>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১

দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক


ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ৪০ মাইল দূরে সালমান পার্ক একটি প্রাচীন জনপদ। সেই ঐতিহ্যবাহী নগরী সালমান পার্কে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে ৮৯ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৩২ সালে।
সালমান পার্কে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম কবরস্থ হন বিখ্যাত ছাহাবী হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু । এরপর প্রায় তেরশত বছর পর সেখানে সমাহিত করা হয় আরো দু’জন ছাহাবীকে। তার মধ্যে একজন হলেন- হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং
হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ।
শেষাক্তো দু’জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের কবর প্রথমে সালমান পার্কে ছিল না। তাঁদের কবর ছিল সালমান পার্ক থেকে দু’ ফালং দুরে একটা অনাবাদী জায়গায়। যার অতি নিকট দিয়ে কলকল রবে বয়ে চলেছে ঐতিহাসিক দজলা নদী। দীর্ঘদিন পর একটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উনাদের কে সেখান থেকে সরিয়ে এনে সালমান পার্কে দাফন মুবারক করা হয়।
যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে উনাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, সেটি ছিল বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম বিস্ময়কর ঘটনা। সেই সময় ইরাকের বাদশাহ ছিলেন বাদশাহ ফয়সাল।
একদিন বাদশাহ ফয়সাল ঘুমিয়ে আছেন। হঠাৎ স্বপ্নে দেখেন- হযরত হুযায়ইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁকে বলছেন- “আমাদের বর্তমান অবস্থান থেকে সরিয়ে অন্যত্র দাফন করা হোক। কেননা, আমার কবরে পানি জমতে শুরু করেছে, আর হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার কবরে পানি প্রবেশ করার উপক্রম হয়েছে।”
কিন্তু বাদশাহ ফয়সাল ব্যস্ততার কারণে পরদিন স্বপ্নের কথা ভুলে যান। এরপর দ্বিতীয় রাতেও তিনি একই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু নানাবিধ ঝামেলার কারণে সেদিনও স্বপ্নের নির্দেশ পালন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
তখন হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তৃতীয় রাত্রে একইভাবে স্বপ্নযোগে ইরাকের মুফতীয়ে আ'যমকে একাজ সমাধা করার দায়িত্ব দেন। সেই সঙ্গে এও বলেন যে, ‘আমি পর পর দু’রাত ধরে বাদশাহকে এ ব্যাপারটি অবহিত করে আসছি। কিন্তু তিনি দিনের বেলায় ভুলে যাওয়ার কারণে এ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হননি। এখন আপনার দায়িত্ব হচ্ছে – আমার নির্দেশটি তাঁকে স্বরণ করিয়ে দেয়া এবং যথাশীঘ্রই আমাদেরকে স্তানান্তর করার ব্যবস্থা করা।’
স্বপ্নযোগে এ দৃশ্য দেখে মুফতীয়ে আ'যম কালবিলম্ব না করে পরদিন সকালেই ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরী আল সাঈদকে সংগে নিয়ে বাদশাহর দরবারে হাজির হন এবং তাঁকে স্বীয় স্বপ্নের কথা বিস্তারিরত ভাবে খূলে বলেন।বাদশাহ ব্যাপারটা বিশদভাবে আলোচনা করার পর এরূপ একটি স্পর্শকাতর পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে মুফতীয়ে আ'যম-এর নিকট ফতওয়া তলব করেন। মূফতীয়ে আজম লাশ মুবারক স্থানান্তরের অনুকূলে ফতুওয়া প্রদান করেন।
অতঃপর সিন্ধান্ত হয় যে, কুরবানীর ঈদের দিন বাদ যোহর ছাহাবীদ্বয়ের ( রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম )কবর খুঁড়ে উনাদের লাশ মুবারক অন্য কোন নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত হবে। ইরাক সহ দেশ বিদেশের সংবাদ মাধ্যম গুলো তে খবরটি প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে সর্বত্র আলোচনার সৃষ্টি হয়। জনগন ছাহাবীদ্বয়ের ( রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ) দেখতে পাবার আনন্দে বিভোর হয়ে যায়। তখন বিশ্বে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন মক্কা নগরীতে সমবেত। কারণ, সেসময় ছিল হজ্জের মৌসুম। এ সংবাদ শ্রবণে হাজীগণ বাদশাহ ফয়সালের কাছে আবেদন করলেন -আমরাও মহান ছাহাবীদ্বয়ের ( রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম )চেহারা মুবারক দর্শনে আগ্রহী। অনুগ্রহ পূর্বক তারিখটা আরো ক’দিন পিছিয়ে দেয়া হোক। এদিকে ইরান, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিস্তিনি, হেজায, বুলগেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা , রাশিয়া, ভারত বাংলাদেশ সহ প্রভূতি রাষ্ট্র থেকে বাদশাহ ফয়সালের নিকট একই আবেদন সম্বলিত অসংখ্য বার্তা আসতে লাগল।
বাদশাহ্ ফয়সাল মহাবিপদে পড়লেন। একদিকে গোটা মুসলিম বিশ্বের তারিখ পেছানোর জোড়ালো অনুরোধ, অন্যদিকে দ্রুত স্থানান্তরের স্বাপ্নিক নির্দেশ মুবারক। উভয় সংকটে পড়লেন। অবশেষে এ ব্যাপারে সিন্ধান্ত হলো , কিছুদিন যাতে কবরের ভিতর পানি প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য নদীর দিক থেকে দশ ফুট দুরে একটি গভীর গর্ত খনন করে সেখানে কাঁকর ফেলা হবে। আর সারাবিশ্বের মুসলমানদের আগ্রহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তারিখটি আরো দশ দিন পিছিয়ে দেয়া হল।এ ঘোষনার পর ক’দিনের মধ্যেই সালমান পার্কের ছোট বসতিটি লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, রাষ্ট্রদূত, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঢল নামল এ পার্কে। তাঁবুতে তাঁবুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল মাদায়েনের ঐতিহাসিক মাঠটি। একটি গ্রহণযোগ্য হিসাব অনুযায়ী আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল পাঁচ লক্ষ।
শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিক্ষিত দিনটি এসে গেল। লক্ষ লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে কবর খোঁড়া হলো। দেখা গেল -সত্যিই হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবরে কিছু পানি জমে গেছে এবং হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবরে কিছুটা আদ্রতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে সমবেত জনতা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন। তাঁদের কণ্ঠে বার বার উচ্চারিত হতে লাগল -”আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।” চোখে নেমে আসে অশ্রুর বন্যা।
বাদশাহ ফয়সালের নেতৃত্বে তাঁর মন্ত্রী ও কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত রাষ্ট্রদুতগণের সহযোগীতায় প্রথমে হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু -উনার লাশ মুবারক কবর থেকে ক্রেনের দ্বারা তোলা হল। ক্রেনের সাহায্যে তাঁর পবিত্র লাশ মুবারকটি এমন ভাবে উঠানো হয় যে, মুবারক লাশটি আপনাতেই ক্রেনের মাথায় ফিট করে রাখা ট্রেচারে এসে পৌঁছায়। অতঃপর ট্রেচারটি ক্রেন থেকে পৃথক করে নেয়া হল। বাদশাহ ফয়সাল, মুফতী সাহেব, সিরিয়া এবংতুরস্কের নির্বাচিত মন্ত্রীবর্গ এবংমিশরের যুবরাজ শাহ ফারুক অত্যন্ত যত্ন ও তা’জীম সহকারে লাশ মুবারককে তুলে এনে একটি কফিনের ভিতর রাখেন। অতঃপর একই ভাবে হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু -উনার পবিত্র লাশ মুবারকও তুলে আনা হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো- শত শথ বছর কেটে গেলেও শুধু উনাদের লাশ মুবারকই নয়, কাফন বাঁধার ফিতা গুলোর মধ্যেও কোন পরিবর্তন আসেনি। সুবাহানাল্লাহ্‌! মুবারক লাশ দুটি দেখে কেউ কেউ কল্পনাও করতে করতে পারছিল না যে, এগুলো দীর্ঘ তেরশত বছরের প্রাচীণ লাশ।
আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- তাঁদের চোখগুলো ছিল খোলা, সেই খোলা চোখ থেকে রহস্যময় অপার্থিব জ্যোতি এমনভাবে ঠিকরে পড়ছিল, যে, অনেকেই তাঁদের চোখ ভাল ভাবে দেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখ থেকে বেরিয়ে আসা অতি উজ্জ্বল আলোর কারণে কেউই দৃষ্টি ঠিক রাখতে পারছিলেন না।
এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে বড় বড় ডাক্তার গণ হতবাক হয়ে যান। এ সময় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জৈনিক জার্মান চক্ষু বিশেষজ্ঞ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে সবকিছু খুঁটে খুঁটে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করে মূফতি সাহেবের হাত ধরে বললেন- “ইসলামের সত্যতা এবং সাহাবীগণের উচ্চ মর্যাদার সপক্ষে এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে?” এ বলে তিনি কালিমা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান হয়ে যান।
অতঃপর পবিত্র মুবারক লাশ দু’টিকে কফিনে রাখার পর উপস্থিত জনতা তাঁদের জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করেন। এরপর আলেমগণ ও মন্ত্রীবর্গ কফিন দু’টো কাঁধে উঠিয়ে নেন। কিছুদুর যাওয়ার পর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবর্গ এবং সবশেষে বাদশাহ ফয়সাল কাঁধ পেতে নেন।
দীর্ঘ চার ঘন্টা পর চরম ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে পবিত্র লাশ দুটি সালমান পার্কে এসে পৌঁছে। যে সৌভাগ্যবান লাশ দু’টিকে প্রথমে কফিনে রেখেছিলেন, তারাই কফিন দু’টি নবনির্মিত কবরে নামিয়ে রাখেন। আর এভাবেই জনতার আল্লাহু আকবার ধ্বনির মধ্যে ইসলামের এই মহান ছাহাবীদ্বয়কে( রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম )মাটির কোলো শুয়ে দেওয়া হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন