>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৪

বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি পর্ব ২

 বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি পর্ব ২

যাঁরা উনার নিকট থেকে হাদীছ শরীফ শুনেছেন এবং উনার ছোহবত পেয়েছেন:
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি পর্ব -------- ১
হযরত আইয়ূব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শায়বান আন-নাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইউনুস বিন উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আওন রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হুমাইদ আত-ত্ববীল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ছাবিত আল-বুনানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মালিক বিন দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হিশাম বিন হাস্সান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত জারীর বিন হাযিম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আর-রাবী’ বিন আছ-ছাবীহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইয়াযীদ বিন ইবরাহীম আত-তুসতরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুবারক বিন ফাদ্বালা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবান বিন ইয়াযীদ আল-আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত র্কুরা বিন খালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হাযম আল-কুত্বায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাল্লাম বিন মিসকীন রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শুমাইত্ব বিন আজলান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ছালিহ আবু আমির আল-খায্যায রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্বাদ বিন রাশিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু হারীয আবদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুআবিয়া বিন আবদুল করীম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ওয়াছিল আবু র্হুরাহ আর-রাক্কাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হিশাম বিন যিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাবীব বিন শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আশআছ বিন বারায রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আশআছ বিন জাবির আল-হুদ্দানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আশআছ বিন আবদুল মালিক আল-হুমরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আশআছ বিন সাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল আশহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আরো অনেক। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)



মানসিক পরিবর্তন:

হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মানসিকতা পরিবর্তন সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, প্রথম জীবনে তিনি মণি মাণিক্যের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়িক কাজে একবার তিনি রোম শহরে গেলেন। রোমের একজন উযীরের সাথে উনার বন্ধুত্ব হয়। একবার সেই উযীরের অনুরোধে তিনি শহরের উপকন্ঠে এক জায়গায় যান এবং সেখানে অত্যন্ত সুসজ্জিত বৃহৎ স্বর্ণ ও মণি মাণিক্য খচিত একটি তাঁবু প্রতিষ্ঠিত দেখতে পান। একদল সুসজ্জিত সৈন্য তাঁবু প্রদক্ষিণ করে তাদের ভাষায় কি যেনো বলতে বলতে চলে যায়। এরপর প্রায় চারশত বিদ্বান এসে পূর্বের ন্যায় তাঁবু প্রদক্ষিণ করে কিছু বলতে বলতে চলে গেল। পরক্ষণেই প্রায় দুই শতাধিক সুন্দরী বাঁদী প্রত্যেকে বহু মূল্যবান মণি মাণিক্যপূর্ণ থালা মাথায় নিয়ে তাঁবু প্রদক্ষিণ করে কি যেনো বলতে বলতে চলে গেল। সর্বশেষে স্বয়ং রোম শাসক ও তার উযীর তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করে কিছু সময় পর বের হয়ে গেল। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এসব দেখে আমি অবাক হয়ে উযীরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উযীর বলল, এই শাসকের এক সুদর্শন ও গুণবান পুত্র ছিল। প্রাণাধিক সেই পুত্রের প্রতি শাসক অত্যন্ত দুর্বল ছিল, তাকে অতিশয় মুহব্বত করতো। হঠাৎ পুত্র কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকরা শত চেষ্টাতেও তাকে বাঁচাতে পারল না। তাকে এ তাঁবুতে দাফন করা হয়েছে। শাসক প্রতি বছরই একটি বিশেষ দিনে মহা আড়ম্বরে তার সমাধি দর্শন করতে আসে। আজ সেইদিন।

আপনি প্রথমে যে সেনাদলকে তাঁবু প্রদক্ষিণ করতে দেখলেন তারা বলেছিল, হে শাহযাদা! তোমার যে পরিণতি হয়েছে আমাদের বাহুবলে যদি তা প্রতিহত করা সম্ভবপর হতো তাহলে আমরা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় তোমাকে মুক্ত করতাম। কিন্তু যিনি এর নিয়ন্ত্রক উনার সাথে কোন যুদ্ধ চলে না।

বিদ্বানমন্ডলী এসে বলেছে, হে শাহযাদা! যদি আমাদের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও পান্ডিত্যের বলে এ কষ্ট দূর করা সম্ভব হতো তাহলে আমরা তোমার জন্য তাই করতাম।

বৃদ্ধ ব্যক্তিরা এসে বলেছে, হে শাহযাদা! যদি সুপারিশ ও কান্নাকাটি করে তোমার জীবন রক্ষা করতে পারতাম, তাহলে আমরা কখনও বিরত থাকতাম না।

পরে সুন্দরী বাঁদীরা রত্নপূর্ণ থালা মাথায় নিয়ে এসে বলল, হে মনিব! যদি ধনরতœ ও সৌন্দর্য দিয়ে তোমাকে রক্ষা করা আমাদের পক্ষে সম্ভবপর হতো, তাহলে তোমার জন্য এ ধনরাশি উৎসর্গ করতাম। কিন্তু যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন, উনার কাছে ধনরতœ ও রূপ-লাবণ্যের কোন মূল্যই নেই।

অবশেষে শাসক এগিয়ে গিয়ে বলল, হে প্রাণপ্রিয় পুত্র! তোমার পিতার হাতে আর কি শক্তি আছে? আমি তোমার জন্য সৈন্যদল, বিদ্বান, বৃদ্ধপুরুষ, রূপ-লাবণ্যময়ী বাঁদী ও মহিলাদেরকে হাযির করেছি এবং আমি নিজেও এসেছি। সৈন্যবল, পান্ডিত্ব, ধন-সম্পদ এবং সৌন্দর্যের সাহায্যে যদি এ বিপদ দূর করা সম্ভব হতো, তাহলে সর্বশক্তি দিয়ে তোমার প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করতাম। কিন্তু যিনি এমনটি করেছেন, তোমার পিতা, সমস্ত পৃথিবী উনার শক্তির মোকাবেলায় সম্পূর্ণ দুর্বল। এসব বলে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে শাসক বাইরে বের হয়ে আসল।

উযীরের এসব বর্ণনা হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করল। তিনি অনুতপ্ত ও ব্যাকুল হয়ে স্বীয় ব্যবসা পরিত্যাগ করে পারলৌকিক চিন্তায় অধীর হয়ে ফিরে আসলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, আর কখনও এ নশ্বর এবং পাপপূর্ণ সংসারের মোহে নিজকে জড়াবেন না। তখন থেকেই তিনি ইবাদত, বন্দেগী ও রিয়াযতে নিজকে এমনভাবে আত্মনিয়োগ করলেন যে, সে সময় উনার মতো কঠোর রিয়াযতে নির্লিপ্ত আর কাউকে দেখা যায়নি। তিনি ৭০ বছর ওযূসহ ছিলেন। ওযূ বিনষ্ট হলে সাথে সাথে ওযূ করে নিতেন। বর্ণিত আছে যে, তিনি প্রতি জুমুয়াবারে জুমুয়ার নামাযের পর ওয়াজ নছীহত করতেন। (তাযকিরাতুল আওলিয়া) (ইনশাআল্লাহ চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন