>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১

ইসলামের দৃষ্টিতে তা’বীয ও ঝাড়-ফুঁক

 বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত যে, তিনি তা’বীয ব্যবহার করা জায়িয বলেন এই শর্তে যে, যদি তা ইরাকী গণকদের মত পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার বিপরীত অপছন্দনীয় কিছু দ্বারা না হয়। যদি পবিত্র কুরআন মাজীদ দ্বারা তাবীয লটকিয়ে অথবা না লটকিয়ে বা ঝাড়-ফুঁক করে রোগ-মুক্তি চাওয়া হয়, তাহলে এমনটি শিরক হবে না।


সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন রহমাতুল্লিল আলামীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

‘যে ব্যক্তি কিছু লটকায় তাকে তার প্রতি সোপর্দ করা হয়।’

অর্থাৎ যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ উনার দ্বারা তা’বীয বানিয়ে গলায় লটকায় এই বিশ্বাসে যে, যার নিয়ন্ত্রণকারী মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই এবং তার ভরসা মহান আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোন গাইরুল্লাহ-র দিকে থাকবে না, তাহলে তা জায়িয। কেননা, এখানে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার রহমত পাওয়াই মুল কাম্য বিষয়। আর তাওয়াক্কুলকারী পবিত্র কুরআন মাজীদ দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কাছেই তাওয়াক্কুল কামনা করে থাকে।

হযরত সাইল ইবনে মুসাইয়্যিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, গলায় তা’বীয ব্যবহার করা কেমন? তিনি জাওয়াবে বললেন:

যদিও তা বাঁশ বেত হাড় ছিদ্র করে হোক অথবা কাগজ বা কাপড়ের টুকরা দ্বারা ব্যবহার করা হোক, এমন তা’বীয ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ তা জায়িয। আর ইহা লেখা হবে পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার থেকেই।

হযরত দ্বহহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন:

কোন ব্যক্তি যদি পবিত্র কিতাবুল্লাহ অর্থাৎ পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার থেকেই তাবীয বানিয়ে ব্যবহার করে তাহলে ব্যবহার করাতে নাজায়িয হবে না। তবে শর্ত হলো ইহা জিমা’ বা আহলিয়ার সাথে একান্ত অবস্থানের সময় এবং ইস্তিন্জা করার সময় খুলে রাখতে হবে। হযরত আবূ জা’ফর মুহাম্মাদ বিন আলী আলাইহিস সালাম তিনি শিশুদের গলায় তা’বীয ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। আর হযরত ইবনু সীরীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার থেকে তা’বীয তৈরি করে মানুষ কর্তৃক ব্যবহার করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা জারী করেননি।’


হযরত আবূ বকর আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আবী শায়বাহ ঈসা কূফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘আল-মুছান্নিফ লিইবনি আবী শায়বাহ’ নামক হাদীছ শরীফ উনার প্রাচীন ও ছহীহ কিতাব উনার ‘কিতাবুত তিব্ব’ উনার মধ্যে তা’বীয জায়িয হওয়ার পক্ষে অনেকগুলো হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে। যা উল্লেখ করা হলো:


۲۱- مَنْ رخَّصَ فِي تعلِيقِ التَّعَاوِيذِ:


عَنْ ابِى عِصْمَةَ رحمة الله عليه قَالَ: سَالْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ رحمة الله عليه عَنِ التَّعْوِيذِ؟ فَقَالَ: لاَ بَأْسَ بِه اِذَا كَانَ فِى ادِيمٍ.


অর্থ: “২১ নং পরিচ্ছেদ- তা’বীয ঝুলানো বা ব্যবহার করতে যাঁরা অনুমতি দিয়েছেন প্রসঙ্গে:


(১) হযরত আবূ ইছমাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমি বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তা’বীযের বিধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জাওয়াবে বললেন: তা’বীয ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই, যদি তা চামড়ায় লেখা হয়।


ব্যাখ্যা: এখানে চামড়ার কথা বলা হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে লেখার যোগ্য দ্রব্যাদীতে লেখা। যেমন: কাগজ, গাছের পাতা, পাথর ইত্যাদী।


عَنْ عَطَاءٍ رحمة الله عليه فِى الْحَائِضِ يَكُونُ علَيْهَا التَّعْوِيذُ قَالَ: انْ كَانَ فِى ادِيمٍ فَلْتَنْزِعْهُ، وَ انْ كَانَ فِى قَصَبَةِ فِضَّةٍ فَإِنْ شَاءَتْ وَضَعَتْهُ وَانْ شَاءَتْ لَمْ تَضَعْهُ.


(২) হযরত আত্বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহিলাদের হায়েয অবস্থায় তা’বীয ব্যবহার করা সম্পর্কে বলেন: যদি খোলা চামড়ায় লেখা হয় তাহলে উক্ত মাজুরতা অবস্থায় খুলে রাখতে হবে। কিন্তু যদি খোলের মধ্যে ভরানো থাকে, তাহলে ইচ্ছা হলে খুলে রাখতেও পারে অথবা ইচ্ছা হলে না খুলতেও পারে।


عَنْ ثُوَيْرٍ رحمة الله عليه قَالَ: كَانَ مُجَاهِدٌ رحمة الله عليه يَكْتُبُ للنَّاس التَّعْوِيذَ فَيُعَلِّقُه عَلَيْهِمْ.


(৩) হযরত ছুওয়াইর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মানুষদের জন্য তা’বীয লেখতেন এবং তা তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন।


عَنْ جَعْفَرٍ رحمة الله عليه عَنْ ابِيهِ اَنَّه كَانَ لاَ يَرٰى بَأْسًا اَنْ يَكْتُبَ الْقُرْانَ فِى اَدِيمٍ ثُمَّ يُعَلِّقُه.


(৪) হযরত জা’ফর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি (উনার পিতা) পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ উনার দ্বারা চামড়ার উপর তা’বীয লেখতে অসুবিধা মনে করতেন না এবং তা ব্যবহার করতেন।


عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ رحمة الله عليه عَنْ اَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اِذَا فَزِعَ اَحَدُكُمْ فِى نَوْمِه فَلْيَقُلْ: اَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِه وَسُوءِ عِقَابِهِ وَمِنْ شَرِّ عِبَادِه وَمِنْ شَرِّ الشَّيَاطِينِ وَمَا يَحْضُرُونِ، فَكَانَ عَبْدُ اللهِ رضى الله عنه يُعَلِّمُهَا وَلَدَهُ مَنْ اَدْرَكَ مِنْهُمْ، وَمَنْ لَمْ يُدْرِكْ كَتَبَهَا وَعَلَّقَهَا عَلَيْهِ.


(৫) হযরত আমর বিন শুয়াইব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে, তিনি উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (উনার দাদা) বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঘুমে ভয় পাওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে সে যেন পাঠ করে ‘আয় আল্লাহ তায়ালা! আমি পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা উনার গযব থেকে পানাহ চাই, খারাপ পরিনতি থেকে পানাহ চাই, অসৎ মানুষের অনিষ্টতা থেকে পানাহ চাই, শয়তানদের অনিষ্টতা থেকে পানাহ চাই যারা হাযির হয়।’ হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি উনার সন্তানকে এই দুয়া’ শিক্ষা দিতেন যাঁরা দুয়া’র মর্ম বুঝত, আর যাঁরা দুয়া’ উনার মর্ম বুঝত না তিনি উনাদের জন্য তা লিখে গলায় ঝুলিয়ে দিতেন।


عَنِ ابْنِ سِيرِينَ رحمة الله عليه اَنَّه كَانَ لاَ يَرٰى بَأْسًا بِالشَّيْءِ مِنَ الْقُرْانِ.


(৬) হযরত ইবনু সীরীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ দ্বারা তা’বীয তৈরি করতে কোন অসুবিধা মনে করতেন না।


قَالَ: حدَّثَنَا اَيُّوبُ رحمة الله عليه اَنَّه رَاَى فِى عَضُدِ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رحمة الله عليه خَيْطًا.


(৭) রাবী বলেন, আমরা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছি হযরত আইয়্যূব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি একদা হযরত উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উমর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বাহুতে একটি সুতা বাঁধা দেখলেন।


عَنْ عَطَاءٍ رحمة الله عليه قَالَ لاَ بَأْسَ اَنْ يُعَلَّقَ الْقُرْانُ.


(৮) হযরত আত্বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: পবিত্র কুরআন মাজীদ (অথবা কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ) গলায় লটকানোতে কোন অসুবিধা নেই।


عَنْ يُونُسَ بْنِ خَبَّابٍ رحمة الله عليه قَالَ: سَاَلْتُ اَبَا جَعْفَرٍ رحمة الله عليه عَنِ التَّعْوِيذِ يُعَلَّقُ عَلَى الصِّبْيَانِ؟ فَرَخَّصَ فِيهِ.


(৯) হযরত ইঊনুস বিন খব্বাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমি হযরত আবূ জা’ফর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে শিশুদের গলায় তা’বীয ঝুলানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম? তিনি ইহা ব্যবহারের অনুমতি দিলেন।


عَنِ الضَّحَّاكِ رحمة الله عليه اَنَّه لَمْ يَكُنْ يَرٰى بَأْسًا اَنْ يُعَلِّقَ الرَّجُلُ الشَّيْءَ مِنْ كِتَابِ اللهِ اِذَا وَضَعَه عِنْدَ الْغُسْلِ وَعِنْدَ الْغَائِطِ.


(১০) হযরত দ্বহহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোন ব্যক্তির পক্ষে পবিত্র কিতাবুল্লাহ থেকে আয়াত শরীফ দ্বারা তা’বীয ব্যবহার করতে নাজায়িয মনে করতেন না। যখন তা গোসল ও জরুরত সারার সময় খুলে রাখা হয়।”


ফিক্বহ ও ফতওয়া উনাদের কিতাবেও উল্লেখ আছে, হযরত মুহাম্মাদ বিন আলী বিন মুহাম্মাদ বিন আলী বিন আব্দুর রহমান হাছকাফী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘আদ-দুররুল মুখতার আলা তানবীরিল আবছার’ নামক কিতাব উনার ‘কিতাবুল হাযার ওয়াল ইবাহাহ’ অধ্যায়ের ‘ফাছলুন ফিল্ লুব্স’ পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে-


فِى الْمُجْتَبَى التَّمِيمَةُ الْمَكْرُوهَةُ مَا كَانَ بِغَيْرِ الْعَرَبِيَّةِ


অর্থ: ‘আল-মুজতাবা’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, আরবী ভাষায় না হলে তামীমাহ বা তা’বীয ব্যবহার করা মাকরূহ হবে। আর যদি আরবী ভাষায় হয় তাহলে মাকরূহ হবে না।


হযরত উরওয়াহ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করেন, তখন উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে একজন শিশু কাঁদছিল। উনাকে শিশুটির বদনযর লাগার কথা জানানো হলো। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: বদনযর থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে (শিশুটিকে) কি ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে? হযরত ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমরা এই হাদীছ শরীফ উনাকে গ্রহণ করেছি। আমরা ঝাড়-ফুঁক করাকে অসুবিধা (অবৈধ) মনে করি না, যখন মহান আল্লাহ তায়ালা উনার স্মরনে তা করা হয়। (আল-মুয়াত্তা লিল্ ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাবুর রুক্বা ৩৭৪ পৃষ্ঠা)


অত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘আওজাযুল মাসালিক আলাল মুয়াত্তা লিল্ ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি’ কিতাবের ‘বাবুর রুক্বা’ পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে,


قوله افلا تسترقون له من العين هذا وامثاله مصرح بجواز الرقية. (اوجز المسالك على الموطا للامام مالك رحمة الله عليه(


অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইরশাদ মুবারক (বদনযর থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে কি ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে?) ঝাড়-ফুঁক জায়িয হওয়ার ব্যাপারে ইহা ও এই দৃষ্টান্ত স্পষ্ট। অর্থাৎ ঝাড়-ফুঁক করা ও গ্রহণ করা জায়িয। সুবহানাল্লাহ।


পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে,


عن حضرت انس رضى الله عنه قال رخص رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الرقية من العين والحمة والنملة. (مشكوة المصابيح كتاب الطب والرقى الفصل الاول، صحيح البخارى شريف، صحيح المسلم شريف(


অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: কারো উপর বদনযর লাগলে, কোনো বিষাক্ত প্রাণী দংশন করলে এবং পাঁজরে খুজলি উঠলে নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঝাড়ফুঁক করতে অনুমতি দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)


عن حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت امر النبى صلى الله عليه وسلم ان يسترقى من العين.


অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: কারো উপর বদনযর লাগলে নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঝাড়ফুঁক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল বুখারী শরীফ, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)


عن حضرت ام سلمة عليها السلام ان النبى صلى الله عليه وسلم راى فى بيتها جارية فى وجهها سفعة يعنى صفرة فقال استرقوا لها فان بها النظرة.


অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। একদা নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার (উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার) হুজরা শরীফ উনার মধ্যে একটি মেয়ে দেখতে পেলেন, তার চেহারায় বদনযরের চিহ্ন ছিল। অর্থাৎ চেহারাটি হলুদ বর্ণ ধারণ করেছিল। ইহা দেখে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: তাকে ঝাড়ফুঁক করুন, কেননা তার উপর বদনযর লেগেছে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল বুখারী শরীফ, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)


عن حضرت جابر رضى الله عنه قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الرقى فجاء ال عمرو بن حزم فقالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انه كانت عندنا رقية نرقى بها من العقرب وانت نهيت عن الرقى فعرضوها عليه فقال ما ارى بها بأسا من استطاع منكم ان ينفع اخاه فلينفعه.


অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মন্তর বা ঝাড়ফুঁক করা হতে নিষেধ করেছেন। (এই নিষেধের পর) আমর বিন হাযম-এর বংশের কয়েকজন লোক এসে আরজ করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কাছে এমন একটি মন্তর আছে, যার দ্বারা আমরা বিচ্ছুর দংশনে ঝাড়ফুঁক করে থাকি। অথচ আপনি মন্তর পড়া হতে নিষেধ করেছেন। অতপর উনারা মন্তরটি নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পড়ে শুনালেন। ইহা শুনে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি তো এটার মধ্যে দোষের কিছু দেখছি না। অতএব তোমাদের যে কেউ নিজের কোন ভাইয়ের উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)


عن حضرت عوف بن مالك الاشجعى رضى الله عنه قال كنا نرقى فى الجاهلية فقلنا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف ترى فى ذلك فقال اعرضوا على رقاكم لا بأس بالرقى ما لم يكن فيه شرك.


অর্থ: হযরত আওফ বিন মালিক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: জাহিলী যুগে আমরা মন্তর পড়ে ঝাড়ফুঁক করতাম। সুতরাং (পবিত্র দীন ইসলাম গ্রহণের পর) আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ সমস্ত মন্তর সম্পর্কে আপনার মুবারক ফায়সালা কি? তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: আচ্ছা, আপনাদের মন্তরগুলো আমাকে পড়ে শুনান। (তবে জেনে রাখুন) মন্তর দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে কোন আপত্তি নেই, যদি তার মধ্যে শিরক কিছু না থাকে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)


عن حضرت عمران بن حصين رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا رقية الا من عين او حمة.


অর্থ: হযরত ইমরান ইবনে হুছাঈন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: বদনযর কিংবা কোনো বিষাক্ত প্রাণীর দংশনের বেলায়ই ঝাড়ফুঁক রয়েছে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুছ ছানী, মুসনাদ আহমাদ বিন হাম্বাল, আল-জামিউ ওয়াস সুনানু লিত্ তিরমিযী শরীফ, সুনানু আবী দাঊদ শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন