>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১

সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা

  মুজাদ্দিদগণের এ দুনিয়াতে আগমনের কারণ বা উদ্দেশ্য হল- সমাজে প্রচলিত যাবতীয় বদ ও কুফরী আক্বীদা, বিদয়াত-বেশরা ও শরীয়ত বিরোধী কুসংস্কারমুলক আমল সমুহের মুলউৎপাটন করা ও ছহীহ্ আক্বীদা ও সুন্নতের আমল সমুহে সকলকে অভ্যস্ত করে তোলা। একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, প্রথম হিজরী শতক হচ্ছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণের যামানা। অতএব মুজাদ্দিদ্গণের আগমন শুরু হয়েছে দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকে। মুজাদ্দিদগণের এ দুনিয়াতে আগমনের ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত ১৩ জন মুজাদ্দিদ গত হয়েছেন। তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলোঃ

১) হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি দ্বিতীয় হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মাযহাব হানাফী মাযহাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একজন তাবেই। তাঁর প্রকৃত নাম নু’মান বিন সাবিত। তিনি প্রথমে হযরত ইমাম সাইয়্যিদ বাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং উনার বিছাল শরীফের পর তাঁর পুত্র হযরত ইমাম সাইয়্যিদ জাফর সাদিক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি-র কাছে বাইয়াত হন। তিনি শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা হাতে বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে বলেনঃ “(আমার জীবনে) যদি দু’টি বছর না আসতো, তবে নু’মান ধ্বংস হয়ে যেত।“(সাইফুল মুক্বাল্লিদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া) অর্থাৎ তিনি যদি তাঁর শায়খদ্বয় (রহমতুল্লাহি আলাইহিম)-এর নিকট বাইয়াত না হতেন, তবে তিনি ধ্বংস বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতেন। তিনি ৮০ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং বিছাল শরীফ লাভ করেন ১৫০ হিজরীতে। হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ৪৮টিরও বেশী লক্বব মুবারক (উপাধী) ছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য লক্বব হচ্ছে ইমামে আ’যম, ইমামুল মুকাস্‌সিরীন ফিল হাদীস, ইমামুল কবীর ফিল ফিক্বাহ, ইমামুল হুমাম, ইমামুল আইম্মা, ইত্যাদি।

২) হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি তৃতীয় হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ এবং হাম্বলী মাযহাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-র কাছে বাইয়াত হয়ে তাঁর কাছ থেকে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করেন। এছাড়া হযরত আবূ হামযাহ্‌ রহমতুল্লাহি আলাইহি-র কাছ থেকেও তিনি ইলমে তাছাউফের নিসবত হাছিল করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য তাজদীদসমূহের দু’টি নিম্নরূপ- ১) “লাইলাতুল রগাইব” অর্থাৎ রজব মাসের পহেলা জুমুয়ার রাত্র, যে রাত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর আব্বার পিঠ মুবারক থেকে আম্মার রেহেম শরীফে তাশরীফ এনেছেন, সে রাত্রের মর্যাদা ও ফযীলত শবে বরাত ও শবে ক্বদর থেকেও বেশী। ২) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের উপর আমল করা ফরজ। তাঁর পবিত্র জীবন মুবারকের ব্যাপ্তীকাল ১৬৪ হিজরী থেকে ২৪১ হিজরী।

৩) হযরত ইমাম আবুল মানসুর মাতুরিদী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি চতুর্থ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ এবং তিনি হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ ও মুজতাহিদ ছিলেন। তিনি আহ্‌লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের প্রতিটি বিষয়ের শুদ্ধ আক্বীদা নিরুপণ করেন তাই তাঁকে আক্বাঈদ শাস্ত্রের ইমাম বলা হয়। তাঁর পবিত্র জীবন মুবারকের ব্যাপ্তীকাল ২৭০ (মতান্তরে ২৭১) হিজরী থেকে ৩৩৩ হিজরী।

৪) হযরত ইমাম মুহম্মদ আবূ হামিদ গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি পঞ্চম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তিনি হযরত আবূ আলী ফারমুদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাতে বাইয়াত হন। তিনি তাঁর যামানার সকল মুসলমানকে গ্রীক দর্শন হতে ফিরিয়ে ইসলামের দিকে নিয়ে আসেন, তাই তিনি “হুজ্জাতুল ইসলাম”(অর্থাৎ ইসলামের দলীল ) লক্বব মুবারকে ভুষিত হন। তাঁর আর একটি উল্লেখযোগ্য তাজদীদ হচ্ছে- চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাব অনুসরণ করা ফরজ। তিনি ইলমে তাছাউফের উপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেন তার মধ্যে দু’টি কিতাব হলো- ইহ্‌ইয়াউ উলূমিদ্দীন ও ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাত। তিনি ৪৫০ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ৫০৫ হিজরীতে বিছাল শরীফ লাভ করেন।

৫) হযরত ইমাম সাইয়্যিদ আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি ষষ্ঠ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী এবং ক্বাদরিয়া ত্বরীকার ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধর। তিনি ইলমে ফিক্বাহ্‌ হাছিলের পর ইলমে তাছাউফ হাছিল করার জন্য হযরত আবূ সাঈদ মুবারক মখদূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ হন এবং ইরাকের জঙ্গলে ২৫ বছর যাবত সাধনা করে পূর্ণতায় পৌছেন। তিনি তাঁর যামানার সকল মুসলমানকে যাবতীয় বদ ও কুফরী আক্বীদা, বিদয়াত-বেশরা ও শরীয়ত বিরোধী কুসংস্কারমুলক আমল হতে ফিরিয়ে ইসলামের দিকে অর্থাৎ আল্লাহ পাকের মারিফাত-মুহব্বতের দিকে আনার জন্য একটি ত্বরীকা বা পথ দেখান যা ক্বাদরিয়া ত্বরীকা নামে সুপরিচিত, আর তাই তিনি আল্লাহ্‌ পাকের তরফ হতে “মুহিউদ্দীন”(ইসলাম জিন্দাকারী) লক্বব মুবারক প্রাপ্ত হন। তাঁর ৫১টিরও বেশী লক্বব মুবারকের মধ্যে মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, পীরানে পীর, দস্তগীর ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি তাঁর রচিত গুনিয়াত্ত্বলিবিন কিতাবে ৭২টি বাতিল ফিরক্বার আক্বীদা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন, যা তাঁর একটি অনবদ্য তাজদীদ। তিনি ৪৭১ হিজরীতে ইরানের জিলানে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ৫৫৯ হিজরীতে ইরাকের বাগদাদে বিছাল শরীফ লাভ করেন। বাগদাদ শরীফেই তাঁর মাযার শরীফ অবস্থিত।

৬) হযরত ইমাম সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি সপ্তম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী এবং চিশতীয়া ত্বরীকার ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনিও সাইয়্যিদ ছিলেন। তাঁর পীর সাহেব ক্বিবলার নাম হচ্ছে হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি তাঁর শায়খের ২০ বছর যাবত খেদমতের আঞ্জাম দেন এবং তাঁর কাছ থেকে কামালত হাছিল করেন। তাঁর উসীলায় পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রায় ১ কোটিরও বেশী লোক তাঁর হাতে বাইয়াত হয়ে ইসলাম গ্রহন করেন, তাই সত্যই তিনি “মুঈনুদ্দীন” অর্থাৎ ইসলামের সাহায্যকারী। তিনি আল্লাহ পাকের বান্দদেরকে ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতদেরকে উনাদের মারিফাত-মুহব্বত হাছিলের জন্য যে ত্বরীকা দিয়ে যান তা চিশতীয়া ত্বরীকা নামে সুপ্রসিদ্ধ। তিনি সুন্নতের এত বেশী অনুসরণ-অনুকরন করতেন, যার ফলশ্রুতিতে বিছাল শরীফের সময় তাঁর কপাল মুবারকে সোনালী অক্ষরে লিখিত হয় “হা-যা হাবীবুল্লাহ মা-তা ফী হুব্বিল্লাহ” অর্থাৎ ইনি আল্লাহ পাকের হাবীব (বন্ধু), আল্লাহ পাকের মুহব্বতে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। তিনি ৫৩৬ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ৬৩৩ হিজরীতে ভারতের আজমীর শরীফে বিছাল শরীফ লাভ করেন, সেখানেই তাঁর মাযার শরীফ রয়েছে। তাঁর ৮২টিরও বেশী লক্বব মুবারক রয়েছে, তারমধ্যে হাবীবুল্লাহ, সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়েখুল বাররে ওয়াল বাহ্‌র, গরীবে নেওয়াজ, খাজায়ে খাজেগাঁ ইত্যাদি বিশেষভাবে প্রণিধাণযোগ্য।

৭) হযরত ইমাম নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি অষ্টম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম মুহম্মদ বিন আহমদ বিন আলী বুখারী। তিনি হযরত খাজা বাবা ফরীদুদ্দীন মাসুদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাতে বাইয়াত হন এবং তাঁর কাছে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাব এবং চিশতীয়া ত্বরীকার অনুসারী। তিনি সামার মাহ্‌ফিল (বাদ্যযন্ত্র, মহিলা, রাগ-রাগিনী তথা অনৈসলামী সূর ব্যতীত ও আরো শর্ত সাপেক্ষে আল্লাহ পাকের দিকে আহ্বান সম্বলিত শব্দ দ্বারা রচিত এবং আল্লাহ্‌ওয়ালা ব্যক্তি দ্বারা ক্বাসিদা পাঠকে সামা বলে) খুব পছন্দ করতেন। তাঁর লক্বব মুবারকের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে- মাহবুবে ইলাহী, সুলতানুল মাশায়িখ, নিযামুদ্দীন আউলিয়া ইত্যাদি। তিনি ৬৬০ হিজরীতে বাদায়্যূনে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ৭৪৫ হিজরীতে দিল্লীতে বিছাল শরীফ লাভ করেন, সেখানেই তাঁর মাযার শরীফ রয়েছে।

৮) হযরত ইমাম খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি নবম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী এবং নকশবন্দীয়া ত্বরীকার ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হযরত সাইয়্যিদ আমীর কূলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ ছিলেন। তিনি মুসলমানদেরকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মারিফাত-মুহব্বত হাছিলের জন্য যে ত্বরীকা দিয়ে যান তা নকশবন্দীয়া ত্বরীকা নামে সুপরিচিত। তিনি ৭২৮ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং তাঁর বিছাল শরীফ হয় ৮০৮ হিজরীতে (মতান্তরে ৭৯১ হিজরীতে)।

৯) হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। আফ্রীকার সুয়ূত অঞ্চলে তিনি তাঁর তাজদীদের কাজ করেন। তিনি ছিলেন শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী। মুজাদ্দিদগণের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশী কিতাব রচনা করেন, “তাফসীরে জালালাইন” তাঁর রচিত কিতাবগুলোর মধ্যে একটি। তাঁর পবিত্র জীবন মুবারকের ব্যাপ্তীকাল ৮৪৯ হিজরী থেকে ৯১১ হিজরী পর্যন্ত।

১০) হযরত ইমাম শায়খ আহমদ ফারুক্বী সিরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি একাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। যেহেতু তিনি দ্বিতীয় হিজরী সহস্রাব্দে আভির্ভূত হন, তাই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে “মুজাদ্দিদে আলফে ছানী” (দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদ) লক্বব প্রদান করেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী এবং নকশবন্দীয়া-ই-মুজাদ্দিদীয়া ত্বরীকার ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হযরত খাজা বাক্বীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফের তাক্বমিলে পৌছে খিলাফত প্রাপ্ত হন। তাঁর সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছেঃ “হিজরী একাদশ শতকের প্রারম্ভে আল্লাহ পাক এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যিনি একটি বৃহৎ নূর, তাঁর নাম হবে আমার নামের অনুরূপ, দুই অত্যাচারী বাদশাহ্‌র মধ্যবর্তী সময়ে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং তাঁর শাফায়াতে অসংখ্য লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে।“ (জামউল জাওয়াম) সত্যিই তিনি ৯৭১ হিজরীতে ভারতের সিরহিন্দে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং বাদশাহ আকবর কতৃক উদ্ভাবিত “দ্বীন-ই-ইলাহী” নামক কুফুরী মতবাদের মুলউৎপাটন করে ছহীহ্‌ দ্বীন তথা “দ্বীন ইসলাম”কে জিন্দা করেন। তিনিও পূর্ববর্তী সকল আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতো সুন্নতের সূক্ষাতিসূক্ষ অনুসরণ-অনুকরণ করতেন, যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ পাক তাঁকে গায়ের এখতিয়ার সুন্নতও (স্বীয় ইচ্ছা-ক্ষমতার বাইরে যে সুন্নত) পালন করিয়েছেন। যেমন তিনি ৬৩ বছর (যা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুনিয়াবী হায়াত মুবারক) বয়স মুবারকে ১০৩৪ হিজরীতে সিরহিন্দে বিছাল শরীফ লাভ করেন। তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বংশধর ছিলেন এবং তরীক্বার নিসবতের দিক দিয়ে আফদ্বালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাঁর ২৪টিরও বেশী লক্বব মুবারকের মধ্যে প্রণিধাণযোগ্য লক্বব মুবারক হচ্ছে- ইমামে রব্বানী, আফদ্বালুল আউলিয়া, ক্বাইয়্যুমে আউয়াল, নূরূন আযীম, সিরাজুল উম্মত, মুসলিহাম বাইনাল ফিআতাইন ইত্যাদি।

১১) হযরত ইমাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি দ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং চার ত্বরীকায় বাইয়াত করাতেন। তিনি হযরত আব্দুর রহীম মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাতে বাইয়াত হন। তিনি ১১১৪ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ১১৭৬ হিজরীতে আল্লাহ্‌ পাকের সান্নিধ্যে চলে যান। তাঁর উল্লেখযোগ্য লক্বব মুবারকের মধ্যে কয়েকটি লক্বব হলো ইমামুল হিন্দ, আরিফুর রব্বানী, হুজ্জাতুল ইসলাম ইত্যাদি।

১২) হযরত ইমাম সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি: তিনি ত্রয়োদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী এবং চার ত্বরীকার নিসবত প্রাপ্ত ও মুহম্মদীয়া ত্বরীকার ইমাম। তিনিই এখন পর্যন্ত একমাত্র মুজাদ্দিদ যিনি “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ”-এর জন্য বালাকোটে শহীদ হন এবং যাঁর স্বহস্তে লিখিত কোন কিতাব নেই। বালাকোটে শহীদ হওয়ার পূর্বে তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিভিন্ন সুন্নত জিন্দা করেন। তিনি ১২০১ হিজরীতে ভারতের উত্তর প্রদেশের রায় বেরেলী শহরের বিখ্যাত সম্ভ্রান্ত সাইয়্যিদ পরিবারে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ১২৪৬ হিজরীতে বালাকোট প্রান্তরে শহীদ হন। তাঁর পীর সাহেব ক্বিবলা ছিলেন হযরত আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁর উল্লেখযোগ্য লক্বব মুবারক হচ্ছে ছাহিবু ইলমে লাদুন্নী, মুজাহিদে আ’যম, আমিরুল মু’মিনীন, শহীদে বালাকোট ইত্যাদি।

১৩) হযরত ইমাম আবূ বকর ছিদ্দিক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিঃ তিনি গত শতাব্দীর অর্থাৎ চতুর্দশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী এবং চার ত্বরীকার নিসবত প্রাপ্ত। তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বহু সুন্নতকে মুসলমানের মাঝে জিন্দা করে গেছেন। তিনি ১২৩৬ হিজরীতে বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ১৩৫৮ হিজরীতে বিছাল শরীফ লাভ করেন। তিনি হযরত শাহ ফতেহ আলী বর্ধমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে খিলাফত প্রাপ্ত ছিলেন। তাঁর ৪১টির বেশী লক্বব মুবারকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্বব মুবারকগুলো হলো রঈসূল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্‌সিরীন, ইমামুল মুসলিমীন, ক্বাইয়্যুমুয্‌ যামান, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ইত্যাদি।

যিনি বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ তিনি হচ্ছেন খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্‌ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, আওলাদে রসূল, মাওলানা হযরত ইমাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমান  আলাইহিস সালাম আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী ।রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা। তিনি তাঁর সম্মানিত মাতা-পিতা উভয় দিক হতে সাইয়্যিদ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতমুন্‌ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধর। তিনি সারাবিশ্বে সমাদৃত, প্রশংসিত, গ্রহণযোগ্য ও হক্ব সিলসিলা ফুরফুরা সিলসিলার পীর সাহেব ক্বিবলা হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপূরী (যাত্রাবাড়ির হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা) রহমতুল্লাহি আলাইহি হাতে বাইয়াত হয়ে মাত্র দেড় বছরে চার তরীক্বায় পূর্ণতাপ্রাপ্ত হন এবং স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলার চূড়ান্ত সন্তুষ্টি হাছিল করে খিলাফত প্রাপ্ত হন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন