটবর্তী হয়েছেন তখনই আমি উনার সম্মানার্থে দাঁড়িয়েছি। কেননা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম ও সম্মান প্রদর্শন করা ঈমানের অঙ্গ তথা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ।
” সুবহানাল্লাহ!

হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মালাউন ইবলিশ শয়তান ।

 হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে মালাঊন ইবলিশ শয়তানের কথোপকথন:-



 হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একবার মালাঊন ইবলিশ শয়তান নেক সূরতে এসে বললো যে, হুযুর আপনি যা খুশী তা করতে পারেন। আল্লাহ পাক আপনার উপরে অনেক সন্তুষ্ট। তিনি আপনার জন্য সব হালাল করে দিয়েছেন।
হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি পাঠ করলেন "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনি রজীম"। পাঠের সাথে সাথে মালাঊন  ইবলিশ তার আসল সুরতে এসে এক লাফে দূরে সরে গেলো। বললো আমি এমন কত পীর-আউলিয়া-সুফী-দরবেশ-মুজাদ্দিদকে পথভ্রষ্ট করে দিয়েছি। আজকে আপনি আপনার ইলমের জন্য বেঁচে গেলেন। তখন বড়পীর সাহেব আবার পাঠ করলেন "লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ"। তখন মালাঊন ইবিলশ সম্পূর্ন অদৃশ্য হয়ে গেলো।

মালাঊন ইবিলশের ধোঁকা বোঝা অনেক কঠিন। আল্লাহ পাক মদদ না করলে কেউ তার ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারবে না। আল্লাহ পাক আমাদেরকে ইবলিশের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সব ধোঁকা থেকে সব সময় হিফাজত রাখেন। 

আমীন!

শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১

জমিনের কাছে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার চিঠি মুবারক

 একদিন এক মহিলা ছুটে এসে আরজ করতে লাগল, হে আমীরুল মু'মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম !আমার হাত থেকে এক শিশি তৈল হঠাৎ মাটি তে পড়ে যায়। আর মাটিও সাথে সাথে তা চুষে নেয়।এখন আপনার কাছে আমার আরজ,আমি আমার তৈল ফেরত চাই। অত পর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি একটি কাগজের টুকরা হাতে নিয়ে তাতে কি যেন লিখলেন,লিখার পর তা ভাঁঝ করে ওই মহিলাটির হাতে দিলেন। এবং বললেন,যান তৈলের শিশি টি যেখানে পড়ে ছিল ঐখানে এ কাগজ টা ফেলে দিন। মহিলা টি ও তাই করল। সাথে সাথে জমিন ওই মহিলার তৈল তার থেকে বের করে দিল, এর পর মহিলাটি তার তৈলের শিশিটি ও পূর্ণ করে নিল,অতঃপর কৌতূহলি হয়ে মহিলাটি ঐ কাগজ আবার হাতে তুলে নিলেন, এবং দেখতে লাগলেন, যে আমীরুল মু'মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম !এই কাগজে কী এমন লিখেছিলেন! যে মাটি তৈল গুলো ভক্ষণ করে আবার বের করে দিল। অতঃপর মহিলাটি দেখলেন, ঐ কাগজে আমীরুল মু'মিনীন  সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম  লিখেছিলেন যে, "হে জমিন এই মহিলাটির তৈল গুলো বের করে দাও যা তুমি ভক্ষণ করেছ,নইলে তোমার মাঝে একজন বেনামাযী কে দাফন করে দিব।দেখুন!বেনামাযী কে জমিন পর্যন্ত ভয় পায়,ঘৃণা করে, জমিন পর্যন্ত গ্রহণ করতে চায় না, যারা নামায পড়েনা !তাদের কি অবস্থা হবে???

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে ৫ ওয়াক্ত নামায জামাত সহকারে আদায় করার তৌফিক দান করুন 


 আমীন..।

হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জানাযার ঘটনা

হযরত খাজা কুতুবুদ্দীনবখতিয়ার কাকী  রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জানাযার ঘটনাঃ-



হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকাল করলেন! উনার জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য পঙ্গপালের মতো ছুটে এলো বহু মানুষ.! বিশাল মাঠে জানাযার আয়োজন করা হলো.! জনসমুদ্রে পরিণত হলো মাঠ, জানাযার সময় হলে একজন ঘোষক ঘোষণা করলেন,হযরত খাজা বখতিয়ার কাকী  রহমতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকালের পূর্বে আমাকে ওসিয়ত করে গেছেন, যার মাঝে চারটি গুণ থাকবে তিনি যেন হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জানাযা পড়ান.!

গুণ চারটি হলোঃ-

১/ যার জীবনে কোনদিন তাকবীরে উলা ছোটেনি.!

২/ যার কোনদিন তাহাজ্জুদ কাযা হয়নি.!

৩/ যে কোনদিন গায়রে মাহরামের দিকে বদনজরে তাকাননি.!

৪/ এমন ইবাদতগুযার, যার কোনদিন আসরের সুন্নতও ছোটেনি.!

একথা শোনার পর পুরো মাঠে নিরবতা ছেয়ে গেলো, সবাই নিস্তব্ধ.! কে আছেন এমন? এভাবেই কেটে গেলো বেশ কিছুক্ষণ, এরপর ভীড় ঠেলে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এলেন একজন, সবার দৃষ্টি তাঁর দিকে, ধীরে ধীরে জানাযার দিকে এগিয়ে এলেন।    লাশের মুখ থেকে চাদর সরিয়ে বললেন, কুতুবুদ্দীন( রহমতুল্লাহি আলাইহি) ! তুমি নিজে তো চলে গেলে কিন্তু আমাকেও অপদস্ত করে গেলে.! তারপর তিনি জনসম্মুখে আল্লাহ তা‘য়ালাকে সাক্ষী রেখে কসম খেয়ে বললেন, আমার মাঝে এই চারটি গুণ আছে.! জনতা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো. আরে ! ইনি কে? তিনি আর কেউ নয়, তিনি হলেন তৎকালীন বাদশাহ শামসুদ্দীন আল তামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি !সুবহানাল্লাহ!!

একজন বাদশাহ যদি নিজের সকল ব্যস্ততা সত্বেও এমন আবেদের জীবন যাপন করতে পারেন.! তাহলে আমরা যারা বিভিন্ন চাকরি বা ব্যবসা কিংবা অন্য কোন পেশায় নিয়োজিত, আমরা কি পারি না.? এভাবে নিজেকে ইবাদতে ব্যস্ত রাখতে?

হে আল্লাহ!!আমাদের সবাইকে বেশী বেশী ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।  

আমীন।

পিতা ও মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব -কর্তব্য

 

পিতা ও মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব -কর্তব্য ----০২



বনী ইস্রাইল আমলে এক লোক ছিল খুব ধার্মিক। খুব নেককার পরহেজগার। এক কথায় সে লোকটা ছিল মশহুর ধার্মিক আল্লাহ্ওয়ালা। কিন্তু সে ঋণগ্রস্থ হয়ে যায়, কোন কারণে। কিন্তু সে ঋণগ্রস্থ হওয়ার কথা ছিলনা। তার মাত্র একটা ছেলে ছিল। আর কোন আল আওলাদ বা ওয়ারিস তার কেউ ছিলনা। কোন কারণে হঠাৎ সে যখন ঋণগ্রস্থ হয়ে যায় তখন তার বয়সও অনেক হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ তার মৃত্যুর সময় প্রায় নিকটবর্তী। সে তখন তার সে সন্তানকে ডেকে বললো, ‘দেখ বাবা আমার তো অনেক সম্পদ রয়েছে সত্যিই, তবে ঋণও অনেক রয়েছে।’

ছেলেটাও ছিল আল্লাহ্ওয়ালা। পিতা বলল, ‘তুমি যেহেতু আমার ছেলে আমি তোমাকে কয়েকটা শপথ করিয়ে যাচ্ছি, তুমি এগুলো স্মরণ রাখবে। এক নাম্বার হচ্ছে তুমি কখনই ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, সত্য হোক, মিথ্যা হোক কসম কাটবেনা অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক উনার নামে কখনই কসম করবেনা ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক সত্য-মিথ্যা যেটাই হোকনা কেন কসম করবেনা।

আর দুই নাম্বার হচ্ছে, যেহেতু তুমি ছাড়া আমার আর কোন আওলাদ নেই। আমার সম্পত্তি অনেক রয়েছে, যে সম্পদ রয়েছে তুমি বসে খেলেও খেতে পারবে কিন্তু আমার অনেক ঋণও রয়েছে। আমার ঋণ হয়তো পরিশোধ করতে গেলে সম্পদ নাও থাকতে পারে। তবে তুমি কমপক্ষে আমার পক্ষ হয়ে আমার সন্তান হিসেবে আমার ঋণগুলি পরিশোধ করে দিবে। হয়তো তোমার অসুবিধা হবে, আল্লাহ্ পাক তোমাকে হিফাযত করবেন ও সুখ-শান্তি দান করবেন।’

সেই ধার্মিক পিতা তার সন্তানকে বললো যে, ‘তুমি আমার ঋণগুলি পরিশোধ করে দিও। যদিও তোমার কষ্ট হবে তথাপিও আর আমি তোমার জন্য দোয়া করতেছি, আল্লাহ্ পাক তোমাকে হিফাযত করবেন এবং ইহকাল ও পরকালে সুখ-শান্তি দান করুন।’ তখন সে সন্তান রাজি হলো।
এদিকে তার পিতা ইন্তেকাল করলো। সারা এলাকার লোক সেটা জেনে গেল যে, সে লোক ইন্তেকাল করেছে। তার ঋণের জিম্মাদার হয়েছে তার সন্তান। তখন পর্যায়ক্রমে লোক আসতে লাগলো। ঋণ সে দিতে লাগলো।

তার যা সম্পত্তি ছিল ধন-দৌলত টাকা পয়সা সব দেয়া হয়ে গেল, জায়গা-জমীন বিক্রি করে শোধ করলো। শেষ পর্যন্ত সে, যে বাড়িতে ছিল সেটাও বিক্রী করে তার ঋণ পরিশোধ করতে হলো। তার সম্পদও শেষ হয়ে গেল, তার ঋণও পরিশোধ হয়ে গেল। এখন থাকার মত তার কোন জায়গা সেখানে ছিলনা এবং কাজ করার মত তার তেমন কোন যোগ্যতাও ছিলনা।
সে এখন মনে মনে চিন্তা করলো তার স্ত্রী এবং তার দুই ছেলে রয়েছে। তাদের নিয়ে সে কি করবে এখন? কারণ কোন কাজ করবে সে? পরিশ্রম করেনি কোন সময়। কোন কাজ সে জানেনা, সে কি করে কাজ করবে! সে তখন তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করল যে আমরা এখান থেকে দূরে কোথাও চলে যাই, যেখানে আমাদেরকে কেউ চিনবেনা। সেখানে গিয়ে আমরা যেটা ইচ্ছা সেটা করতে পারবো।

এখানে কোন কাজ করতে গেলে বা কিছু করতে গেলে মানুষ হয়তো অনেক কিছু মনে করবে, নানান কিছু বলবে। আর বিশেষ করে তার পিতার সম্মানের খাতিরে। আমার পিতাকে মানুষ খারাপ বলবে যে, সন্তানকে সে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে গেছে। আমার পিতাকে খারাপ গালি-গালাজ করবে। অশ্লীল, অশালীন কথা-বার্তা বলবে। কাজেই সেটা আমার পক্ষে বরদাশ্ত করা সম্ভব হবেনা। কাজেই আমি এখান থেকে চলে যাবো। স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে সে রওয়ানা হলো, অনেক দূর চলে যাওয়ার জন্য। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা নদী পড়লো। বড় এক নদী।

তারা নৌকায় চড়লো। নৌকায় চড়ে কিছুদূর যাওয়ার পর মধ্য নদীতে যাওয়ার পর হঠাৎ তুফান উঠলো। ছিল রাত্রিবেলা, তুফানে সমস্ত নৌকা ছিন্নভিন্ন করে দিল, তছনছ করে দিল। তারা কোথায় কে চলে গেল কোন চিহ্ন রইলোনা। প্রত্যেকেই জুদা হয়ে গেল। কারো খবর কারো কাছে পৌঁছলোনা, কোথায় কে অবস্থান করতেছে।
সেই যে লোকটা বা ছেলেটা যে নেক সন্তান, সে নিরিবিলি এক জঙ্গলের কিনারে গিয়ে উঠলো। অর্থাৎ যখন তার হুঁশ ফিরে আসলো, সে দেখলো যে, সে জঙ্গলের পাশে পড়ে রয়েছে। সে উঠলো, উঠে চিন্তা করলো এখন কি করা যেতে পারে?

নির্জন, লোকজন নেই, ভয়ও করছে। স্মরণ হলো তার স্ত্রীর কথা, তার ছেলেদের কথা। কিন্তু স্মরণ হলেও তো করার কিছু নেই। কেউই নেই সেখানে, একলা সে নদীর পাড়ে, জঙ্গলের পার্শ্বে। সে রওয়ানা হয়েছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কোথায় যাবে? রাস্তা নেই, ঘাট নেই, ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল। হঠাৎ একটা নেদা হলো, হে নেক সন্তান! পিতা-মাতার অনুগত সন্তান, তুমি সামনে অগ্রসর হও।

তোমার জন্য আল্লাহ্ পাক এখানে কিছু ধন ভান্ডার রেখেছেন। তুমি সেটা গ্রহণ কর এবং ব্যবহার কর। আল্লাহ্ পাক উনার নির্দেশে সে সামনে অগ্রসর হলো। হওয়ার পর সত্যিই একটা ধন ভান্ডার সে পেল। এখন সে এটা কি করবে? আল্লাহ্ পাক উনার ইচ্ছা, কিছু লোক কোথা থেকে সেখানে এসে পৌঁছল। পৌঁছার পর সে তাদের সহিত ভাল ব্যবহার করলো এবং সে উক্ত লোকদের মাধ্যমে আর কিছু লোক আনালো। যেহেতু তার টাকা-পয়সা ছিল, তাই সে কিছু কাজ-কাম করালো, ঘর-বাড়ী তৈরী করলো এবং অনেক দান-খয়রাতও সে করলো। আস্তে আস্তে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়লো সারা এলাকাতে।

নদীর এপাশ-ওপাশ সব পাশেই গিয়ে সে সংবাদ পৌঁছলো। লোকজন আসতে থাকলো তার সাথে সাক্ষাতের জন্য, দানশীলতার জন্য। কাউকে সে ফিরিয়ে দেয় না। কম বেশী দান করে, মেহমানদারী করে, জায়গা বিশেষ লোকদেরকে থাকারও ব্যবস্থা সে করে দেয়। এভাবে তারা চলতে লাগলো। কয়েক বছর অতিবাহিত হয়ে গেল।
হঠাৎ একটা ছেলে আসলো তার এখানে থাকার জন্য। সে তাকে কাজ দিলো। মূলতঃ সেটা ছিল তারই বড় ছেলে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানের কারণে সন্তান পিতাকে চিনতে পারেনি, পিতাও সন্তানকে চিনতে পারেনি। তাকে কাজ দিয়ে রেখে দিলো। যেহেতু তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল সারা এলাকায়। তার দ্বিতীয় ছেলে যেখানে ছিল, সে জায়গায় এক লোকের অধীনে থাকা অবস্থায়ই সে এই লোকের সংবাদ শুনে যে, সে খুব দানশীল এবং সে মানুষের সঙ্গে সৎ ব্যবহার করে। তা শুনে সেও পর্যায়ক্রমে সেখানে আসলো এবং চাকরি নিল এখানে এসে। বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হলো।
সেই লোকের যে স্ত্রী ছিল সেও ভাসতে ভাসতে এক এলাকায় গিয়ে পৌঁছেছিল। সে এমন এক লোকের বাড়ীর পাশে গিয়ে পৌঁছল, যে লোকটা ছিল নেককার, দ্বীনদার, পরহেজগার, আল্লাহ্ওয়ালা। সে সকালে যখন সেই মহিলাকে দেখলো তখন চিন্তা করলো, কোথা থেকে এই বেগানা মহিলা এখানে আসলো? পরে তারা বুঝতে পারলো, নৌকা ভেঙ্গে এখানে এসেছে। তাই সেই লোকটা মহিলাকে আশ্রয় দিল এবং কয়েক বছর ওখানে রাখলো।

যখন নেককার লোকটি সংবাদ পেলো, একজন লোক, সে খুব দানশীল, গরীবকে সাহায্য করে থাকে। তখন সেই নেককার লোকটা যার অবস্থা মোটামুটি ছিল সে বললো, “আমি আর কতদিন তোমাকে লালন-পালন করবো? তুমি এক কাজ করো, আমার সাথে চল, সেই নেককার লোকের কাছে তোমাকে পৌঁছে দেই, সে তোমার একটা ব্যবস্থা করে দিবে। অথবা তার কাছে সাহায্য নিয়ে আসি, তোমার চলাচলের জন্য যেন সুবিধা হয়।” এই বলে সেই মহিলাকে সে নিয়ে আসলো এক নৌকা দিয়ে। এনে তার ঘাটে বেঁধে সেই দানশীল লোকের কাছে সে পরামর্শ করলো কি করা যেতে পারে? সে কিছু দান-খয়রাত করলো। রাত্র অনেক হয়ে গেল। সে দানশীল ব্যক্তি বললো, তুমি এত রাত্রে যাবে কোথায়? তুমি থাক, তোমার থাকার এবং খাওয়ার ব্যবস্থা আমি করবো। তখন সে বললো যে, ‘আমি তো একা নই, আমার সাথে আমার নৌকাতে একজন মহিলা রয়েছেন। যার জন্য আমি তোমার এই দান খয়রাত গুলো গ্রহণ করেছি। সে অভাবগ্রস্থা। ‘তখন সেই পুরুষ বললো’ তাহলে এক কাজ করো। তাকে পাহারা দেয়ার জন্য আমি লোক দিচ্ছি।

তুমি চিন্তা কর না। পাহারা দেয়ার জন্য লোক দিলো, সেই ছেলে দু’টাকে দিল পাহারা দেয়ার জন্য।
সেই ছেলে দু’টা এখানে এসে সৎচরিত্র বান, নেককার, পরহেজগার, দ্বীনদার এবং তাদের সততায় তারা এখানে মোটামুটি পরিচিতি লাভ করে নেককার হিসেবে। যেহেতু তারা সৎচরিত্রবান ছিল সে জন্য সেই ছেলে দু’টাকে পাহারা দেয়ার জন্য দেয়া হলো, সেই নৌকার পাশে যখন তারা গিয়ে পৌঁছল, তখন তারা পরস্পর বললো যে, “আজকে রাত্রে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কি করবো সারা রাত্রে? করার তো কিছু নেই। এক কাজ কর তুমি কোথা থেকে এখানে আসলে? আর আমি বা কোথা থেকে আসলাম? আমরা পরস্পর আমাদের পিছনের জীবনের কথা আলোচনা করি, তাতে রাত্র শেষ হয়ে যাবে।”

তখন প্রথম যে ছেলেটা সেখানে এসেছে, সে তার ইতিহাস বর্ণনা করলো যে, “আমরা এরকম ছিলাম, খুব সুখে ছিলাম, শান্তিতে ছিলাম। আমার পিতা, আমার এক ভাই, আমার মা ছিলেন কিন্তু হঠাৎ আমরা, আমার দাদার ঋণ পরিশোধ করে শেষ পর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে যাই, সম্বলহীন হয়ে যাই। তখন আমরা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার জন্য নৌকায় চড়েছিলাম, নৌকা ভেঙ্গে আমরা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাই। কে কোথায় গিয়েছি? তার সংবাদ আমাদের জানা নেই, আমারটা আমিই জানি।
যখন প্রথম ছেলে একথা বললো, তখন দ্বিতীয় ছেলেটা বললো, তোমার পিতার নাম কি? সে জবাব দিল। তখন সেই ছেলেটা বললো যে, দেখ তুমি তোমার যে ভাইকে তালাশ করতেছিলে আমি মনে হয় তোমার সেই ভাই। আমার জীবনের ঠিক একই ঘটনা। আমরা দুই ভাই ছিলাম এবং হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখন তাদের পরিচয় হয়ে গেল।

সেই মহিলা নৌকায় বসে বসে সেই ঘটনা শুনলো, শুনে সে চুপ করে রইলো, কথা সে বললো না। সকালে যখন সে পুরুষ আসলো, সে তাকে দেখলো বিমর্ষ, চিন্তিত। কি ব্যাপার? সে বললো, এখানে কথা বলা যাবে না, এখানকার এলাকার যিনি মালিক, ওনার কাছে যেতে হবে। ওনার কাছে আমার কিছু কথা রয়েছে, আমি বললে হয়তো তারা (ছেলেরা) শুনবে না। ঠিক আছে সেই লোক অপারগ হয়ে সেই মহিলাকে নিয়ে গেল সেই লোকের কাছে। সে বলল কি? কেন নিয়ে এসেছ? জবাব দিল, সে মহিলার কিছু কথা রয়েছে।

লোকটা প্রথমে একটু উত্তেজিত হয়ে গেল। কি ব্যাপার? কোন অঘটন কি ঘটিয়েছে তারা? সে মহিলা বললো যে, না ‘তেমন কিছু ঘটেনি।’ যেহেতু তার চেহারা আবৃত করা ছিল। তার চেহারা দেখা যাচ্ছিলনা। “তবে গত রাত্রে তারা একটা গল্প বলেছিল, সে গল্পটা আমি আবার শুনতে চাই। তারা যেন আবার বলে।

ছেলে দু’টোকে ডাকানো হলো। ডেকে বলা হলো যে, তারা যে গত রাত্রে কাহিনী বলেছে, সেটা আবার বলতো। পুনরায় সেই কাহিনী যখন সেই ছেলে দু’টা বলল, তখন সেই লোকটা তার আসন থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললো যে, সত্যিই যদি এই ঘটনা সত্যই হয়ে থাকে তাহলে তো তোমরাই আমার সন্তান। আমি তোমাদের পিতা। যখন সে পরিচয় দিল, তখন সেই মহিলা বললো যে, ‘আল্লাহ্ পাক উনার কসম আমি-ই তাদের মাতা।’

যেই ঘটনা বাস্তব সত্য, সেটা তাদের মুখ দিয়ে আবার শুনার জন্য আমি বলেছি তাদের বলার জন্য। অন্য কোন কারণে নয়। তখন পরিচয় হয়ে গেল। তারা আবার পরস্পর সেখানে সুখে শান্তিতে থাকতে লাগলো। তাদের প্রতি গায়েবী নেদা হলো ঐ ছেলের প্রতি, যে ছেলে তার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল যে, “তুমি তোমার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলে, কষ্ট করেছ। আল্লাহ্ পাক তোমাকে তার বদলা, জাযা-খায়ের দিয়েছেন। তোমাকে ইহকালে সুখ দেয়া হলো এবং পরকালে তোমার জন্য সুখ অপেক্ষা করতে থাকলো

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফের সময় সমস্ত ঘর এমনকি বাছরা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যায় ।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফের সময় সমস্ত ঘর এমনকি বাছরা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যায় ।

এ প্রসঙ্গে সুপ্রসিদ্ধ হাদিস বিশারদ আল্লামা মুহম্মদ আব্দুর রউফ মানাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার মশহুর " ফয়জুল ক্বাদীর শরহে জামিউছ ছগীর " কিতাবের ৩য় খন্ড ৭৬৮ পৃ: তে উল্লেখ করেন,

" হযরত আবুল উজাফা হতে বর্নিত, সাইয়্যিদুল মুরছালিন, ইমামুল মুরছালিন, নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুবারক জবানে ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পবিত্র বিলাদত শরীফের সময় আমার সম্মানিত মাতা ( হযরত আম্মাজান আমিনা আলাইহাস সালাম ) দেখেন যে একখানা" নুর মুবারক" তাঁর থেকে আলাদা হয়ে বাছরা শহরের দালান - কোঠা সমূহ আলোকিত করে ফেলেছে ।" সুবহানাল্লাহ্ ।

ফ্বকীহুল মিল্লাত, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, শাঈখুল ওলামা, আশেকে রসুল আল্লামা আহমদ আব্দুর রহমান আল বান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত " বুলুগুল আমানী" কিতাবের ২০তম খন্ড, ১৮৩ পৃ: তে উল্লেখ করেন,

" হযরত উসমান ইবনে আবিল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, যে রাত্রে নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র বিলাদত শরীফ লাভ করেন সেই সময়ে আমার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট উপস্থিত ছিলেন ।তিনি বলেন, সে রাত্রে আমি ঘরের ভিতর নুর ব্যতীত কিছুই দেখেনি ।" সুবহানাল্লাহ্ ।

অন্য কোন আদম সন্তান জন্মগ্রহণ করার সময় এরুপ ঘটনা ঘটেছে কি? যদি না ঘটে থাকে, তবে নুর নবীজি  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 


আপনার আমার মতো হলেন কি করে?

কাফিল পাদ্রির ঘটনা


 




হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সময়ে কাফিল নামে এক পাদ্রি ছিলো। যে পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার অনুলিপি তৈরির কাজ করতো। একদিন সে লক্ষ্য করলো, গোটা তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক থেকে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক বেশি আলোচিত হয়েছে। তার মনে হিংসা ও বিদ্বেষ জাগলো। সে মনে মনে ভাবলো, আমাদের নবী হলেন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলেন। উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নবী আর কে হতে পারেন? এ চিন্তা মাথায় আসতেই সে গোটা পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্য থেকে লাল কালি দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক কেটে দিলো। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! ওই রাতেই সে গুঁই সাপে পরিণত হলো। এই অবস্থায় যদি কেউ দেখে তাহলে সত্যি গুঁই সাপ ভেবে হয়তো তাকে মেরে ফেলবে, তাই সে তাড়াতাড়ি পাহাড়ের গুহায় যেয়ে আশ্রয় নিলো। ওই গুহার পাশ দিয়েই হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তুর পাহাড়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা মুবারক বলতে যেতেন। এদিকে কাফিল পাদ্রিকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেছে। এমনি সময় হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তুর পাহাড়ে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে উনার সামনে গুঁই সাপের আকৃতিতে কাফিল পাদ্রি এসে তার পরিচয় দিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক কেটে ফেলার মত জঘন্য ও চরম বেয়াদবীর ঘটনা খুলে বললো। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কাছে আরজি করলো, তিনি যেন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তার ক্ষমার জন্য সুপারিশ করেন।

গুঁই সাপের আকৃতি ধারণকারী কাফিল পাদ্রির বারবার আরজির কারণে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কাফিল পাদ্রির বিষয়ে জানালেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করা হবে না। তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আয় বারে ইলাহী! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো অনেক বছর পর দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক আনবেন। তাই আপনি দয়া করে সেই পর্যন্ত কাফিল পাদ্রির হায়াত বাড়িয়ে দিন, যাতে সে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দোয়া কবুল করে কাফিল পাদ্রির হায়াত বাড়িয়ে দিলেন। অতঃপর গুঁই সাপটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্ধানে মিশরের সেই তুর পর্বতের পাদদেশ থেকে সুদীর্ঘ সময় ধরে হেঁটে হেঁটে এক সময় কা’বা শরীফ উনার পূর্ব পাশে অবস্থিত আবু কোবায়েছ পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে অপেক্ষা করছিল। যথাসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক আনলেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি উনার নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ করলেন।

একদা দুপুরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করছিলেন। এ সুযোগে কাফিল গুঁই সাপ পাহাড়ের গুহা থেকে আস্তে আস্তে নেমে ক্ষমা লাভের আশায় আবু জাহিলের বাড়ির সামনে দিয়ে রওয়ানা দিলো। পথিমধ্যে হঠাৎ আবু জাহিলের সামনে পড়ে গেলো কাফিল গুঁই সাপ। আবু জাহিল এটিকে সত্যি গুঁই সাপ মনে করে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেললো। অতঃপর এটিকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে ওই ছাই একটি রুমালে নিয়ে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে বললো, হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বলুন তো এর মধ্যে কি রয়েছে? যদি বলতে পারেন তাহলে আমি মুসলমান হবো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি না বলে যদি ওই রুমালে যা আছে সেই বলে দেয় এবং আমার নুবুওওয়াত মুবারক উনার সাক্ষ্য দেয় তাতে কি তুমি মুসলমান হবে? আবু জাহিল অকপটে বললো, হ্যাঁ। তাহলে তো মুসলমান হবোই। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রুমালে বাঁধা ছাইকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, কুম বিইযনিল্লাহি ইয়া কাফিল! সাথে সাথে কাফিল জিন্দা হয়ে রুমাল থেকে লাফ দিয়ে যমীনে পড়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারক-এ ক্ষমা চাইতে লাগলো এবং কালীমা শরীফ পাঠ করলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”। আবু জাহিল ভয়ে দৌড়ে দূরে গিয়ে বলতে লাগলো, আপনার মতো যাদুকর আমাদের দেশে আর একজনও নেই। নাউযুবিল্লাহ! উক্ত কাফিল পাদ্রী নিজ অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে নাজাত পেয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে তা’বীয ও ঝাড়-ফুঁক

 বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত যে, তিনি তা’বীয ব্যবহার করা জায়িয বলেন এই শর্তে যে, যদি তা ইরাকী গণকদের মত পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার বিপরীত অপছন্দনীয় কিছু দ্বারা না হয়। যদি পবিত্র কুরআন মাজীদ দ্বারা তাবীয লটকিয়ে অথবা না লটকিয়ে বা ঝাড়-ফুঁক করে রোগ-মুক্তি চাওয়া হয়, তাহলে এমনটি শিরক হবে না।


সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন রহমাতুল্লিল আলামীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

‘যে ব্যক্তি কিছু লটকায় তাকে তার প্রতি সোপর্দ করা হয়।’

অর্থাৎ যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ উনার দ্বারা তা’বীয বানিয়ে গলায় লটকায় এই বিশ্বাসে যে, যার নিয়ন্ত্রণকারী মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই এবং তার ভরসা মহান আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোন গাইরুল্লাহ-র দিকে থাকবে না, তাহলে তা জায়িয। কেননা, এখানে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার রহমত পাওয়াই মুল কাম্য বিষয়। আর তাওয়াক্কুলকারী পবিত্র কুরআন মাজীদ দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কাছেই তাওয়াক্কুল কামনা করে থাকে।

হযরত সাইল ইবনে মুসাইয়্যিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, গলায় তা’বীয ব্যবহার করা কেমন? তিনি জাওয়াবে বললেন:

যদিও তা বাঁশ বেত হাড় ছিদ্র করে হোক অথবা কাগজ বা কাপড়ের টুকরা দ্বারা ব্যবহার করা হোক, এমন তা’বীয ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ তা জায়িয। আর ইহা লেখা হবে পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার থেকেই।

হযরত দ্বহহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন:

কোন ব্যক্তি যদি পবিত্র কিতাবুল্লাহ অর্থাৎ পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার থেকেই তাবীয বানিয়ে ব্যবহার করে তাহলে ব্যবহার করাতে নাজায়িয হবে না। তবে শর্ত হলো ইহা জিমা’ বা আহলিয়ার সাথে একান্ত অবস্থানের সময় এবং ইস্তিন্জা করার সময় খুলে রাখতে হবে। হযরত আবূ জা’ফর মুহাম্মাদ বিন আলী আলাইহিস সালাম তিনি শিশুদের গলায় তা’বীয ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। আর হযরত ইবনু সীরীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার থেকে তা’বীয তৈরি করে মানুষ কর্তৃক ব্যবহার করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা জারী করেননি।’


হযরত আবূ বকর আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আবী শায়বাহ ঈসা কূফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘আল-মুছান্নিফ লিইবনি আবী শায়বাহ’ নামক হাদীছ শরীফ উনার প্রাচীন ও ছহীহ কিতাব উনার ‘কিতাবুত তিব্ব’ উনার মধ্যে তা’বীয জায়িয হওয়ার পক্ষে অনেকগুলো হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে। যা উল্লেখ করা হলো:


۲۱- مَنْ رخَّصَ فِي تعلِيقِ التَّعَاوِيذِ:


عَنْ ابِى عِصْمَةَ رحمة الله عليه قَالَ: سَالْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ رحمة الله عليه عَنِ التَّعْوِيذِ؟ فَقَالَ: لاَ بَأْسَ بِه اِذَا كَانَ فِى ادِيمٍ.


অর্থ: “২১ নং পরিচ্ছেদ- তা’বীয ঝুলানো বা ব্যবহার করতে যাঁরা অনুমতি দিয়েছেন প্রসঙ্গে:


(১) হযরত আবূ ইছমাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমি বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তা’বীযের বিধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জাওয়াবে বললেন: তা’বীয ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই, যদি তা চামড়ায় লেখা হয়।


ব্যাখ্যা: এখানে চামড়ার কথা বলা হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে লেখার যোগ্য দ্রব্যাদীতে লেখা। যেমন: কাগজ, গাছের পাতা, পাথর ইত্যাদী।


عَنْ عَطَاءٍ رحمة الله عليه فِى الْحَائِضِ يَكُونُ علَيْهَا التَّعْوِيذُ قَالَ: انْ كَانَ فِى ادِيمٍ فَلْتَنْزِعْهُ، وَ انْ كَانَ فِى قَصَبَةِ فِضَّةٍ فَإِنْ شَاءَتْ وَضَعَتْهُ وَانْ شَاءَتْ لَمْ تَضَعْهُ.


(২) হযরত আত্বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহিলাদের হায়েয অবস্থায় তা’বীয ব্যবহার করা সম্পর্কে বলেন: যদি খোলা চামড়ায় লেখা হয় তাহলে উক্ত মাজুরতা অবস্থায় খুলে রাখতে হবে। কিন্তু যদি খোলের মধ্যে ভরানো থাকে, তাহলে ইচ্ছা হলে খুলে রাখতেও পারে অথবা ইচ্ছা হলে না খুলতেও পারে।


عَنْ ثُوَيْرٍ رحمة الله عليه قَالَ: كَانَ مُجَاهِدٌ رحمة الله عليه يَكْتُبُ للنَّاس التَّعْوِيذَ فَيُعَلِّقُه عَلَيْهِمْ.


(৩) হযরত ছুওয়াইর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মানুষদের জন্য তা’বীয লেখতেন এবং তা তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন।


عَنْ جَعْفَرٍ رحمة الله عليه عَنْ ابِيهِ اَنَّه كَانَ لاَ يَرٰى بَأْسًا اَنْ يَكْتُبَ الْقُرْانَ فِى اَدِيمٍ ثُمَّ يُعَلِّقُه.


(৪) হযরত জা’ফর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি (উনার পিতা) পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ উনার দ্বারা চামড়ার উপর তা’বীয লেখতে অসুবিধা মনে করতেন না এবং তা ব্যবহার করতেন।


عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ رحمة الله عليه عَنْ اَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اِذَا فَزِعَ اَحَدُكُمْ فِى نَوْمِه فَلْيَقُلْ: اَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِه وَسُوءِ عِقَابِهِ وَمِنْ شَرِّ عِبَادِه وَمِنْ شَرِّ الشَّيَاطِينِ وَمَا يَحْضُرُونِ، فَكَانَ عَبْدُ اللهِ رضى الله عنه يُعَلِّمُهَا وَلَدَهُ مَنْ اَدْرَكَ مِنْهُمْ، وَمَنْ لَمْ يُدْرِكْ كَتَبَهَا وَعَلَّقَهَا عَلَيْهِ.


(৫) হযরত আমর বিন শুয়াইব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে, তিনি উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (উনার দাদা) বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঘুমে ভয় পাওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে সে যেন পাঠ করে ‘আয় আল্লাহ তায়ালা! আমি পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা উনার গযব থেকে পানাহ চাই, খারাপ পরিনতি থেকে পানাহ চাই, অসৎ মানুষের অনিষ্টতা থেকে পানাহ চাই, শয়তানদের অনিষ্টতা থেকে পানাহ চাই যারা হাযির হয়।’ হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি উনার সন্তানকে এই দুয়া’ শিক্ষা দিতেন যাঁরা দুয়া’র মর্ম বুঝত, আর যাঁরা দুয়া’ উনার মর্ম বুঝত না তিনি উনাদের জন্য তা লিখে গলায় ঝুলিয়ে দিতেন।


عَنِ ابْنِ سِيرِينَ رحمة الله عليه اَنَّه كَانَ لاَ يَرٰى بَأْسًا بِالشَّيْءِ مِنَ الْقُرْانِ.


(৬) হযরত ইবনু সীরীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ দ্বারা তা’বীয তৈরি করতে কোন অসুবিধা মনে করতেন না।


قَالَ: حدَّثَنَا اَيُّوبُ رحمة الله عليه اَنَّه رَاَى فِى عَضُدِ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رحمة الله عليه خَيْطًا.


(৭) রাবী বলেন, আমরা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছি হযরত আইয়্যূব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি একদা হযরত উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উমর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বাহুতে একটি সুতা বাঁধা দেখলেন।


عَنْ عَطَاءٍ رحمة الله عليه قَالَ لاَ بَأْسَ اَنْ يُعَلَّقَ الْقُرْانُ.


(৮) হযরত আত্বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: পবিত্র কুরআন মাজীদ (অথবা কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ) গলায় লটকানোতে কোন অসুবিধা নেই।


عَنْ يُونُسَ بْنِ خَبَّابٍ رحمة الله عليه قَالَ: سَاَلْتُ اَبَا جَعْفَرٍ رحمة الله عليه عَنِ التَّعْوِيذِ يُعَلَّقُ عَلَى الصِّبْيَانِ؟ فَرَخَّصَ فِيهِ.


(৯) হযরত ইঊনুস বিন খব্বাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমি হযরত আবূ জা’ফর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে শিশুদের গলায় তা’বীয ঝুলানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম? তিনি ইহা ব্যবহারের অনুমতি দিলেন।


عَنِ الضَّحَّاكِ رحمة الله عليه اَنَّه لَمْ يَكُنْ يَرٰى بَأْسًا اَنْ يُعَلِّقَ الرَّجُلُ الشَّيْءَ مِنْ كِتَابِ اللهِ اِذَا وَضَعَه عِنْدَ الْغُسْلِ وَعِنْدَ الْغَائِطِ.


(১০) হযরত দ্বহহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোন ব্যক্তির পক্ষে পবিত্র কিতাবুল্লাহ থেকে আয়াত শরীফ দ্বারা তা’বীয ব্যবহার করতে নাজায়িয মনে করতেন না। যখন তা গোসল ও জরুরত সারার সময় খুলে রাখা হয়।”


ফিক্বহ ও ফতওয়া উনাদের কিতাবেও উল্লেখ আছে, হযরত মুহাম্মাদ বিন আলী বিন মুহাম্মাদ বিন আলী বিন আব্দুর রহমান হাছকাফী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘আদ-দুররুল মুখতার আলা তানবীরিল আবছার’ নামক কিতাব উনার ‘কিতাবুল হাযার ওয়াল ইবাহাহ’ অধ্যায়ের ‘ফাছলুন ফিল্ লুব্স’ পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে-


فِى الْمُجْتَبَى التَّمِيمَةُ الْمَكْرُوهَةُ مَا كَانَ بِغَيْرِ الْعَرَبِيَّةِ


অর্থ: ‘আল-মুজতাবা’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, আরবী ভাষায় না হলে তামীমাহ বা তা’বীয ব্যবহার করা মাকরূহ হবে। আর যদি আরবী ভাষায় হয় তাহলে মাকরূহ হবে না।


হযরত উরওয়াহ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করেন, তখন উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে একজন শিশু কাঁদছিল। উনাকে শিশুটির বদনযর লাগার কথা জানানো হলো। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: বদনযর থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে (শিশুটিকে) কি ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে? হযরত ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমরা এই হাদীছ শরীফ উনাকে গ্রহণ করেছি। আমরা ঝাড়-ফুঁক করাকে অসুবিধা (অবৈধ) মনে করি না, যখন মহান আল্লাহ তায়ালা উনার স্মরনে তা করা হয়। (আল-মুয়াত্তা লিল্ ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাবুর রুক্বা ৩৭৪ পৃষ্ঠা)


অত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘আওজাযুল মাসালিক আলাল মুয়াত্তা লিল্ ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি’ কিতাবের ‘বাবুর রুক্বা’ পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে,


قوله افلا تسترقون له من العين هذا وامثاله مصرح بجواز الرقية. (اوجز المسالك على الموطا للامام مالك رحمة الله عليه(


অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইরশাদ মুবারক (বদনযর থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে কি ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে?) ঝাড়-ফুঁক জায়িয হওয়ার ব্যাপারে ইহা ও এই দৃষ্টান্ত স্পষ্ট। অর্থাৎ ঝাড়-ফুঁক করা ও গ্রহণ করা জায়িয। সুবহানাল্লাহ।


পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে,


عن حضرت انس رضى الله عنه قال رخص رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الرقية من العين والحمة والنملة. (مشكوة المصابيح كتاب الطب والرقى الفصل الاول، صحيح البخارى شريف، صحيح المسلم شريف(


অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: কারো উপর বদনযর লাগলে, কোনো বিষাক্ত প্রাণী দংশন করলে এবং পাঁজরে খুজলি উঠলে নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঝাড়ফুঁক করতে অনুমতি দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)


عن حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت امر النبى صلى الله عليه وسلم ان يسترقى من العين.


অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: কারো উপর বদনযর লাগলে নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঝাড়ফুঁক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল বুখারী শরীফ, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)


عن حضرت ام سلمة عليها السلام ان النبى صلى الله عليه وسلم راى فى بيتها جارية فى وجهها سفعة يعنى صفرة فقال استرقوا لها فان بها النظرة.


অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। একদা নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার (উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার) হুজরা শরীফ উনার মধ্যে একটি মেয়ে দেখতে পেলেন, তার চেহারায় বদনযরের চিহ্ন ছিল। অর্থাৎ চেহারাটি হলুদ বর্ণ ধারণ করেছিল। ইহা দেখে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: তাকে ঝাড়ফুঁক করুন, কেননা তার উপর বদনযর লেগেছে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল বুখারী শরীফ, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)


عن حضرت جابر رضى الله عنه قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الرقى فجاء ال عمرو بن حزم فقالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انه كانت عندنا رقية نرقى بها من العقرب وانت نهيت عن الرقى فعرضوها عليه فقال ما ارى بها بأسا من استطاع منكم ان ينفع اخاه فلينفعه.


অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মন্তর বা ঝাড়ফুঁক করা হতে নিষেধ করেছেন। (এই নিষেধের পর) আমর বিন হাযম-এর বংশের কয়েকজন লোক এসে আরজ করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কাছে এমন একটি মন্তর আছে, যার দ্বারা আমরা বিচ্ছুর দংশনে ঝাড়ফুঁক করে থাকি। অথচ আপনি মন্তর পড়া হতে নিষেধ করেছেন। অতপর উনারা মন্তরটি নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পড়ে শুনালেন। ইহা শুনে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি তো এটার মধ্যে দোষের কিছু দেখছি না। অতএব তোমাদের যে কেউ নিজের কোন ভাইয়ের উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)


عن حضرت عوف بن مالك الاشجعى رضى الله عنه قال كنا نرقى فى الجاهلية فقلنا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف ترى فى ذلك فقال اعرضوا على رقاكم لا بأس بالرقى ما لم يكن فيه شرك.


অর্থ: হযরত আওফ বিন মালিক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: জাহিলী যুগে আমরা মন্তর পড়ে ঝাড়ফুঁক করতাম। সুতরাং (পবিত্র দীন ইসলাম গ্রহণের পর) আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ সমস্ত মন্তর সম্পর্কে আপনার মুবারক ফায়সালা কি? তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: আচ্ছা, আপনাদের মন্তরগুলো আমাকে পড়ে শুনান। (তবে জেনে রাখুন) মন্তর দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে কোন আপত্তি নেই, যদি তার মধ্যে শিরক কিছু না থাকে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)


عن حضرت عمران بن حصين رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا رقية الا من عين او حمة.


অর্থ: হযরত ইমরান ইবনে হুছাঈন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: বদনযর কিংবা কোনো বিষাক্ত প্রাণীর দংশনের বেলায়ই ঝাড়ফুঁক রয়েছে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুছ ছানী, মুসনাদ আহমাদ বিন হাম্বাল, আল-জামিউ ওয়াস সুনানু লিত্ তিরমিযী শরীফ, সুনানু আবী দাঊদ শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ)


তওবা করার ফযীলত

 খালিছভাবে তওবা করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা অত্যন্ত খুশি হন। গুনাহ-খতা ক্ষমা করেন। এমনকি গুনাহগুলোকে নেকীতে পরিণত করে দেন। নৈকট্য দেন, সন্তুষ্টি, রেযামন্দি দেন। মাহবুব বান্দায় পরিণত করেন। আর ওলীআল্লাহগণ উনাদের নিসবত, তাওয়াল্লুক দান করেন। কাজেই একথা অনস্বীকার্য যে, তওবা-ইস্তিগফার দ্বারা সবচেয়ে বেশি নৈকট্য হাছিল হয়। সুবহানাল্লাহ!



‘তওবা’ অর্থ: ফিরে আসা, অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকা, অনুতপ্ত হওয়া।

মুজাদিদ্দে যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মুর্শিদুল আমীন’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “বর্তমানে গুনাহ ছেড়ে দেয়া, ভবিষ্যতে আর গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া এবং অতীত কাজসমূহের ক্ষতিপূরণ করার নামই তওবা।” আর ইস্তিগফার অর্থ হচ্ছে- ক্ষমা প্রার্থনা করা।

হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হে আদম সন্তান! যতক্ষণ তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার ক্ষমার আশা রাখবে ততক্ষণ আমি তোমাকে ক্ষমা করতেই থাকবো। তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কাউকে পরওয়া করি না। সুবহানাল্লাহ! হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশচুম্বী হয়, অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করবো। আমি কারো পরওয়া করি না। সুবহানাল্লাহ! হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার সাক্ষাৎ করো এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করো, তাহলে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হবো।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

রঈসুল মুফাসসিরীন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি সবসময় ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সকল সংকীর্ণতা দূর করে প্রশস্ততা দান করেন। তাকে সমস্ত চিন্তা মুক্ত করে আনন্দিত করেন। আর এমন স্থান হতে রিযিক দান করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। সুবহানাল্লাহ! (আহমদ, আবু দাউদ শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। তবে গুনাহগারদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে তওবা করে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ)

প্রত্যেক মুসলমান উনাদের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- অধিক পরিমাণে প্রতিদিন ইস্তেগফার ও তওবা করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা যেন মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম ও উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানার্থে আমাদেরকে অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার তওবা করার তাওফীক দান করেন। আমীন!

দুনিয়ার মায়া যারা ত্যাগ করতে পেরেছেন তাঁরাই কামিয়াবি হাসিল করতে পেরেছেন

 দুনিয়ার মায়া যারা ত্যাগ করতে পেরেছেন তাঁরাই কামিয়াবি হাসিল করতে পেরেছেন


বলখের 'বাদশাহ' এতো বিলাসবহুল জীবনযাপন করতো যে' প্রতিদিন ঘুমানোর সময় পালঙ্কের চারপাশ কাচা ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিতেন। কাচা ফুলের সুবাস ছাড়া বাদশাহ'র ঘুম হতো না।প্রতি দিনের ন্যায় পালঙ্ক সাজানোর পরেও একদিন বাদশাহ'র ঘুম হচ্ছিল না, বাদশাহ দাসী-বান্দিদের বললেন; নিশ্চই আমার পালঙ্কে আবর্জনা আছে! সবাই তন্নতন্ন করে খুজে একটা চুল পেলো! অর্থাৎ একটি চুল বিছানায় থাকার কারনে বাদশাহ'র ঘুম হয়নি। এতেই অনুমান করা যায়' বাদশাহ কতটা আয়েশি ছিলেন।

বাদশাহ একদিন রাজ্য সফর করার সিদ্ধান্ত নিলেন। উজির-নাজির, প্রহরী ও সফরসঙ্গীদের নিয়ে বাদশাহ সফরে বের হলেন।প্রতিদিনের মতো দাসী বাদশাহ'র পালঙ্ক কাচা ফুল দিয়ে সাজালেন, সুযোগ পেয়ে দাসী চিন্তা করলেন; প্রতিদিন তো বাদশাহ এই আয়েশি বিছানায় ঘুমায়, আজ যেহেতু বাদশাহ সফরে গেছেন; একটু শুয়ে দেখি কেমন আয়েশ! দাসী শোয়ার সাথে সাথে আরামে ঘুমিয়ে গেলো!এদিকে বাদশাহ কিছুদূর যাওয়ার পর সফরসঙ্গীদের বললেন আজ আর যাওয়া হবেনা, চলো ফিরে যাই। বাদশাহ রাজদরবারে ফিরে এলেন, শয়নকক্ষে গিয়ে দেখেন বাদশাহ'র পালঙ্কে দাসী ঘুমিয়ে আছে! বাদশাহ এই কান্ড দেখে রেগে আগুনমুখা হয়ে সেনাপতিকে ডেকে বললেন, দাসীর ঘুম অবস্থায় চাবুক মারতে থাকুন।প্রথম বেত্রাঘাতেই দাসী চিৎকার দিয়ে উঠলেন, অত:পর দাসী বাদশাহ'র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন, কিন্ত বাদশাহ এতবড় অপরাধ কিছুতেই ক্ষমা করতে নারাজ! অবশেষে শাস্তি হিসেবে দাসীকে পঞ্চাশটি বেত্রাঘাত করার হুকুম করেন বাদশাহ!দাসীকে যখন প্রথম বেত্রাঘাত করা হয়, দাসী তখন কান্নার পরিবর্তে হাসছে! বাদশাহ এই কান্ড দেখে ভাবলেন বেত্রাঘাত বোধহয় আস্তে করা হচ্ছে, বাদশাহ আরও সজোরে বেত্রাঘাত করতে নির্দেশ দিলেন! কিন্ত যতো জোড়ে আঘাত করে, দাসী ততোই হাসছে! বাদশাহ আশ্চর্য হয়ে বেত্রাঘাত বন্ধ করতে নির্দেশ দিলেন।যখন বেত্রাঘাত বন্ধ করা হল, দাসী তখন কাঁদতে শুরু করলেন! বাদশাহ আরও আশ্চর্য হলেন।বাদশাহ এবার দাসীর নিকট জানতে চাইলেনঃ তোমাকে আঘাত করা হলে তুমি কান্নার পরিবর্তে হাসছ! আবার আঘাত বন্ধ করা হলে খুশির পরিবর্তে কাঁদছ; এর কারন কি?দাসী উত্তর দিলেনঃ আমি ভুল করে আপনার শাহী বিছানায় ১০ মিনিট ঘুমিয়েছিলাম, তার অপরাধে ৫০ টি বেত্রাঘাত আমার নছিব হয়েছে; এবং কার্যকর হয়েছে, অর্থাৎ আমার অপরাধের শাস্তি এই দুনীয়ায় হয়ে গেলো! তাই আনন্দে হেসেছিলাম।আর যখন আঘাত বন্ধ করা হলো, তখন আপনার কথা ভেবে কেঁদেছি! কারন, আমার যদি ১০ মিনিট এই বিছানায় ঘুমের জন্য ৫০ টি বেত্রাঘাত নছিব হয়, তাহলে আপনি কত বছর এই বিছানায় ঘুমান? কত কোটি বেত্রাঘাত আপনার নছিবে জমা হয়ে আছে! যেহেতু আপনার নুন খাই; সেজন্য আপনার মায়ায় কেঁদেছি।বাদশাহ'র টনক নড়লেন, দাসী তো সত্যি কথাই বলেছে।দাসীকে জিজ্ঞাস করা হল, তুমি কিভাবে এমন কামিয়াবি অর্জন করলে? দাসী বললেন শাহী বিছানায় শুয়ে কেউ আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনা। আমি সারাদিন আপনার রাজদরবারে কাজ করি, আর সারা রাত আল্লাহ্‌র এবাদত করি।বাদশাহ দাসীর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন, দাসীও ক্ষমা করেন।

বলখের বাদশাহ সেইদিন রাজ্য ত্যাগ করে গহীন অরণ্যে চলে যায়। দুনিয়াবি সমস্ত আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করেন, অত:পর কামিয়াবি হাসিল করেন।

মহান আল্লাহতালা আমাদের সঠিক বুজ দান করুক, এবং দুনিয়াবি মিথ্যা আরাম-আয়েশি জীবনযাপন থেকে রাক্ষা করুক এবং সত্য ও ন্যায়পথে পরিচালিত করুক।

আমিন।


হালাল উপার্জন করাও ফরজ ইবাদত

 


যিনি খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন পবিত্র আল কুরআনুল কারীমে ইরশাদ মুবারক করেন,

 یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ

অর্থ মুবারক : " হে মানুষ! জমিনের মধ্যে যে হালাল খাদ্য আমি দিয়েছিম,সেখান থেকে তোমরা খাও । শয়তানের পদানঙ্ক অনুসরণ করো না । শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ।"

(মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পবিত্র সুরা আল বাক্বারা : মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৮)

অন্যত্র যিনি খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলমীন পবিত্র আল কুরআনুল কারীমে ঈমানদারদের জন্য ইরশাদ মুবারক করেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ 

অর্থ মুবারক : " হে ঈমানদাররা! আমি তোমাদের যে হালাল খাদ্য দিয়েছি, সেখান থেকে তোমরা খাদ্য গ্রহণ করো এবং যিনি খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন - এর শুকরিয়া আদায় করো । যদি সত্যিকারে মহান আল্লাহ পাক - উনার ইবাদত বন্দেগী করে থাকো বা আল্লাহ্ পাক - উনার ইবাদত - বন্দেগী করতে চাও, তাহলে আল্লাহ পাক - উনার শুকরিয়া আদায় করো । অর্থাৎ হালাল যে খাদ্য বা গেজা দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে খাদ্য গ্রহণ কর মহান আল্লাহ পাক বলে দিয়েছেন ।" ( মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পবিত্র সুরা আল বাক্বারা :মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পবিত্র  আয়াত শরীফ ১৭২)

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,খত্বামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,

" হালাল কামাই করা অন্যান্য ফরজের পরে ফরজ ।" ( আল হাদিস শরীফ )

কিন্তু আমরা সমাজের অধিকাংশ মানুষ যে খাদ্য খাই তা হালাল - হারাম বাছ বিচার করিনা । যার কারণে আমাদের দোয়া আল্লাহ পাক উনার দরবারে কবুল হয় না।আর দোয়া কবুল হবে কি ভাবে, হারাম - হালাল বিচার করার ক্ষমতাই তো নেই । হারাম - হালাল বিচার করতে না পারার কারণ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সমন্ধে ইলম না থাকা ।

 দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই অবশ্যই হক্ব হযরত আউলিয়া কেরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবতে আসতে হবে । আর বর্তমানে দ্বীনদ্বার মুসলমান উনাদের জন্য সুখবর যে বর্তমান যামানাই আল্লাহ পাক উনার একমাত্র লক্ষ্যস্থল ওলিআল্লাহ,খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম-"খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম"উনি Bangladesh এ রাজারবাগ শরীফ এ অবস্থান করেছেন । হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনি দৈনিক আল ইহসান, মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনাদের মাধ্যমে ইসলামে কোনটা হারাম - হালাল, কোনটা জায়েজ - নাজায়েজ সেগুলোসহ আর অন্যান্য বিষয়াদি বিশ্ব মুসলনাদের সামনে তুলে ধরতেছেন। সুতরাং বিশ্ব মুসলমানদের উচিৎ উনার মুবারক ছোহবতে এসে দ্বীন ইসলাম সমন্ধে সহিহ্ ইলেম অর্জন করা  এবং উনার খেদমত মুবারকে আন্জাম দেওয়া ।

হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণ মানুষের ন্যায় মায়ের হেরেম শরীফ থেকে পৃথিবীতে তাশরীফ আনেন নি



 আখেরী রসুল,সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,নুরে মুজাসসাম, শাফিউল উমাম, রহমাতুল্লীন আলামীন, ছহেবে সালাত ওয়া সালাম, আছলুল কায়েনাত, খাইরুল আলম, খাইরুল বাশার, ছাহেবে আসমা ওয়াল হুসনা, ছাহেবে আলক্বাব, রহমতে আলম, আফজালুল কায়েনাত, ছ্বাহেবে কলম, ছাহেবে মীছাক্ব,সরওয়ারে কাওনাইন, ছাহেবে জামিউল কালিম মুত্তালে আলাল গাইব, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণ মানুষের ন্যায় মায়ের হেরেম শরীফ থেকে পৃথিবীতে তাশরীফ আনেন নি ।

এ ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল ইমাম - মুজতাহিদ ও হযরত আউলিয়া কেরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অভিমত :---

.

كل مولود غير الانبياء يولد من الفرج وكل الانبياء غير نبينا مولودون من فوق الفرج وتحت السرة واما نبينا صلى الله عليه وسلم فمولود من الخاصرة اليسرى تحت الضلوع.

.

" হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম গন ব্যতীত সমস্ত মানুষই ( স্বীয় মায়ের ) স্বাভাবিক স্থান থেকে জন্ম গ্রহণ করে ।আর সমস্ত হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম গন স্বাভাবিক স্থানের উপর ও নাভির নিচ থেকে ভুমিস্ট হয়েছেন ।আর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ( হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার ) বাম পার্শ্বের পাঁজরের নিচ থেকে ভুমিষ্ঠ  হয়েছেন ।"( উমদাতুন্নুকুল ফি কাইফিয়াতে ওলাদাতির রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে,

হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সমস্ত হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম গন সাধারণ মানুষের মত ভুমিষ্ঠ  হননি । বরং যিনি খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তাদেরকে খাছ কুদরতী ভাবে স্বাভাবিক স্থান ব্যতীত অন্যস্থান দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ।

এ সম্পর্কে আরো বর্ণিত আছে -

.

.

ولم يصح نقل ان نبيا من الانبياء ولد من الفرج ولهذا افتى المالكية بقتل من قال ان النبى صلى الله عليه وسلم ولد من مجرى البول.

.

" হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম গন স্বীয় মাতার স্বাভাবিক স্বাভাবিক স্থান থেকে জন্ম গ্রহণ করেছেন, একথা সম্পূর্ণ ভাবে অশুদ্ধ । আর এজন্য মালেকি মাযহাবের ইমাম গন ঐ ব্যক্তি কে ক্বতল করার ফতওয়া দিয়েছেন, যে ব্যক্তি বলবে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ( উনার মাতার ) স্বাভাবিক স্থান দিয়ে ভুমিষ্ঠ হয়েছেন ।"( উমদাতুন্নুকুল ফি কাইফিয়াতে ওলাদাতির রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )

কাজেই একথা সকল কে বিশ্বাস রাখত হবে নুর নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার সম্মানিত আম্মাজানের বাম পাঁজরের নিচ থেকে ভুমিষ্ঠ  হয়েছেন ।অতএব প্রমানিত হলো যে, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম গন ব্যতীত সকল মানুষই মায়ের হেরেম শরীফ থেকে পৃথিবীতে এসেছেন ।যদি তাই হয় বাতিলদের কাছে প্রশ্ন, নুর নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আমাদের মতো হলেন কিভাবে?

দলিল :-

তালখিছ,

আত তাহসিল ওয়াল বায়ান,

জামিউল ফুছুলিন,

হাশিয়াতুল আলাশ্ শিফা ,

খোলাছা,

হাশিয়ায়ে জামিউল ফুছুলিন,

ইক্দুছ ছামিন,

তাফসিরে ওয়াহেদি ।