পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার ফাযায়ীল -ফযীলত, মর্যাদা -মর্তবা ও উনার গুরুত্ব
প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় পর্বে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু রোযা , রোযাদার ও রোযাদার ব্যক্তিকে মুহব্বতকারী এবং পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসের ফাযায়ীল -ফযীলত, মর্যাদা -মর্ত্তবা ও উনার গুরুত্ব
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি মুমিনদের জন্য পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে রোযা বা সাওম ফরয করে দিয়েছেন । সেই সাথে তিনি রোযা , রোযাদার ও রোযাদার ব্যক্তিকে মুহব্বতকারী এবং পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসকে বিরাট মর্যাদাও দান করেছেন ।
যেমন :
০১. " বুখারী শরীফ " উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জবান মুবারকে ইরশাদ মুবারক করেন ,
- "পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস আগমনে আসমানের দূয়ার খুলে দেয়া হয় । "
০২ ." বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ " এর মধ্যে অনেক রেয়ায়েতে রোযা , রোযাদার ও পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের মর্যাদা ও ফযীলত বহু উল্লেখ আছে তন্মধ্যে কতিপয় ফদ্বীলত বর্ণনা করা হলো :
- পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস এলে বেহেশতের দরজা খুলে দেয়া হয় ।
- পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস এলে রহমতের দূয়ার খুলে দেয়া হয় ।
- রোযা হচ্ছে ঢাল স্বরুপ ।
- রোযাদারদের মুখের গন্ধ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও সুগন্ধিময় ।
- রোযাদারদের জন্য দু'টি আনন্দের সময় : একটি হলো ইফতারের সময় আর অপরটি হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাতের সময় ।
- মহান আল্লহ পাক বলেন : " আদম সন্তানদেরকে তাদের নেক আমলের জন্য দশ থেকে সাতাশ গুন বিনিময় দেয়া হয় । তবে রোযার কথা ভিন্ন । সাওম ( রোযা ) আমারই জন্য , আমি এর যতখুশি তত বিনিময় দেবো । কারণ রোযাদার আমার জন্য প্রবৃত্তির কামনা এবং পানাহার ত্যাগ করে ।"
- জান্নাতের আটটি গেইট আছে । এর মধ্যে একটি হচ্ছে রাইয়্যান । রোযাদাররা ব্যতিত অন্য কেউ এই গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না ।
- যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্নসমালোচনার সাথে পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসের রোযা রাখবে , তার পূর্বকার গুনাহ -খাতা মাফ করে দিবেন ।
- যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদর শরীফে ঈমান ও আত্নসমালোচনার সাথে পবিত্র ইবাদত করবে , তার পূর্বকার গুনাহ -খাতা মাফ করে দিবেন ।
সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম !
" বায়হাক্বী শরীফ " এর মধ্যেও রোযা , রোযাদার রোযাদার ব্যক্তিকে মুহব্বতকারী এবং পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসের মর্যাদা ও ফযীলত বহু উল্লেখ আছে তন্মধ্যে কতিপয় ফীলত বর্ণনা করা হলো :
- পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসের প্রথম ১০ দিন রহমত , মাঝের ১০ দিন মাগফিরাত বা ক্ষমার আর শেষের ১০ দিন নাজাতের বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভে ।
- যে ব্যক্তি মাহেপবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে মহান আল্লাহ পাক
- উনার নৈকট্য লাভের জন্য একটি নফল ইবাদত বা কাজ করল , ঐ ব্যক্তির সমতুল্য , যে অন্য সময় একটি ফরয আদায় করল ।
- যে ব্যক্তি পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসে একটি ফরয আদায় করল ঐ ব্যক্তির সমতুল্য , যে অন্য সময় সত্তরটি ফরয আদায় করল ।
- তোমাদের উপর মহান ও মুবারক পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস উনার ছায়া বিস্তার করেছে । এ মাসে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম একটি রাত আছে ।
- পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস সবরের মাস , আর সবরের পুরষ্কার হলো জান্নাত ।
- পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস পারস্পারিক সহানূভুতি প্রকাশের মাস ।
- পবিত্রমাহে রমাদ্বান শরীফ মাসে মুমিনদের জীবিকা বৃদ্ধি করে দেয়া হয় ।
- যে ব্যক্তি পবিত্রমাহে রমাদ্বান শরীফ মাসে কোনো রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করাবে , তার গুনাহ মাফ ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে ।
- যে ব্যক্তি পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসে কোনো রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করাবে , সে ঐ রোযাদারের সমপরিমান সওয়াব পাবে , তবে ঐ রোযাদারের সওয়াবের কমতি করা হবে না ।
- যে ব্যক্তি কোনো রোযাদার ব্যক্তিকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে , মহান আল্লাহ পাক তাকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন । এরপর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে আর তৃষ্ণান্ত হবেনা ।
- যে ব্যক্তি পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসে অধীনস্তদের উপর থেকে কার্যভার লাঘব করবে , মহান আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেবন ।
- রোযা ও পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ বান্দার জন্য সুপারিশ করবে । রোযা বলবে: আয় মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ! আমি তাকে পানাহার ও প্রবৃত্তির বাসনা পূর্ণ করতে বাধা দিয়েছি , সুতরাং তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন । পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ বলবে: আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বাধা দিয়েছি ,সুতরাং তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন ।
সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম !
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের ফযীলত ও বরকত সম্পর্কে মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামে রব্বানী , কুতুবে রব্বানী , ক্বইয়্যূমুল আউওয়াল , আফদ্বালুল আউলিয়া আল ফারুকী সিরহিন্দী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি " মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী " তে বলেন :-
- এ মাসে ( পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে ) কল্যাণ ও বরকতের সমন্বয় ঘটেছে । গোটা বছর মানুষ যত বরকত হাসিল করে , তা এ মাসের তুলনায় এতোটা তুচ্ছ যতোটা তুচ্ছ মহাসমূদ্রের তুলনায় এক ফোঁটা পানি । এ মাসে যে পরিমান অভ্যন্তরীণ শান্তি ও সুস্থতা লাভ করা যায় , গোটা বছরের জন্য তা যথেষ্ঠ। পক্ষান্তরে এ মাসের অশান্তি ও মানসিক অসুস্থতা গোটা বছরের উপর প্রভাব বিস্তার করে । ঐ সব লোকেরা সৌভাগ্যবান , এ মাস যাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলো । পক্ষান্তরে ঐ সব লোকের জন্য ব্যর্থ ও বদনসীব , এ মাস অসন্তুষ্ট হলো যাদের প্রতি এবং যারা বঞ্চিত হলো সর্বপ্রকার কল্যাণ ও বরকত থেকে । "
" মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী , পৃষ্ঠা ৪৫ " পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের ফযীলত ও বরকত সম্পর্কে মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামে রব্বানী , কুতুবে রব্বানী , ক্বইয়্যূমুল আউওয়াল , আফদ্বালুল আউলিয়া আল ফারুকী সিরহিন্দী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
- " এ মাসে যদি কোনো ব্যক্তি নেক আমলের তৌফিক লাভ করে , তবে গোটা বছর তৌফিক ও সৌভাগ্য তার সঙ্গদান করবে ।
- আর এ মাস যদি তার মানসিক অধঃপতন আন্তরিকতাহীনতা ভাবে কাটে , তবে গোটা বছর এ ভাবে অতিবাহিত হবার আশঙ্কা আছে । "
" ইহয়াউল উলুম ১ম খন্ড " তে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের ফযীলত ও বরকত সম্পর্কে মুজাদ্দিদুয যামান, হুজ্জতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন ,
- " রোযার উদ্দেশ্য হচ্ছে , মানুষ খোদায়ী স্বভাবের একটি স্বভাব নিজের মধ্যে সৃষ্টি করবে । এ গুণটি হচ্ছে সামাদিয়াত বা মুখাপেক্ষীহীন হওয়া । মানুষ সাধ্য অনুযায়ী হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের অনুসরণে আত্নার কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত হবে । কারণ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কামনা-বাসনা থেকে পবিত্র এবং মানুষের মর্যাদা তো পশুর চেয়ে অনেক উর্ধ্বে । তাছাড়া কামনা-বাসনা কে দমন করার জন্য তাকে বুদ্ধি ও বিবেক দন করা হয়েছে । অবশ্যই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে মানুষের পার্থক্য এখানে যে , মানুষের উপর কমনা - বাসনা বিজয়ী হয়ে যায় এবং এ থেকে তাকে পবিত্র হবার জন্য তাকে কঠিন মুজাহেদা করতে হয় । যখন তার কামনা - বাসনা তার উপর বিজয়ী হয়ে যায় ,যখন সে 'আসফালা সাফেলীন ' বা সর্বনির্কষ্ট স্তরে পৌঁছে যায় , তখন তার মধ্যে আর পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকেনা । আর যখন কামনা - বাসনার উপর সে বিজয়ী হয় তখন সে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদায় ভূষিত হয় এবং সে পৌঁছে যায় হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ( স্বভাবের ) জগতে । "
সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী , কুতুবে রব্বানী ,গাউসূল আ'যম, মুহিউদ্দীন, মুজাদ্দিদুয যামান হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি " গুনিয়াতুত তালেবীন , অ, ধ্যায় ২২ " তে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের ফযীলত ও বরকত সম্পর্কে বলেন.
- " জেনে রাখ তে পবিত্র রমাদ্বান শরীফই পবিত্রতা অর্জন ও আত্নশুদ্ধির মাস । এ মাস মহান খোদার ( আল্লাহ পাক উনার ) অনুগত বান্দাহদের মাস । , সব লোকেদের মাস যারা মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণে অন্তর কে সিক্ত রাখে । ঐ সব লোকদের মাস , সত্য ও সবর যাদের ভূষণ । এ মাস যদি তোমার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে না পারে , গুনাহ থেকে তোমাকে বিরত রাখতে না পারে , বেদআতপন্থী ও বদকারদের সংশ্রব থেকে ফিরিয়ে রাখতে না পারে , তবে আর কোন জিনিস তোমাকে এসব থেকে হিফাযত করবে ? এর চেয়ে উত্তম কোনো জিনিস কী আছে , যা তোমার উপর প্রভাব বিস্তার ফেলতে পারবে ? এমতাস্থায় তোমার দ্বারা কোনো নেক কাজের আশা করা যায় না এবং তোমার পক্ষে কোনো বদ কাজ থেকে বিরত থাকারও সম্ভবনা দেখা যায় না । মুক্তি ও নাজাতের কোনো ঊপায় তোমার নেই । "
- " রমাদ্বান শরীফ মাস তোমার দোস্ত ! অশ্রু দিয়ে এই মাস কে বিদায় দাও । অন্তরের সমস্ত খারাবী দূরে নিক্ষেপ করো । বড় বেশি কান্না কাটি করো । এতে সন্দেহ রয়েছে আগামী বছর পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস তোমার ভাগ্যে জুটবে কিনা । অনেক রোযাদার এমন আছে , যারা আর একটি মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস পাবে না । "
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন