>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

দুনিয়ার মুহব্বত সকল গুনাহের মূল

 

                                 দুনিয়ার মুহব্বত সকল গুনাহের মূল


জিন-ইনসানসহ যত মাখলূকাত রয়েছে, যাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব মাহবুব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জন বা হাছিল করার জন্য। তারা যদি সেটা বুঝতে পারতো, তাহলে অবশ্যই তারা দুনিয়াবী জিন্দেগীকে প্রাধান্য না দিয়ে আখিরাত বা পরকালকেই প্রাধান্য দিত। সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন যে, হাক্বীক্বত দুনিয়াবী জিন্দেগী ক্রীড়া-কৌতুক এবং খেল-তামাশার মত এবং প্রকৃত জিন্দেগী হচ্ছে- যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন যে, “পরকালই প্রকৃত জিন্দেগী, যদি তারা সেটা বুঝতো।” কাজেই দুনিয়াবী জিন্দেগী- তার তাৎপর্য, তার অবস্থা বা বুরায়ী প্রত্যেক মুসলমানকেই সেটা জানতে বা বুঝতে হবে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম তিনি একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র হুজরা শরীফ-এ গেলেন সাক্ষাত মুবারক করার জন্য। সেখানে গিয়ে যখন উনি বসলেন। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেজুরের চাটাইয়ের মধ্যে শোয়া ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উঠে বসলেন, উনি যখন বসলেন, যেহেতু উনি খেজুরের চাটাইয়ের মধ্যে শোয়া ছিলেন, উনার পিঠ মুবারকে সেই চাটাইয়ের দাগ পড়ে গিয়েছিল এবং সে ঘর মুবারক উনার মধ্যে মশকের ভিতরে সামান্য কিছু পানি ছিল। একটা পাত্র মুবারকে কিছু যবের আটা ছিল। সেটা দেখে হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম তিনি কাঁদতে লাগলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব মাহবুব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, “ হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম, আপনি কেন কাঁদতেছেন? কি কারণ? উনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার অবস্থা দেখে আমার কান্না আসতেছে, কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সৃষ্টি না করলে আসমান-যমীন, আরশ-কুরছী, লৌহ-কলম, বেহেশ্ত-দোযখ কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রুবূবিয়ত প্রকাশ করতেন না। সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু-কেন্দ্রস্থল হচ্ছেন আপনি। আর আপনার এই অবস্থা মুবারক, সেটা দেখে আমার কান্না পাচ্ছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমার কি অবস্থা?” হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনি এমন সাধারণ শান মুবারক প্রকাশ করছেন অথচ যারা রোম-পারশ্যের সম্রাট, যারা চির জাহান্নামী, যারা মরার সাথে সাথে জাহান্নামে চলে যাবে, তাদের কত শান-শওকত, কত বিলাসিতা, তাদের কথা স্মরণ হয়ে এবং আপনার এ শান মুবারক দেখে আমার কান্না পাচ্ছে। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব মাহবুব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম, আপনি কি জানেন, আমার মধ্যে আর দুনিয়ার মধ্যে কি সম্পর্ক রয়েছে? আমার মধ্যে আর দুনিয়ার মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে- একজন ঘোড় সাওয়ারীর ন্যায়। অর্থাৎ একজন ঘোড় সাওয়ারী ঘোড়ার উপর সাওয়ার হয়েছে, ভ্রমণ করছে, ভ্রমণ করার কারণে সে ক্লান্ত বা পরিশ্রান্ত হয়ে গিয়েছে, তার কিছু বিশ্রামের দরকার রয়েছে। সে বিশ্রামের জন্য একটা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলো, অতঃপর সেখান থেকে চলে গেল। ঠিক একটা গাছের ছায়ার সাথে একজন ঘোড় সাওয়ারী বা মুছাফিরের যতটুকু সম্পর্ক, আমার সাথে দুনিয়ার ঠিক ততটুকু সম্পর্ক। অতএব, একজন ঘোড় সাওয়ারী ক্লান্তি-শ্রান্তির কারণে যেমন গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। সে নিজে নিজে স্বস্তিবোধ করলে, সেখান থেকে অল্পক্ষণ পরে চলে যায়, অর্থাৎ ছায়া ত্যাগ করে, ঠিক আমার এবং দুনিয়ার মধ্যে অতটুকুই সম্পর্ক, যতটুকু সম্পর্ক রয়েছে ঘোড় সাওয়ারী এবং গাছের ছায়ার মধ্যে। কাজেই আমাদের জন্য দুনিয়ার মাল-সামানা, সম্পদ পাওয়া না পাওয়ার সাথে কোন সম্পর্ক নেই এবং এর জন্য কাঁদারও কিছু নেই। যেহেতু দুনিয়ার জন্য আমাদের সৃষ্টি করা হয়নি। বরং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আর সেটা হচ্ছে- আমাদের মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। যেটা অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব মাহবুব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই দুনিয়াকে তোমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তোমরা সৃষ্টি হয়েছ, তোমরা তৈরি হয়েছ পরকালের জন্য।” সুবহানআল্লাহ। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে দুনিয়ার মুহব্বত থেকে হিফাজত করুন। আমীন।


মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত পরিচিতি মুবারক

 মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত পরিচিতি মুবারক


শাব্দিক পরিচিতি মুবারক: আরবী ক্বাওয়ায়িদ বা ব্যাকরণ অনুযায়ী اَهْلُ بَيْتٍ ‘আহলু বাইত’ মুরাক্কাবে ইদ্বাফী হয়েছে। অর্থাৎ اَهْلُ ‘আহাল’ শব্দ মুবারকখানা হচ্ছেন মুদ্বাফ আর بَيْتٍ ‘বাইত’ শব্দ মুবারকখানা হচ্ছেন মুদ্বাফ ইলাইহ। اَهْلُ আহাল শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন অধিবাসী, পরিবার-পরিজন, লোকজন, বাসিন্দা, সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ইত্যাদি। আর بَيْتٍ শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন ঘর, হুজরা শরীফ, বাড়ি, বাসস্থান, পরিবার ইত্যাদি। সুতরাং اَهْلُ بَيْتٍ ‘আহলু বাইত’ উনার শাব্দিক অর্থ মুবারক হলো, ঘরের অধিবাসী, হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী, পরিবারের সদস্য, পরিবারের লোকজন, পরিবার-পরিজন ইত্যাদি। সুবহানাল্লাহ!

পারিভাষিক অর্থ: সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার পরিভাষায় اَهْلُ بَيْتٍ ‘আহলু বাইত’ বলতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পরিবার মুবারক উনাকে বুঝায়, উনার সম্মানিত পরিবার মুবারক উনার সম্মানিত সদস্যগণ উনাদেরকে বুঝায়, উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদেরকে বুঝায়। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী যাঁরা রয়েছেন, উনারাই হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, যদিও স্বাভাবিকভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী বলতে উনার মহাসম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে, হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে, হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে এবং উনাদের সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বুঝায়, তথাপি বিষয়টি অতি সূক্ষ্ম, ব্যাপক এবং ব্যাখ্যার দাবিদার। তবে সংক্ষেপে বলতে গেলে, যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনারা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হিসেবে দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিবেন, উনারা প্রত্যেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়টি সম্মানিত কুদরত মুবারক এবং সম্মানিত মু’জিযা শরীফ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! যদিও স্বাভাবিকভাবে মানুষের জন্য বুঝতে একটু কঠিন মনে হতে পারে। তবে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ এই বিষয় মুবারক উনার বরকতময় হাক্বীক্বত মুবারক অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হবে। সুবহানাল্লাহ! যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনারা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন, উনারা প্রত্যেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী হবেন। উনারা একই জান্নাত মুবারক-এ অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! তবে অবশ্যই সম্মানিত কুরবত বা নৈকট্য মুবারক উনার প্রগাঢ়তা অনুযায়ী স্তর বিন্যাস রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

আরো সহজভাবে বলতে গেলে- মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ لَّا اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبـى.

অর্থ: “(হে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাওয়া হচ্ছে না, চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়। তবে তোমাদের জন্য ফরয হচ্ছে আমার সর্বাধিক নিকট সম্পর্কের অধিকারী, নিকটাত্মীয় তথা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা শূরা শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ-২৩)

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে এই সম্মানিত কুরবত মুবারক উনার সম্মানিত নিয়ামত মুবারক বংশানুক্রমে (অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে)যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব এবং ব্যক্তিত্বা মুবারক উনারা ধারণ করেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব এবং ব্যক্তিত্বা মুবারক উনারা ধারণ করবেন, উনারাই হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উনাদের শান মুবারকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-

نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ الله مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ.

অর্থ: “আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর লিস সুয়ূত্বী ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩)

মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা কারা?:

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে তিনটি স্তর মুবারক রয়েছেন। যেমন

প্রথম স্তর:

মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রথম স্তরে হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ! উনারা হচ্ছেন,

** আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম। তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার ৭৮ বছর ৮ মাস ১০ দিন পূর্বে ২রা রজবুল হারাম শরীফ লাইলাতুস সাব্ত শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার ৫৩ বছর ২ মাস পূর্বে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ২ মাস ১০ দিন পূর্বে ২রা মুহররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি দুনিয়ার যমীনে মোট ২৫ বছর ৬ মাস অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

** সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার ৭২ বছর পূর্বে ৫ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ বা’দ ফজর সম্মানিত মদীনা শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি ১০ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ সকাল ৯-১০ টার দিকে মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি দুনিয়ার যমীনে ২৫ বছর ৫ দিন অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

দ্বিতীয় স্তর:

দ্বিতীয় স্তরে হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!  উনারা হচ্ছেন,

১.      উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম।

২.      উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাওদাহ বিনতে যাম‘আহ আলাইহাস সালাম,

৩.      উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম।

৪.      উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাফছাহ আলাইহাস সালাম

৫.      উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল খামিসাহ উম্মুল মাসাকিন সাইয়্যিদাতুনা যাইনাব বিনতে খুযাইমাহ আলাইহাস সালাম।

৬.      উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাদিসাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু সালামাহ বিনতে আবী উমাইয়্যাহ আলাইহাস সালাম।

৭.      উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব বিনতে জাহ্শ আলাইহাস সালাম।

৮.     উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছামিনাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত জুওয়াইরিয়া আলাইহাস সালাম।

৯.      উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত রায়হানাহ বিনতে শাম‘ঊন আলাইহাস সালাম।

১০.    উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল আশিরাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছফিয়্যাহ বিনতে হুইয়াই বিনতে আখত্বব আলাইহাস সালাম।

১১.    উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ ‘আশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু হাবীবাহ বিনতে আবী সুফিয়ান আলাইহাস সালাম।

১২.    উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ ‘আশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারিয়াহ ক্বিবতিয়াহ আলাইহাস সালাম।

১৩.    উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ‘আশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত মাইমূনাহ বিনতে হারিছ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

তৃতীয় স্তর:

তৃতীয় স্তরে হচ্ছেন হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নূরে মুজাসসাম হাবীল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছেলে সন্তান আলাইহিমুস সালাম) উনারা এবং হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মেয়ে সন্তান আলাইহিন্নাস সালাম) উনারা এবং উনাদের আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা। সুবহানাল্লাহ!

আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এবং হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ছিলেন মোট আট (৮) জন। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ধারাবাহিকক্রমে উনারা হচ্ছেন,

১. ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আন নূরুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম। তিনি ২রা রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুছ ছুলাছা’ শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি দুনিয়ার যমীনে ২২মাস অবস্থান মুবারক করেন। অতঃপর ২রা রজবুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

২. বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম। তিনি ২১শে জুমাদাল উখরা শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ বা’দ ফজর মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি ৮ম হিজরী সনের ৮ই মুহাররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ ইশরাকের ওয়াক্তে সম্মানিত মদীনা শরীফ-এ মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ৩০ বছর ৬ মাস ১৭ দিন দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

৩. ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আন নূরুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বইয়িব আলাইহিস সালাম। তিনি ২রা রবী‘উল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল খমীস মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি দুনিয়ার যমীনে মাত্র ৭ দিন অবস্থান মুবারক করেন। অতঃপর ৮ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল আরবিয়া’ শরীফ বা’দ আছর মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

৪.  ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আন নূরুছ ছালিছ সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম। তিনি ৪ঠা রবী‘উল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল আরবিয়া’ শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি দুনিয়ার যমীনে মাত্র ৮ দিন অবস্থান মুবারক করেন। অতঃপর তিনি ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল খমীস শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

৫. বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আন নূরুছ ছানিয়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুক্বইয়্যাহ আলাইহাস সালাম। তিনি ৩রা রবী‘উছ ছানী শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহনাল্লাহ! আর তিনি ২য় হিজরী সনের ১৮ই রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুস সাব্ত শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন ২১ বছর ৫ মাস ১৫ দিন। সুবহানাল্লাহ!

৬. বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আন নূরুছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম। তিনি ১১ই জুমাদাল ঊলা শরীফ ইয়াওমুস সাবত শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি ৯ম হিজরী সনের ৬ রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ২৬ বছর ৩ মাস ২৫ দিন দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

৭. বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আন নূরুর রাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম। তিনি ২০শে জুমাদাল উখরা শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ সুবহে ছাদিক্বের সময় মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি ১১ হিজরী সনের ৩রা রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা’দ আছর মহাসম্মানিত রবকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ২৬ বছর ২ মাস ১৩ দিন দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! এবং

৮. ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আন নূরুর রাবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! তিনি ৮ম হিজরী সনের ২রা যিলহজ্জ শরীফ লাইলাতুল জুমুয়াতি তথা জুমুয়াবার রাতে দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি ১০ম হিজরী শরীফ উনার সাইয়্যিদুশ শুহূর মহাসম্মানিত রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ১০ তারিখ ইয়াওমুছ ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার) মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ১৫ মাস ৮ দিন দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত আবনা’ আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই অল্প বয়স মুবারক-এ তথা সম্মানিত দুধ মুবারক পানরত অবস্থায় মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। আর হযরত বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম উনারা প্রত্যেকেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার যুগ পেয়েছেন, সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেছেন, সম্মানিত মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক করেছেন এবং উনাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফও হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ! উনাদের মধ্যে একমাত্র বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি ব্যতীত অন্যান্য যাঁরা রয়েছেন অর্থাৎ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ঊলা আলাইহাস সালাম উনার, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের প্রত্যেকেরই আওলাদ ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনারাই হচ্ছেন হাফাদাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিবতুন (নাতি) আলাইহিমুস সালাম এবং সিবত্বাতুন (নাতনী) আলাইহিন্নাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উনারা সর্বমোট ১০ জন। সুবহানাল্লাহ! উনারা হচ্ছেন,

১.      সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমামাহ আলাইহাস সালাম।

২.      সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী ইবনে হযরত যুন নূর আবিল আছ (আলাইহিস সালাম)।

৩.      একজন মহাসম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এই ৩ জন বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

৪.      সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে হযরত যুন নূরাইন উছমান আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! তিনি বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

৫.      সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম।

৬.      সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম।

৭.      সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব বিনতে যুন নূর হযরত আলী আলাইহিমাস সালাম।

৮.     সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুক্বইয়্যাহ বিনতে যুন নূর হযরত আলী আলাইহিমাস সালাম।

৯.      সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলছূম বিনতে হযরত আলী আলাইহিমাস সালাম।

১০.    সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহসিন আলাইহিস সালাম।

উনারা ৬ জন বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতুনা হযরত ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত যাওযুম মুকাররাম সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর (আবুল আছ ইবনে রবী’) আলাইহিস সালাম তিনি এবং খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারাও মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

আর ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা এবং ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা প্রত্যেকেই আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! হযরত আবুল বাশার ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সময় পর্যন্ত যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব এবং ব্যক্তিত্বা মুবারক উনারা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ মুবারক করেছেন উনারা প্রত্যেকেই হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিবতুন ও সিবত্বাতুন (নাতী-নাতনী) আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পর থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক বংশানুক্রমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত কুরবত মুবারক উনার সম্মানিত বিশেষ নিয়ামত মুবারক ধারণ করবেন, উনারাই মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ হিসেবে মনোনীত হবেন। আর উনারাই মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাও হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাচ্ছুল খাছ মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ওজূদ পাক মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত। সুবহানাল্লাহ! তিনি তো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাচ্ছুল খাছ মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত অবশ্যই; শুধু তাই নয়, তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অদ্বিতীয় হাক্বীক্বী কায়িম মাক্বাম এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরিপূর্ণ ক্বায়িম মাক্বাম। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উনার মহাসম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদের পরিপূর্ণ ক্বায়িম মাক্বাম, উনার জাওঝাতুম মুকাররমাহ তথা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুল নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, হাবীবাতুল্লাহ আমাদের মহাসম্মানিতা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পরিপূর্ণ ক্বায়িম-মাক্বাম, উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল উমাম আল মানছূর আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরিপূর্ণ ক্বায়িম মাক্বাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত নাক্বীবাতুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত নিবরাসাতুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা হচ্ছেন বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরিপূর্ণ ক্বায়িম মাক্বাম, সাইয়্যিদুনা হযরত শাহনাওয়াসা আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত শাহনাওয়াসী আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিবতুন ও সিবত্বতুন (নাতী-নাতনী) আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পরিপূর্ণ ক্বায়িম মাক্বাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত শাফিল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত হাদীউল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের পরিপূর্ণ ক্বায়িম মাক্বাম। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে পার্থক্য:

এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকে মনে করে থাকে যে, যিনি আওলাদে রসূল তিনিই আহলু বাইত শরীফ। আওলাদের রসূল এবং আহলু বাইত শরীফ উনাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আবার অনেকে মনে করে থাকে যে, আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে যারা বড় ওলীআল্লাহ উনারা হচ্ছেন আহলু বাইত শরীফ।

প্রকৃতপক্ষে এই বক্তব্যগুলো একটাও শুদ্ধ না। মূলত, মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যেমন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা বংশধর অর্থাৎ যাঁরা ইমামুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার এবং ইমামুছ ছালিছ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের যাঁরা বংশধর উনারা প্রত্যেকেই আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তবে আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে তিনটি ভাগ রয়েছে। যেমনÑ

১.      যাঁদের আক্বীদা ও আমল আখলাক্ব শুদ্ধ রয়েছে উনাদেরকে মুহব্বত করতে হবে এবং অনুসরণও করতে হবে।

২.      যাঁদের আক্বীদা শুদ্ধ রয়েছে কিন্তু আমল আখলাক্ব শুদ্ধ নেই উনাদেরকে মুহব্বত করতে হবে, সম্মান করতে হবে; কিন্তু অনুসরণ করা যাবে না।

৩.      যাদের আক্বীদার মধ্যে কুফরী রয়েছে, তাদেরকে আওলাদে রসূল বা সাইয়্যিদ বলা যাবে না। মুহব্বত, সম্মান ও অনুসরণ করার তো প্রশ্নোই উঠে না।

এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حضرت بُرَيْدَةَ رَضِىَ الله تعالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّهُ عَلَيه وَسَلَّم لا تَقُولُوا لِلْمُنَافِقِ سَيّدٌ فَإِنَّكُمْ اِذَا فَعَلْتُمْ اَغْضَبْتُمْ رَبَّكُمْ تَبَارَكَ وتعالى.

অর্থ: “হযরত বুরাইদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মুনাফিক্বদেরকে সাইয়্যিদ বলো না। যদি তোমরা এরূপ করো, তাহলে তোমরা তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক তাবারাকা ওয়া তায়ালা উনাকে অসন্তুষ্ট করলে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল আদাবুল মুফরাদ ১/২৬৭, মুসনাদে বাযযার ৪/২৯৫, সুনানে আবী দাঊদ ইত্যাদি)

আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিবতুন ও সিবত্বাতুন (নাতী-নাতনী) আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পর থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক বংশানুক্রমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত কুরবত মুবারক উনার সম্মানিত বিশেষ নিয়ামত মুবারক ধারণ করবেন, উনারাই মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ হিসেবে মনোনীত হবেন। আর উনারাই মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

উনারা প্রত্যেকেই পূর্ব মনোনীত। উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যেমন পূর্ব মনোনীত ঠিক তেমনিভাবে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাও পূর্ব মনোনীত। সুবহানাল্লাহ!

সহজে বুঝার জন্য বলা যেতে পারে, প্রত্যেক রসূলই নবী; কিন্তু প্রত্যেক নবীই রসূল নন। ঠিক তেমনিভাবে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু প্রত্যেক আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম নন।

সুতরাং প্রত্যেক আওলাদে রসূলই আহলু বাইত শরীফ নন। আবার আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে বড় ওলীআল্লাহ হলেই আহলু বাইত শরীফ হওয়া যায় না। বরং মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আলাদা। সুবহানাল্লাহ! উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান মুবারক এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছে সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ! উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহতাজ। এছাড়া কায়িনাতের অন্য কারো মুহতাজ নন; বরং কায়িনাতের সকলেই উনাদের মুহতাজ। সুবহানাল্লাহ! উনাদের শান মুবারকেই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ الله تَعَالـى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّايُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল ‘উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উপলধ্বি করার এবং উনাদের হাক্বীক্বী তায়াল্লুক্ব-নিসবত ও রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জানাযায় অলৌকিক ঘটনা

 

 হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জানাযায় অলৌকিক ঘটনা


     চিত্র : হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ ।

হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকাল করলেন। উনার জানাযার জন্য পঙ্গপালের মতো ছুটে এলো বহু.মানুষ। বিশাল মাঠে জানাযার আয়োজন করা হলো। জনসমুদ্রে পরিণত হলো মাঠ। জানাযার সময় হলে একজন ঘোষক ঘোষণা করলেন,

 হযরত  খাজা কুতুবউদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি  ইন্তিকালের পূর্বে আমাকে ওসিয়ত করে গেছেন,যার মাঝে চারটি গুন থাকবে তিনি যেন  খাজা কুতুবউদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি  উনার জানাযা নামাজ পড়ান। 
গুন চারটি হলো:

 ১. যার জীবনে কোনদিন তাকবীরে উলা ছোটেনি।
২. যার কোনদিন তাহাজ্জুদ কাযা হয়নি।
৩. যে কোনদিন গায়রে মাহরামের দিকে বদনজরে তাকাননি ।
৪. এমন ইবাদতগুযার, যার কোনদিন আসরের সুন্নতও ছোটেনি।
একথা শোনার পর পুরো মাঠে নিরবতা ছেয়ে গেলো। সবাই নিস্তব্ধ। কে আছেন এমন এভাবেই কেটে গেলো বেশ কিছুক্ষণ। এরপর ভীড় ঠেলে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এলেন একজন। সবার দৃষ্টি তাঁর দিকে। ধীরে ধীরে জানাযার দিকে এগিয়ে এলেন। লাশের  মুখ থেকে চাদর সরিয়ে বললেন,  
হে খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি ! তুমি নিজে তো চলে গেলে ।কিন্তু আমাকে অপদস্ত করে গেলে। তারপর তিনি জন সম্মুখে মহান আল্লাহ তা‘য়ালা উনাকে
 সাক্ষী রেখে কসম খেয়ে বললেন, আমার  মাঝে এই চারটি গুণ আছে। জনতা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো।        আরে !! ইনি কে?? তিনি আর কেউ নয়। তিনি হলেন তৎকালীন বাদশাহ শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি। সুবহানাল্লাহ ! একজন বাদশাহ যদি  নিজের সকল ব্যস্ততা সত্বেও এমন  আবেদের জীবন যাপন করতে পারেন। তাহলে আমরা যারা বিভিন্ন চাকরি বা ব্যবসা কিংবা অন্য কোন পেশায় নিয়োজিত, আমরা কি পারিনা এভাবে নিজেকে ইবাদতে ব্যস্ত রাখতে  ।


হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে মুজাদ্দিদে  আ'যম  সাইয়্যিদুনা হযরত  সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার উছিলায়  বেশী বেশী ইবাদত করার তাওফীক দান করুন।
আমিন ।