>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১

পিতা ও মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব -কর্তব্য

পিতা ও মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব -কর্তব্য পর্ব -০১

পিতার আদেশ যখন শরীয়ত সম্মত হবে  তখন সেটা সন্তানের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে অন্যথায়  সন্তানের জন্য সেটা অগ্রহণযোগ্য বলে বিবোচিত হবে । তখন অন্য কোন ব্যবস্থা করে ফয়ালা করার চেষ্টা করতে হবে ।

 যেমন   এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে ,

 মহান আল্লাহ পাক উনার  নবী হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম যখন হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম উনাকে এবং হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে  মক্কা শরীফে রেখে  চলে যান । এর পর তিনি মাঝে মাঝে এসে দেখে যেতেন । এদিকে হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যখন  বড় হলেন, উনার মাতা যুরহাম গোত্রে উনাকে বিবাহ করালেন  ।  এবং হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে   বিবাহ করালেন উনার মাতা । তাই তিনি সেখানে থাকতেন ।  মাঝে-মধ্যে এদিক-সেদিক শিকারেও যেতেন অথবা কোন জরুরী কাজেও বের হতেন ।  একদিন তিনি বের হয়েছেন,তিনি বাড়িতে ছিলেননা  ।  এমন সময়  মহান আল্লাহ পাক উনার  নবী হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আসলেন  ঘোড়ায়  চড়ে। এসে  সংবাদ  নিলেন ,"ঘরে কে রয়েছে,ঘরে কেউ  নেই ? "  তিনি দেখলেন, ঘরে একটা মেয়ে রয়েছে ।  জিজ্ঞাসা করলেন, " তুমি কে ? " ঐ মেয়ে পরিচয় দিলেন যে, " আমি হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়াহ । "মহান আল্লাহ পাক উনার  নবী হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন," কেমন আছ তোমরা  ? " জবাব দিল , খুব কষ্টে আছি, খাওয়া-পরা ইত্যাদি অসুবিধা রয়েছেন। " স্বামী তোমার সাথে কেমন ব্যবহার করে থাকেন ? "   "করেন এক রকম । " কথা গুলো হালকা হালকা ছিল যা মহান আল্লাহ পাক উনার জলীল ক্বদর নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শান ও মর্যাদা সে অনুযায়ী ছিল না । বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করলেন কিন্তু সেই বৃদ্ধ লোকটিকে সেই মহিলা চিনলোনা যে,উনি মহান আল্লাহ পাক উনার  নবী হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ আলাইহিস সালাম । শেষ পর্যন্ত তিনি কিছুক্ষণ সেই ঘোড়ার উপর  থেকে ( মহান আল্লাহ পাক উনার  নির্দেশ ছিল যে, আপনি নামতে পারবেন না  । ঘোড়ার উপর ছাওয়ার অবস্থায় সংবাদ নিতে হবে। ) " সংবাদ নিলেন; কিন্তু সেই মহিলা অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার জলীল ক্বদর নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়াহ  কিছুই বললেন না । মহান আল্লাহ পাক উনার  নবী হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ আলাইহিস সালাম শেষ  পর্যন্ত বললেন,"এক কাজ কর, আমি চলে যাচ্ছি। তোমার স্বামী আসলে বলো যে, এ ধরনের একজন বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন, উনি এসে বলে গেছেন যে , আপনাকে অর্থাৎ  মহান আল্লাহ পাক উনার জলীল ক্বদর নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস  সালাম  উনাকে ,"আপনার ঘরের চৌকাঠটা পাল্টিয়ে  ফেলতে হবে । " কারণ চৌকাঠটা ভাল নয়, তাই পাল্টিয়ে ফেলতে হবে । " এ কথা বলে তিনি চলে গেলেন ।  এদিকে  মহান আল্লাহ পাক উনার  জলীল ক্বদর নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম  তিনি আসলেন । আসার পর উনার আহলিয়াহ সংবাদ দিলেো যে, এ রকম আকার-আকৃতি মুবারক বিশিষ্ট একজন বৃদ্ধ এসেছিলেন?

মহান আল্লাহ পাক উনার জলীল ক্বদর নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি চিনতে পারলো যে, "উনার সম্মানিত পিতা এসেছিলেন । " শুনে তিনি বললেন,"আমার পিতাকে খেদমত মুবারক করলে না? তা'যীম-তাকরীম মুবারক করলেনা ? স্ত্রী বললো," উনি নামেননি, কাজেই আমার পক্ষে  কিছু করা সম্ভব ছিলনা । তাই আমি কিছু করিনি  । " তখন মহান আল্লাহ পাক উনার জলীল ক্বদর নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন," তিনি কি বলেছেন ? " তিনি বলেছেন, " কেমন আছ ? " আমি বলেছি " কষ্টে আমাদের দিন যাপন  হচ্ছে,কিছু অসুবিধাও আছে নানান দিক থেকে । " তিনি কি বললেন যে, " ঘরের চৌকাঠ পাল্টানোর জন্য । আমি যেন আপনাকে বলি, আপনার  ঘরের চৌকাঠটা পাল্টিয়ে ফেলার জন্য । "  তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম বললেন যে, " দেখ ! আমার সম্মানিত  পিতা এসেছিলেন ।  তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খলিল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ।  তিনি বলেছেন," চৌকাঠ পাল্টানোর জন্য । অর্থাৎ তোমাকে তালাক দেওয়ার জন্য । কাজেই আমি তোমাকে তালাক দিলাম   । "  বলে  তালাক  দিয়ে দিলেন সাথে  সাথে  ।  তালাক দেয়া হলো  ।আ হলিয়া হ চলে  গেল । হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম আর একটা বিবাহ করলেন।

দ্বিতীয় বিবাহের বেশ  কিছুদিন  পর মহান আল্লাহ পাক উনার খলিল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আবার আসলেন। এসে উনি উনার নিয়মানুযায়ী  অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক আপনি ছওয়ারী থেকে নামতে পারবেন না । তিনি সেই ছওয়ারীতে চড়ে ঘরের সামনে আসলেন । সেদিনও মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম  বাড়িতে ছিলেন না । মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস  সালাম  উনার দ্বিতীয় আহলিয়াহ ঘরে অবস্থান করতেছিলেন । যখন ঘরের সামনে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম থামলেন, হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম  উনার আহলিয়াহ দৌড়ে আসলেন, এসে আদবের সহিত জিজ্ঞাসা করলেন, " আপনি কাকে চাচ্ছেন ? " হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, " আমি হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে চাচ্ছি । "   হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার স্ত্রী বললেন, " দেখে তো মনে হচ্ছে আপনার আকার-আকৃতি মুবারক, চেহারা মুবারক উনার অনুরুপ । আপনি কি উনার সম্মানিত পিতা  ? " " হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, " হ্যাঁ আমি উনার সম্মানিত পিতা । " হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়াহ আরজু করলেন,কাকুতি-মিনতি করলেন, আপনি দয়া করে নামুন একটু আমাদের এখানে , আমি একটু খেতমত করি আপনার । "  হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, " আমার প্রতি মহান আল্লহ পাক উনার  আদেশ নেই নিচে নামার  । "  তখন  হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়াহ  " কিছু পানি এনে  বললেন , " আমার খেদমত মুবারক করার তেমন কিছু নেই  । "  বলে পানি দিয়ে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম  উনার পা মুবারক ধোয়ায়ে দিলেন । ধোয়ায়ে দিয়ে উনার  চুল দিয়ে পা মুবারক মুছে  দিলেন ।  মুছে দেয়ার পর মহান আল্লাহ পাক উনার  নবী হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন,"কেমন আছ তোমরা ? " উনি বললেন , " মহান আল্লাহ পাক খুব সুখে রেখেছেন ,শান্তিতে রেখেছেন । সব দিক দিয়ে আমরা এতমিনান , কোন অসুবিধা নেই । "  যখন হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়াহ  সে সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলেন ,উনি বললেন  যে , ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি । আমি তোমাদের জন্য দো'য়া করতেছি  । তবে তোমার স্বামী আসলে বলবে যে , " আমি এসেছিলাম এবং আমি বলে গেছি যেন ঘরের  চৌকাঠ  আর পাল্টানো  না হয় । উত্তম চৌকাঠ হয়েছে এবার  । চৌকাঠ যেন  আর পাল্টানো  না হয় । এটা তোমার স্বামীকে বলে  দিও । "  উনি বলে চলে গেলেন ।  হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম আসলেন । এসে যখন পৌছঁলেন , তখন উনার আহলিয়াহ বললেন , উক্ত ঘটনা শেষ পর্যন্ত । এটাও বললেন যে , উনি বলে গেছেন আমাকে আপনি যেন আপনার ঘরের  চৌকাঠ  আর পাল্টানো  না হয় ।  অর্থাৎ ঘরের উত্তম চৌকাঠ হয়েছে । " । মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম  বললেন  ,"  হ্যাঁ এর অর্থ তুমি কি বুঝতে পেরেছ  ? " উনি বলছেন , " তোমার কথা । তোমাকে যেনতালাক না দেয়া হয়  , তোমাকে নিয়েই যেন আমি ঘর -সংসার করি  । " এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম   সেই আহলিয়াহ কে নিয়েই ঘর -সংসার  করিয়েছিলেন।

কাজেই সন্তানকে যদি শরীয়তসম্মত নির্দেশ দেয়া হয় তা  অবশ্যই পালন  করতে  হবে। আর যদি শরীয়ত বিরোধী আদেশ করা হয় তা পালন করা সন্তানের  দায়িত্ব থাকেনা । যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার খলিল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার নবী  ছিলেন । তিনি ওহী ছাড়া কোন কাজ করতেন না । তিনি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি পাল্টিয়ছেন ।

অতএব , সন্তানের প্রতি পিতার হক্ব রয়েছে অনেক ও পিতার প্রতি সন্তানের হক্বও রয়েছে অনেক ।তাই প্রত্যেকেরই সেটা যথাযথ আদায় করতে হবে ।  এর খেলাপ কাজ করলে প্রত্যেককেই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জবাবদিহী করতে হবে । 

সন্তানের হক্ব ও পিতার হক্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন ,

" তোমরা আদেশ কর। আদেশ করে তোদের সন্তানদেরকে নামাযের জন্য । যখন  বয়স  সাত  বছর  হয়ে  যাবে , আর দশ বছর হলে সে নামায আদায় না করে তাহলে তাকে শাস্তি দাও এবং বিছানা আলাদা করে  দাও । মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল  আদেশ  করেছেন , নির্দেশ দিয়েছেন যে , পিতার হক্ব হচ্ছে  সন্তানের যা শরয়ী দায়িত্ব-কর্তব্য , সেটা পালন করানো সন্তানকে দিয়ে । "







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন