>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১

আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।

 সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,খত্বামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জবান মুবানে ইরশাদ মুবারক করেন-
" যারা আমার পবিত্র বংশধর সম্মানিত আওলাদ ও মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে  মাল দিয়ে , সম্পদ দিয়ে 
খিদমত  মুবারকের আঞ্জাম দিবে তাদেরকে আমি  কিয়ামতের দিন তথা দায়িমীভাবে সবসময় শাফায়াত করব ।" সুবহানাল্লাহ্।


এ প্র্রসঙ্গে “আনোয়ারুল আরেফীন” নামক কিতাবে বর্ণিত আছে -
হযরত রবি বিন সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বড় একজন বুযূর্গ ব্যক্তি আল্লাহওয়ালা ছিলেন। উনার অনেক মুরিদ-মুতাকিদ ছিলেন। তিনি উনার হায়াতে ৫০ বার পবিত্র হজ্জ সম্পাদান করেছেন। উনার  ৫১তম বছর তিনি উনার সাথীদের নিয়ে হজ্জের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার উনার পে যাত্রা শুরু করলেন।তিনি বলেন যখন আমরা কূফা নামক স্থানে পৌছালাম। তখন প্রত্যেকেই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ক্রয় করার জন্য বাজারে গেলাম। হঠাৎ বাজারের পাশে একটি জঙ্গল আমার দৃষ্টিগোচরে আসলো। সেখানে মৃত একটি খচ্চর বা গাধা পড়ে আছে।আর জীর্ণ-শীর্ণ কাপড় পরিহিতা এক মহিলা (যাকে দেখে মনে হলো অত্যন্ত শরীফ) তিনি উনার  চাকু মুবারক দিয়ে খচ্চর বা গাধার গোশত কেটে কেটে উনার থলি মুবারকে রাখছেন।

তখন আমার সন্দেহ হলো যে, মহিলাটি মৃত জন্তুর গোশত নিয়ে বাজারে বিক্রি করে কিনা? তা দেখার জন্য আমি অতি সংগোপনে উনার পিছে পিছে যেতে লাগলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর মহিলাটি একটি বাড়ীর দরজার করা নাড়ল, তখন জীর্ণ-শীর্ণ কাপড় পরিহিতা চারটি মেয়ে দরজা খুলে দিল। উনাদেরকে দেখেও মনে হলো উনারা অত্যন্ত শরীফ বংশের লোক। মহিলাটি ঘরে প্রবেশ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় উনাদেরকে বললেন, এ গোশতগুলো পাক কর এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার শুকরিয়া আদায় কর।

আমি এ হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে সেই মহিলাকে ডাক দিয়ে বললাম, “হে মহান আল্লাহর বান্দীরা! আপনাদের এ হারাম গোশত খাওয়ার পিছনে কি কারণ রয়েছে? আপনারা কি মজুসী? আমার জানা মতে মজুসীদের মধ্যে একদল আছে যারা মৃত গাধার গোশত খাওয়া জায়েয মনে করে।” এর জবাবে মহিলাটি পর্দার আড়াল থেকে বললেন, “হে অপরিচিত ব্যক্তি! আপনার হয়তো জানা নেই, আমরা হলাম নবুওওয়াতী খান্দানের লোক অর্থাৎ আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আমাদেরকে যিনি রক্ষাণাবেক্ষণ করতেন এই মেয়েদের পিতা, তিনি গত তিন বৎসর পূর্বে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। পরিত্যক্ত সম্পদ যা ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে। আমাদের জানা আছে যে, মৃত জন্তুর গোশত খাওয়া জায়েয নেই। কিন্তু আমরা আজ তিন দিন যাবত না খেয়ে রয়েছি, এখন আমাদের জন্যে মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া মুবাহ্।”

হযরত রবি বিন সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “আমি সম্মানিতা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম   উনার এই হৃদয় বিদারক ঘটনা শুনে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। অতঃপর বললাম, আপনারা এ সমস্ত খাদ্য দয়া করে খাবেন না। আমি খাদ্যের ব্যবস্থা করছি- বলে বাজারে গিয়ে উনাদের জন্য কাপড়-চোপড় এবং খাবার কিনে নিয়ে আসলাম। আর ছয়শত দিরহাম উনাদেরকে হাদিয়া স্বরূপ দিলাম। যদিও এর কারণে আমার হজ্বে যাওয়ার টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গেল।

এগুলো পেয়ে উনারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।

মহিলাটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক, হজ্জের উনার আগের এবং পরের সমস্ত গুণাহ্ মাফ করুন এবং উনাকে জান্নাত নছীব করুন।”

বড় মেয়েটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! উনার গুণাহমাফ করে দ্বিগুণ ছওয়াব দান করুন।”

দ্বিতীয় মেয়েটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! তিনি যা দান করেছেন, তার চেয়ে বেশী দান করুন উনাকে।”

তৃতীয় মেয়েটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! উনাকে আমাদের নানা রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একত্রিত হওয়ার তৌফিক দান করুন।”

এবং সবশেষে ছোট মেয়েটি বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! তিনি আমাদের প্রতি যে ইহসান করেছেন, উনাকে অচিরেই উত্তম জাযা দান করুন।”

অতঃপর আমি কুফাতে এসে দেখলাম হাজীদের কাফেলা হজ্জের উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছে। তখন আমি সেখানেই রয়ে গেলাম। যথাসময়ে হাজীদের প্রত্যাবর্তনের সময় হয়ে আসল। তাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে দোয়া নেয়ার জন্য আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম।

হাজীদের কাফেলা পর্যায়ক্রমে আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি উনাদেরকে মুবারকবাদ দিচ্ছিলাম। আর উনারা প্রত্যেকেই আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলছিলেন, আপনি কিভাবে আমাদের পূর্বেই চলে আসলেন? আমরা আপনাকে তো আরাফাতের ময়দানে, মুযদালিফায়, মিনাতে, মদীনা শরীফে, হজ্জের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখেছি। এমনকি একজন হাজী বললেন, “আপনি রওজা শরীফ যিয়ারত করার পর বাবে জিব্রাঈল থেকে বের হওয়ার সময় হাজীদের ভীড়ের কারণে আমার কাছে আমানত স্বরূপ এ থলেটি রেখেছিলেন। এখন আপনার থলেটি আপনি গ্রহণ করুন।” উক্ত হাজী ছাহেব এমনভাবে বললেন যে, থলেটি আমাকে গ্রহণ করতেই হলো। কিন্তু ইতোপূর্বে এ থলেটি আর কখনো দেখিনি।

অতঃপর আমি বাড়ীতে এসে ঘটনাগুলো ফিকির করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার মুবারক লাভ হল। আমি সালাম দিয়ে উনার হস্ত মুবারক চুম্বন করলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে বললেন, “হে  রবি বিন সুলাইমান (রহমতুল্লাহি আলাইহি )! তুমি যে হজ্ব করেছ, তা প্রমাণ করার জন্য আমি আর কতজন সাক্ষী পেশ করব?” জবাবে আমি বললাম, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দুনিয়ার আর কেউ না জানুক আপনিতো জানেন যে, আমি এ বৎসর হজ্জ করিনি।”

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ তুমি হজ্জে যাওনি ঠিকই; কিন্তু যখন তুমি আমার সম্মানিতা আওলাদ উনাদের খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিলে, আর উনারা তোমার জন্য দোয়া মুবারক করলেন, তখন আমিও উনাদের সাথে সাথে মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট দোয়া করলাম, যেন মহান আল্লাহ্ পাক তোমাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করেন। এই দোয়ার কারণে মহান আল্লাহ্ পাক তোমার আকৃতিতে একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন। সেই ফেরেশতা তোমার পক্ষ হয়ে, তোমার আকৃতিতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত প্রতি বছর হজ্জ করবেন, আর তার ছওয়াব তোমার আমলনামায় পৌছতে থাকবে। আর উক্ত থলিতে তোমাকে তোমার ছয়শত (৬০০) রৌপ্যমুদ্রার পরিবর্তে (৬০০) স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হয়েছে।”

অতঃপর রাউফুর রহীম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বাক্যটি উচ্চারণ করলেন যে, “আমাদের সাথে যে ব্যবসা করে, সে লাভবান হয়।”

মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে অন্তরের অন্তঃস্থল হতে হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ মুহব্বত করার তৌফিক দান করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন