>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১

পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার ফাযায়ীল -ফযীলত, মর্যাদা -মর্তবা ও উনার গুরুত্ব

পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার ফাযায়ীল -ফযীলত, মর্যাদা -মর্তবা ও উনার গুরুত্ব 

প্রথম পর্ব পড়তে  এখানে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় পর্বে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু  রোযা  , রোযাদার  ও রোযাদার ব্যক্তিকে মুহব্বতকারী এবং  পবিত্র  মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসের ফাযায়ীল -ফযীলত, মর্যাদা -মর্ত্তবা ও উনার গুরুত্ব

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি মুমিনদের জন্য পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে রোযা বা সাওম ফরয করে দিয়েছেন । সেই সাথে তিনি রোযা  , রোযাদার  ও রোযাদার ব্যক্তিকে মুহব্বতকারী এবং  পবিত্র  মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসকে বিরাট মর্যাদাও দান করেছেন ।

যেমন :

০১. " বুখারী শরীফ " উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জবান মুবারকে ইরশাদ মুবারক করেন ,

  •  "পবিত্র মাহে  রমাদ্বান শরীফ মাস আগমনে আসমানের দূয়ার খুলে দেয়া হয় । "

০২ ." বুখারী শরীফ  ও মুসলিম শরীফ " এর মধ্যে  অনেক রেয়ায়েতে রোযা , রোযাদার ও পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের  মর্যাদা ও  ফযীলত বহু উল্লেখ আছে তন্মধ্যে কতিপয় ফদ্বীলত বর্ণনা করা হলো : 

  • পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস এলে বেহেশতের দরজা খুলে দেয়া হয় । 
  • পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস এলে রহমতের দূয়ার খুলে দেয়া হয় । 
  • রোযা হচ্ছে ঢাল স্বরুপ ।
  • রোযাদারদের মুখের গন্ধ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও সুগন্ধিময় । 
  • রোযাদারদের  জন্য দু'টি আনন্দের সময় : একটি হলো ইফতারের সময় আর অপরটি  হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাতের সময় ।
  •  মহান আল্লহ পাক বলেন : " আদম সন্তানদেরকে তাদের নেক আমলের জন্য  দশ থেকে সাতাশ গুন বিনিময় দেয়া হয় । তবে রোযার কথা ভিন্ন । সাওম ( রোযা ) আমারই  জন্য , আমি এর যতখুশি তত বিনিময় দেবো । কারণ রোযাদার আমার জন্য প্রবৃত্তির কামনা এবং পানাহার ত্যাগ করে ।"
  •  জান্নাতের  আটটি গেইট আছে । এর মধ্যে একটি হচ্ছে রাইয়্যান । রোযাদাররা ব্যতিত অন্য কেউ এই গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না । 
  • যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্নসমালোচনার সাথে পবিত্র  মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসের রোযা রাখবে , তার পূর্বকার গুনাহ -খাতা মাফ করে দিবেন ।
  • যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদর শরীফে ঈমান ও  আত্নসমালোচনার সাথে  পবিত্র ইবাদত করবে , তার পূর্বকার গুনাহ -খাতা মাফ করে দিবেন ।

সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  !  

" বায়হাক্বী শরীফ " এর মধ্যেও রোযা , রোযাদার রোযাদার ব্যক্তিকে মুহব্বতকারী এবং  পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসের  মর্যাদা ও  ফযীলত বহু উল্লেখ আছে তন্মধ্যে কতিপয় ফীলত বর্ণনা করা হলো : 

  • পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসের প্রথম ১০ দিন রহমত , মাঝের  ১০ দিন  মাগফিরাত বা ক্ষমার আর শেষের ১০ দিন নাজাতের বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভে । 
  • যে ব্যক্তি   মাহেপবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে মহান আল্লাহ পাক
  • উনার নৈকট্য লাভের জন্য একটি নফল ইবাদত বা কাজ করল , ঐ ব্যক্তির সমতুল্য , যে অন্য সময় একটি ফরয আদায় করল । 
  • যে ব্যক্তি  পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাসে একটি  ফরয আদায় করল ঐ ব্যক্তির সমতুল্য , যে অন্য সময় সত্তরটি  ফরয আদায় করল । 
  • তোমাদের উপর মহান ও মুবারক পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস উনার ছায়া বিস্তার করেছে । এ মাসে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম একটি রাত আছে । 
  •  পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস সবরের মাস , আর সবরের পুরষ্কার হলো জান্নাত । 
  •  পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস  পারস্পারিক সহানূভুতি প্রকাশের মাস ।
  •  পবিত্রমাহে  রমাদ্বান শরীফ মাসে মুমিনদের জীবিকা বৃদ্ধি করে দেয়া হয় । 
  • যে ব্যক্তি  পবিত্রমাহে  রমাদ্বান শরীফ মাসে  কোনো রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করাবে , তার গুনাহ মাফ ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে । 
  • যে ব্যক্তি  পবিত্র মাহে  রমাদ্বান শরীফ মাসে  কোনো রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করাবে , সে ঐ রোযাদারের সমপরিমান সওয়াব  পাবে , তবে ঐ রোযাদারের সওয়াবের কমতি করা হবে না ।
  • যে ব্যক্তি   কোনো রোযাদার ব্যক্তিকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে  , মহান আল্লাহ পাক তাকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন । এরপর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে আর তৃষ্ণান্ত হবেনা ।
  • যে ব্যক্তি  পবিত্র মাহে  রমাদ্বান শরীফ মাসে  অধীনস্তদের উপর থেকে কার্যভার লাঘব করবে , মহান আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেবন ।
  • রোযা ও পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ বান্দার জন্য সুপারিশ করবে । রোযা বলবে:  আয় মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ! আমি তাকে পানাহার ও প্রবৃত্তির বাসনা পূর্ণ করতে বাধা দিয়েছি , সুতরাং  তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন । পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ বলবে: আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বাধা দিয়েছি ,সুতরাং তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন । 

 সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ! 

পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের ফযীলত ও বরকত সম্পর্কে মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামে রব্বানী , কুতুবে রব্বানী , ক্বইয়্যূমুল আউওয়াল , আফদ্বালুল আউলিয়া আল ফারুকী  সিরহিন্দী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি " মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী " তে বলেন :-

  • এ মাসে ( পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে ) কল্যাণ ও বরকতের সমন্বয় ঘটেছে । গোটা বছর মানুষ যত বরকত হাসিল করে , তা এ মাসের তুলনায় এতোটা তুচ্ছ যতোটা তুচ্ছ মহাসমূদ্রের তুলনায় এক ফোঁটা পানি । এ মাসে যে পরিমান অভ্যন্তরীণ শান্তি ও সুস্থতা লাভ করা যায় , গোটা বছরের জন্য তা যথেষ্ঠ। পক্ষান্তরে এ মাসের অশান্তি ও মানসিক অসুস্থতা গোটা বছরের উপর প্রভাব বিস্তার করে । ঐ সব লোকেরা সৌভাগ্যবান , এ মাস যাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলো । পক্ষান্তরে ঐ সব লোকের জন্য ব্যর্থ ও বদনসীব  , এ মাস অসন্তুষ্ট  হলো যাদের প্রতি এবং যারা বঞ্চিত হলো  সর্বপ্রকার কল্যাণ ও বরকত থেকে ।  "

" মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী , পৃষ্ঠা ৪৫ " পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের ফযীলত ও বরকত সম্পর্কে মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামে রব্বানী , কুতুবে রব্বানী , ক্বইয়্যূমুল আউওয়াল , আফদ্বালুল আউলিয়া আল ফারুকী  সিরহিন্দী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, 

  • " এ মাসে যদি কোনো ব্যক্তি নেক আমলের  তৌফিক লাভ করে , তবে গোটা বছর তৌফিক ও সৌভাগ্য তার সঙ্গদান করবে । 
  • আর এ মাস যদি তার মানসিক অধঃপতন আন্তরিকতাহীনতা ভাবে কাটে , তবে গোটা বছর এ ভাবে অতিবাহিত হবার আশঙ্কা আছে । " 

" ইহয়াউল উলুম ১ম খন্ড " তে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের ফযীলত ও বরকত সম্পর্কে মুজাদ্দিদুয যামান, হুজ্জতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন ,

 

  • " রোযার উদ্দেশ্য হচ্ছে ,  মানুষ খোদায়ী স্বভাবের একটি স্বভাব নিজের মধ্যে সৃষ্টি করবে । এ গুণটি হচ্ছে সামাদিয়াত বা মুখাপেক্ষীহীন হওয়া ।  মানুষ সাধ্য অনুযায়ী হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের অনুসরণে আত্নার কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত হবে । কারণ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম  উনারা কামনা-বাসনা থেকে পবিত্র এবং মানুষের মর্যাদা তো পশুর চেয়ে অনেক উর্ধ্বে । তাছাড়া কামনা-বাসনা কে দমন করার জন্য তাকে বুদ্ধি ও  বিবেক দন করা হয়েছে । অবশ্যই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে মানুষের পার্থক্য  এখানে যে , মানুষের উপর কমনা - বাসনা বিজয়ী হয়ে যায় এবং এ থেকে তাকে পবিত্র হবার জন্য তাকে কঠিন মুজাহেদা করতে হয় । যখন তার কামনা - বাসনা তার উপর বিজয়ী হয়ে যায় ,যখন সে  'আসফালা সাফেলীন ' বা সর্বনির্কষ্ট স্তরে পৌঁছে যায় , তখন তার মধ্যে আর পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকেনা ।  আর যখন কামনা - বাসনার উপর সে বিজয়ী হয় তখন সে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদায় ভূষিত হয় এবং সে পৌঁছে যায় হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম  উনাদের ( স্বভাবের ) জগতে । " 

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী , কুতুবে রব্বানী ,গাউসূল আ'যম, মুহিউদ্দীন, মুজাদ্দিদুয যামান হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি " গুনিয়াতুত তালেবীন , অ, ধ্যায় ২২ " তে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের ফযীলত ও বরকত সম্পর্কে বলেন.

 

  • " জেনে রাখ তে পবিত্র রমাদ্বান শরীফই পবিত্রতা অর্জন ও আত্নশুদ্ধির মাস ।  এ মাস মহান খোদার ( আল্লাহ পাক উনার ) অনুগত বান্দাহদের মাস । , সব লোকেদের মাস যারা মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণে অন্তর কে সিক্ত রাখে । ঐ সব লোকদের মাস , সত্য  ও সবর যাদের ভূষণ । এ মাস যদি তোমার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে না পারে , গুনাহ থেকে তোমাকে বিরত রাখতে না পারে , বেদআতপন্থী ও  বদকারদের সংশ্রব থেকে ফিরিয়ে রাখতে না পারে , তবে আর কোন জিনিস তোমাকে এসব থেকে হিফাযত করবে ? এর চেয়ে উত্তম কোনো জিনিস কী আছে , যা তোমার উপর প্রভাব বিস্তার ফেলতে পারবে ? এমতাস্থায় তোমার দ্বারা কোনো নেক কাজের আশা করা যায় না  এবং তোমার পক্ষে কোনো বদ কাজ থেকে  বিরত থাকারও সম্ভবনা দেখা যায় না ।  মুক্তি ও নাজাতের কোনো ঊপায় তোমার নেই । " 
  • " রমাদ্বান শরীফ মাস তোমার দোস্ত ! অশ্রু দিয়ে এই মাস কে বিদায় দাও । অন্তরের সমস্ত খারাবী দূরে নিক্ষেপ করো । বড় বেশি কান্না কাটি করো । এতে সন্দেহ রয়েছে আগামী বছর পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস তোমার ভাগ্যে জুটবে কিনা । অনেক রোযাদার এমন আছে , যারা আর একটি মাহে রমাদ্বান শরীফ মাস পাবে না । " 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন