>

*** শাফিউল উমাম,রউফুর রহীম, রহমাতুল্লীল আলামিন , নুরে মুজাসসাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ'যম , সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ,কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ফযিলত মুবারক*** *** দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লাশ মুবারক দ্বিতীয় বার দাফন মুবারক*** *** সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশুদ্ধ তালিকা*** *** আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে আর্থিকভাবে খিদমত মুবারকে যারা আঞ্জাম দিবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন।***

সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১

ইসলামের দৃষ্টিতে ক্বদম বুছির জায়েজ না নাজায়জ?

ক্বদম বুছির গুরুত্বপূর্ণ  দলিলসমূহ


 কদম শব্দের অর্থ হচ্ছে পা  আর  বুছি শব্দের অর্থ চুম্বন করা ! অর্থাৎ দ্বীনদ্বার পরহেজগার, সম্মানিত ব্যক্তি, পিতা-মাতা ইত্যাদি উনাদের পায়ে চুম্বন দেয়াকে শরীয়তে কদমবুছী বলে। এই কদমবুছী খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদমবুছী করেছেন ।আবার এক ছাহবী অন্য ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কদমবুছী করেছেন । এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীস শরীফ বর্নিত আছে ।
সহীহ হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়-
ﻋﻦ ﻭﺍﺯﻉ ﺑﻦ ﺯﺍﺭﻉ ﺭﺿﻴﺎﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺟﺪﻫﺎ ﻭﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﻭﻓﺪ ﻋﺒﺪ
ﺍﻟﻘﻴﺲ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻗﺬﻣﻨﺎ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻓﺠﻌﻠﻨﺎ ﻧﺘﺒﺎﺩﺭ ﻣﻦ ﺭﻭﺍﺣﻠﻨﺎ ﻓﻨﻘﺒﻞ
ﻳﺪ ﺭﺳﻮﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭ ﺭﺟﻠﻪ
অর্থ মুবারক : হযরত ওয়াজে ইবনে যারে উনার দাদা হতে বর্ননা করেন, আর তিনি ছিলেন আব্দুল কায়েস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন ,
"আমরা যখন মদীনা শরীফে আসতাম, তখন আমরা আমাদের সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ি অবতরন করে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত এবং পা মুবারকে চুম্বন করতাম।"
দলীলসমূহ:
০১.  আবু দাউদ শরীফ-কিতাবুস সালাম-২য় খন্ড-৭০৯পৃষ্ঠা- হাদীস ৫২২৫ !
০২. মিশকাত শরীফ- কিতাবুল আদব- মুছাফাহ ও মুয়ানাকা অধ্যায়- হাদীস নম্বর ৪৬৮৮।
০৩ ফতহুল বারী ১১ খন্ড- ৫৭ পৃষ্ঠা !
০৪. মিরকাত শরীফ ৭ম খন্ড ৮০ পৃষ্ঠা।
০৫. মুছান্নাফে আবী শায়বা ।
০৬.বায়হাকী শরীফ।
০৭.কানযুল উম্মাল শরীফ।
০৮.তাফসীরে তাবারী।
০৯. বজলুল মাজহুদ ৬ ষ্ঠ খন্ড ৩২৮ পৃষ্ঠা।
১০.মায়ালিমুস সুনান।
১১. আইনুল মা'বুদ লি হল্লি মুশকালাতি সুনানী আবু দাউদ।
১২. আশয়াতুল লুময়াত
১৩. এলাউস সুনান ১৭ তম খন্ড ৪২৬ পৃষ্ঠা
কদমবুছী সম্পর্কে হাফিজে হাদীস আল্লামা কাজী আয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হাফিজে হাদীস আল্লামা নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা উনাদের স্বস্ব কিতাবে একখানা বিশুদ্ধ হাদীস শরীফ বর্ননা করেন:-
ﻋﻦ ﺑﺮﻳﺪﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻓﺎﺀﺫﻥ ﻟﻲ ﺍﻗﺒﻞ ﻳﺪﻳﻚ ﻭﺭﺟﻠﻴﻚ -
ﻓﺎﺫﻥ ﻟﻪ ﺍﻱ ﻓﻲ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﻳﺪﻳﻪ ﻭﺭﺟﻠﻴﻪ - ﻓﻘﺒﻠﻬﻤﺎ
অর্থ মুবারক : "হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, তিনি বলেন, (গাছের সিজদা দেয়ার ঘটনার পর) আমি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমাকে আপনার উভয় হাত মুবারক এবং পা মুবারক বুছা বা চুম্বন দেয়ার অনুমতি দিন। তখন উনাকে উভয় হাত মুবারক এবং পা মুবারক চুম্বন দেয়ার অর্থাৎ কদমবুছী করার অনুমতি দেয়া হলে, তিনি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক এবং কদম মুবারক চুম্বন করলেন।"
দলীলসমূহ-
 নাসীমুর রিয়াজ শরহে কাজী আয়াজ ৩য় খন্ড ৫০ পৃষ্ঠা ।
কিতাবুল আযকার লিন নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
ছিয়াহ সিত্তার নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহে আরো একটি হাদীস শরীফ বর্নিত আছে।
হযরত সাফওয়ান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত একটি দীর্ঘ হাদীস শরীফ। একবার দু'জন লোক হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ মুবারককরার জন্য আসলো। তারা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে কিছু জানতে চাইলো, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সব বিষয় সমূহের জবাব দান করলেন।
জবাব পাওয়ার পরের বিষয় সম্পর্কে হযরত সাফওয়ান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন--
ﻗﺎﻝ ﻓﻘﺒﻼ ﻳﺪﻳﻪ ﻭ ﺭﺟﻠﻴﻪ ﻭ ﻗﺎﻻ ﻧﺸﻬﺪ ﺍﻧﻚ ﻧﺒﻲ
অর্থ মুবারক: হযরত সাফওয়ান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অতঃপর তারা উভয়ে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক এবং কদম মুবারক চুম্বন করলো এবং বললো, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহ পাক উনার নবী।"
দলীল-
০১. মিশকাত শরীফ -কিতাবুল ঈমান- বাবুল কাবায়ের ওয়া আলামাতুন নিফাক- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ- ৫১ নং হাদীস শরীফ।
০২. তিরমীযি শরীফ ।
০৩ .আবু দাউদ শরীফ।
০৪. সুনানু নাসায়ী শরীফ।
০৫. তুহফাতুল আহওয়াযী।
০৬. সুনানুন নাসায়ী বি শরহিস জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
এছাড়া এক ছাহাবী অন্য ছাহবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কদমবুছী করেছেন তার দলীল--
ﻋﻦ ﺯﻳﺪﺑﻦ ﺛﺒﺖ ﺍﻧﻪ ﻗﺒﻞ ﻳﺪ ﺍﻧﺲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭﺍﺧﺮﺝ ﺍﻳﻀﺎ
ﺍﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﻗﺒﻞ ﻳﺪ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻭ ﺭﺟﻠﻪ
অর্থ মুবারক : "হযরত যায়েদ বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,তিনি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার হাত মুবারকে চুম্বন করেছেন। তিনি এটাও বর্ননা করেছেন যে , আমীরুল মু'মিনীন, খলিফাতুল মুসলিম, আসাদুল্লাহিল গালিব, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সলাম উনার হাত মুবারক এবং পা মুবারকে চুম্বন করেছেন !"
দলীলসমূহ-
০১. ফতহুল বারী- ১১খন্ড-৫৭পৃষ্ঠা !
০২. তোহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমীযি শরীফ ৭ম খন্ড ৫২৮ পৃষ্ঠা।
০৩.ফিকহুস সুন্নাহ ওয়াল আসার।
উল্লিখিত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত হলো কদমবুছী করা খাছ সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার অন্তর্ভুক্ত। আর সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম অনুসরন সম্পর্কে সহীহ হাদীস শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে -
ﻋﻦ ﺍﻟﻌﺮﺑﺎﺽ ﺑﻦ ﺳﺎﺭﻳﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻲ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺑﺴﻨﺘﻲ ﻭ ﺳﻨﺔ ﺍﻟﺨﻠﻔﺎﺀ ﺍﻟﺮﺍﺷﺪﻳﻦ
ﺍﻟﻤﻬﺪﻳﻦ ﺗﻤﺴﻜﻮﺍ ﺑﻬﺎ ﻭ ﻋﻀﻮﺍ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺑﺎﻟﻨﻮﺍﺟﺬ
অর্থ মুবারক : হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের জন্য আমার সুন্নত এবং আমার খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত অবশ্যই পালনীয় ! তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো !""
দলীলসমূহ--
০১. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস শরীফ নং ৪২
০২. তিরমিযী শরীফ, হাদীস শরীফ নং ২৬৭৬
০৩. আবু দাউদ শরীফ, হাদীস শরীফ নং ৪৬০৭
০৪. মুসনাদে আহমাদ শরীফ ৪/১২৬
নিজের মায়ের কদমবুছী সম্পর্কে হাদীস শরীফে আরো এসেছে--
ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﺭﺟﻞ ﺍﻣﻪ ﻓﻜﺎﻧﻤﺎ ﻗﺒﻞ ﻋﺘﺒﺔ ﺍﻟﺠﻨﺔ
অর্থ মুবারক : যে ব্যক্তি তার মায়ের পায়ে চুম্বন দিলো , সে যেন জান্নাতের চৌকাঠে চুম্বন দিলো !"(মাবসূত লিল সারাখসী ১ম খন্ড ১৪৯ পৃষ্ঠা।)
উক্ত দলীল আদিল্লা থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল কদমবুছী করা খাস সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত |
সুবহানাল্লাহ্ !
শুধু তাই নয়, বিখ্যাত ইমাম মুস্তাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের জীবনীতেও কদমবুছীর ঘটনা পাওয়া যায়।
যেটা কিতাবে বর্নিত হয়েছে-
১ নং হাদীস শরীফ:
ﺍﻣﺎﻡ ﻣﺴﻠﻢ ﺑﻦ ﺣﺠﺎﺝ ﻛﺎ ﻭﺍﻗﻐﻪ ﺟﻮ ﺍﻣﺎﻡ ﺑﺨﺎﺭﻱ ﮐﮯ ﺳﺎﺗﮫ ﭘﻴﺶ
ﺍﻳﺎﻛﻪ ﺍﻣﺎﻡ ﻣﺴﻠﻢ ﻧﮯ ﺍﻣﺎﻡ ﺑﺨﺎﺭﻱ ﻛﯽ ﭘﻴﺸﺎﻧﯽ ﻛﻮ ﺑ১নং হাদীসঃ
عن زارع وكان فى وفد عبد القيس قال لما قدمنا المدينة وجعلنانتبادر من رواحلنا فنقبل يد رسول الله صلى الله عليه وسلم ورجله
অর্থ মুবারক :হযরত যারেঈ রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু যিনি আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা যখন মদিনা শরীফে আগমন করলাম তখন আমাদের বাহন হতে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লাম এবং নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক ও পা মুবারক  চুম্বন করলাম।( আবূ দাউদ শরীফের সূত্রে মিশকাতুল মাসাবীহ, পৃষ্ঠা: ৪০২
)
২ নং হাদীস শরীফ:  عن صفوان بن عسال ان قوما من اليهود قبلوا يد النبى صلى الله عليه وسلم ورجله
অর্থ মুবারক:  হযরত ছাফওয়ান বিন আসলাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই ইয়াহুদীদের একটি গোত্র হুজুর এ পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র হাত ও পা মোবারক চুম্বন করে।
(ইবনে মাজাহ পৃ: ২৯২।)
৩ নং হাদীস শরীফ:
হযরত বুরাইদা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-
سأل أعربى النبى صلى الله عليه وسلم أية فقال له قل لتلك الشجرة رسول الله صلى الله عليه وسلم يدعوك فقال فمالت الشجرة عن يمينها وشمالها وبين يديها وخلفها فقطعت عروقها ثم جاءت يتخذ الارض تجر عروقها مغبرة حتى وقعت بين يدى رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم قال له السلام عليك يا رسول الله قال الاعرابى مرها فلترجع الى منبتها فرجعت فدلت عروقها فاستوت فقال الاعربى ائذن لى اسجد لك قال لو أمرت احدا ان يسجد لاحد لامرت المرأة ان تسجد لزوجها قال فأذن لى ان اقبل يديك ورجليك فاذن له
অর্থ মুবারক:, একজন বেদুঈন হুজুর এ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে মুজিযা দেখতে চাইল, হুজুর এ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেদুঈনকেইরশাদ মুবারক করলেন ওই বৃক্ষটাকে বলো মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে ডাকছেন, সে যখন বললো বৃক্ষ তার ডানে-বামে, সম্মুখে পেছনে ঝুকল তখন ওটার শিকড়গুলো ভেঙ্গে গেল। তারপর তা মাটি খোদাই করে শিকড়গুলো টেনে বালি উড়িয়ে হুজুর এ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে এসে দাঁড়াল এবং বলল আস্সালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! বেদুঈন বললো “আপনি তাকে আদেশ করুন যেন এটা ওখানে (উৎপত্তিস্থল) ফিরে যায়” উনার নির্দেশে ওটা ফিরে গেল এবং তার শেকড়গুলোর উপর গিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো। বেদুঈন বললো “আমাকে অনুমতি দিন আমি আপনাকে সিজদা করবো” তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “যদি কাউকে সিজদাহ করার হুকুম দিতাম তাহলে স্ত্রীকে আদেশ দিতাম সে যেন তার স্বামীকে সিজদাহ করে।” বেদুঈন লোকটি আরজ করলো “হুযুর তাহলে আমাকে আপনার হস্ত ও পদদ্বয় মোবারক চুম্বন করার অনুমতি দিন” তিনি (নবীজী দঃ) তাকে অনুমতি প্রদান করলেন।
(শিফা শরীফ, দালাইলুন্নুবয়্যাহ আবু না’ঈম, পৃষ্ঠা- ৩৩২।)
৪ নং হাদীস শরীফ
روى عن النبى صلى الله عليه وسلم كان يقبل فاطمة ويقول اجد منها ريح الجنة وقبل ابو بكر رأس عائشة وقال النبى صلى الله عليه وسلم من قبل رجل امه فكان قبل عنبة الجنة
অর্থ মুবারক: হুযূর নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম (নবীজীর স্নেহের কন্যা)উনাকে চুমু মুবারক খেতেন আর তিনি বলতেন আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে বেহেশতের সুঘ্রান পাচ্ছি। আমীরুল মু'মিনীন , খলীফাতুল মুসলিমীন, আফদ্বালুন নাস বা'দ্বাল   আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম সাইয়্যিদাতুনা  হযরত আয়েশা আলাইহাস সালাম উনার মাথা মুবারক এ চুমু খেয়েছেন। আর প্রিয় নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবাক করেন- যে ব্যক্তি তার মায়ের পা চুম্বন করবে সে যেন বেহেশতের চৌকট চুমু খেল।
( মাবসুত লিস সারাখছি, খন্ড-১০, পৃষ্ঠা: ১৪৯)
৫ নং হাদীস শরীফ
عن ذكوان عن صهيب قال رايت عليا يقبل يد العباس ورجله
অর্থ মুবারক:  হযরত যাকওয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু হযরত ছুহাইব সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার (স্বীয় চাচা) সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার  হাত মুবারক ও পা মুবারক চুম্বন করতে দেখেছি।
(মিশকাত শরীফ)
ফোক্বাহায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসীনে এজামদের থেকে
হযরত আল্লামা ইমাম আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
قال الامام العينى بعد كلام فعلم اباحة تقبيل اليد والرجل والرأس كما علم من احاديث المتقدمة اباحتها على الجبهة وعلى العينين وعلى الشفتين على وجه المبرة والكرام
  হযরত আল্লামা আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন দীর্ঘ আলোচনার পরে হাত চুম্বন, কদমবুচি, মাথা বুচি, ও ইত্যাদির বৈধতা প্রমানিত হলো। যেভাবে বর্ণিত হাদীস হতে কপালে, দুই চোখের মাঝে, দু’ঠোটের উপরে চুমু দেয়ার বৈধতা প্রমাণিত হল, তবে এ সকল ক্ষেত্রে চুম্বন তখন জায়েয যখন সম্মান ও বরকত হাসিল উদ্দেশ্য হয়।
(রদ্দুল মোখতার, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা- ৩৮০।)
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
لا يكره التقبيل لزهد وعلم وكبرسن -قال النبوى رحمةالله تعالى عليه تقبيل اليد للغير ان كان لعلمه وصيانته وزهده وديانته ونحو ذالك من الامر الدينيه لم يكره بل يستحب
অর্থাৎ, তিনি বলেন, চুমু দেয়া মাকরুহ হবেনা যখন তা কোন পরহেজগারিতা, ইলম বা জ্ঞান ও বয়োযষ্ঠের কারনে হবে। ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাত চুম্বন, যদি ব্যক্তির জ্ঞানগত মার্যাদা, খোদা ভীরুতা ও ধামির্কতা ইত্যাদি কারনে হয় তাহলে মাকরুহ তো হবে না; বরং মুস্তাহাব বা উত্তম আমল হিসেবে বিবেচিত হবে।
(মিরকাত, খন্ড ৯ম, পৃঃ ৭৬)।
বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’ এর মধ্যে হযরত আল্লামা ইবনে হাজর আল আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
والحديث يدل على جواز تقبيل اليد والرجل -وقال الابهرى انما كرهها مالك اذا كانت على التعظيم والتكبر واما اذا كانت على وجه التقرب الى الله تعالى لدينه اولعلمه او لشرافته فان ذالك جائز-
অর্থাৎ, (তিনি বলেন) হাদীস শরীফ দ্বারা হাতবুচি ও কদমবুচির বৈধতা ও অনুমোদন প্রমাণিত। তবে ইমাম মালেক ও ইমাম আবহারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা এগুলিকে মাকরুহ বলেছেন যদি বড়ত্ব আহমিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য হয়। কিন্তু যদি মহান আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্যবান বান্দা বা জ্ঞানগত
সম্মান ও মর্যাদার কারনে হয় তাহলে উহা নি:সন্দেহে জায়েয।
( ফতহুল বারী শরহে বুখারী, খন্ড- ১কদমবুছী করা বা নেওয়া পবিত্র সুন্নতে হযরত ছাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু)
খালিক, মালিক রব আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন ইরশাদ মুবারক করেন,
فليحذر الذين يخالفون عن امره ان تصيبهم فتنة اويصيبهم عذاب اليم.
অর্থঃ- “সুতরাং যারা উনার (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার) আদেশের বিরোধীতা করে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর এসে পড়বে কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা নূর/৬৩)
সুন্নতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
 
عن وازع بن زترع عن جدهاوكان فى وقد عبد القيس قال لماقد مناالمد ينة فجعلنا نتبادر من وراحلنا فنقبل يد رسول الله صلى الله عليه وسلم ورجله.(ستن ابودود ج2 صفه7،
অর্থঃ- হযরত ওয়াযে ইবনে যারে উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন মুবারক করেন। তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়স গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন মদীনা শরীফ আসতাম, তখন আমরা সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ী অবতরন করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক ও পা মুবারক বুছা (চুম্বন) দিতাম। (আবু দাউদ শরীফ জিঃ ২ পৃষ্ঠা ৭০৯

সুতরাং উপরোক্ত,  পবিত্র আবু দাউদ শরীফ উনার কিতাব দলীল দ্বারাই এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, কদমবুছী, দস্তবুছী স্থান, কাল, পাত্র বিশেষে শুধু জায়েযই নয়, পবিত্র সুন্নতে ছাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু । কুফরী,শিরক  বলা জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন